রাজধানীতে পুলিশের অবহেলায় ৯ বছরের শিশুর মৃত্যু
একুশে জার্নাল
মে ১৩ ২০১৮, ০৭:৩০
রাজধানীর দয়াগঞ্জে পুলিশ কর্মকর্তার জিপের ধাক্কায় নয় বছরের শিশু নিহত হওয়ার ঘটনায় পুলিশের এক সদস্যের দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে কমিটি। তবে ঘটনাস্থলে পুলিশের তিনজন সদস্য উপস্থিতি ছিলেন। বাকি দুজনের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি কমিটি। তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি দয়াগঞ্জে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) গোলাম আজাদ খানের ব্যবহৃত একটি সাদা ল্যান্ড ক্রুজার গাড়ির (ঢাকা মেট্রো-ঘ-১১-০৩৫৮) ধাক্কায় গুরুতর আহত হয় মো. রাজ নামের নয় বছরের এক স্কুলছাত্র। এ সময় ঘটনাস্থলে যাত্রাবাড়ী থানার উপপরিদর্শক রেদোয়ান খান পুলিশের একটি পিকআপসহ উপস্থিত ছিলেন। তিনি ল্যান্ড ক্রুজার গাড়িটিকে সেখান থেকে চলে যেতে সাহায্য করেন। আহত শিশুটি তখন রাস্তায় ছটফট করছিল। স্বজনেরা স্থানীয় দুটি হাসপাতালে নিলেও কেউই চিকিৎসা দিতে রাজি হয়নি। অবশেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁরা যখন পৌঁছান, ততক্ষণে সব শেষ।
ঘটনার দিন প্রথম আলোর পক্ষ থেকে যাত্রাবাড়ী থানায় যোগাযোগ করা হলে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিসুর রহমান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। পুলিশের ডেমরা অঞ্চলের সহকারী কমিশনার ইফতেখায়রুল ইসলাম গাড়িটি পুলিশের ছিল না বলে দাবি করেন। তিনি এ-ও জানান, পরিবার মামলা না করায় তাঁরা ঘটনাটি তদন্তও করবেন না।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পুলিশের দায়িত্ব ও কর্তব্য যেখানে দুর্ঘটনাকবলিত মানুষকে উদ্ধার করা এবং দুর্ঘটনার তদন্ত করা, সেই পুলিশই দুর্ঘটনার পর শিশুটিকে উদ্ধার না করে পালালে তাদের দায়িত্বশীলতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। দুর্ঘটনার পরপরই তারা শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে হয়তো সে প্রাণে বেঁচে যেত। এ নিয়ে ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোতে ‘উদ্ধার না করে পালাল পুলিশ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। অবশ্য এর আগেই পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে ঘটনাটির তদন্তভার পান ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মোহাম্মদ শরিফুল ইসলাম।
জানতে চাইলে শরিফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার তদন্ত শেষে গত মাসের (এপ্রিল) শেষের দিকে তিনি ঢাকা জেলার পুলিশ সুপারের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। তদন্তে তাঁরা এক পুলিশ সদস্যের দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পেয়েছেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছেন।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ঘটনার সময় গাড়িতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) গোলাম আজাদ খানের থাকার কোনো তথ্য তাঁরা পাননি। তাঁর গাড়ির চালক পুলিশের কনস্টেবল ব্রজেন কুমার এবং দেহরক্ষী কনস্টেবল সুমন ভূঁইয়া ছিলেন গাড়িতে। গাড়ি নিয়ে তাঁরা গোলাম আজাদ খানের বাসার দিকে যাচ্ছিলেন বলে তদন্ত কমিটিকে জানিয়েছেন।
ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার শাহ মিজান শাফিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবেদনটি তিনি পেয়েছেন। গাড়ি চালানোর সময় চালকের অবহেলা ছিল। এ ছাড়া দুর্ঘটনার পর শিশুটিকে উদ্ধার না করে চলে আসেন তাঁরা। এখানেও দায়িত্বে অবহেলা আছে।
পুলিশের তিন সদস্যের উপস্থিতিতে এ ঘটনা ঘটে। ব্যবস্থা কেন একজনের বিরুদ্ধে? এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, দুর্ঘটনাটি চালকের কারণে হয়েছে। তাই তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। দেহরক্ষীর এখানে কিছু করার ছিল না। আর যাত্রাবাড়ীর উপপরিদর্শক ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের আওতায় থাকায় তিনি তাঁদের তদন্তের আওতায় পড়েন না।
শাহ মিজান শাফিউর রহমান বলেন, গাড়ির চালককে এরই মধ্যে ঢাকা জেলা থেকে বদলি করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা চলমান।