যেভাবে অনাস্থা ভোটের মুখে পড়েন ইমরান খান

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

এপ্রিল ১০ ২০২২, ১০:১৫

অনাস্থা ভোটে প্রধানমন্ত্রিত্ব হারিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।পার্লামেন্টের ৩৪২ আসনের মধ্যে অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট পড়েছে ১৭৪টি। ইমরান খানকে পরাজিত করতে বিরোধীদের প্রয়োজন ছিল ১৭২ ভোটের। পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথম কোন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হলেন তিনি। ইতিমধ্যে ইমরান খান ইসলামাবাদ ত্যাগ করেছেন।

২০১৮ সালের জুলাইয়ে নির্বাচনের মাধ্যমে পাকিস্তানের ২২তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় বসেন ইমরান খান। বিভিন্ন মহলের দাবি, দেশটির সেনাবাহিনীর ভূমিকা তার বিজয়ের পথ তৈরি করে দেয়।পাকিস্তানকে ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট জয়ে নেতৃত্ব দেয়া ইমরান খান দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই আর অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে।

কিন্তু অর্থনৈতিক সংকটের কারণেই ধীরে ধীরে বিপাকে পড়তে শুরু করে তার সরকার। এক পর্যায়ে গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের প্রধান নিয়োগ নিয়ে সেনাবাহিনীর সঙ্গেও দ্বন্দ্বে জড়ান তিনি।

এদিকে রাশিয়া যখন ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করলে এর মধ্যে ইমরান খান মস্কো সফর করেন।যা পশ্চিমা বিশ্ব বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ভালো ভাবে নেয়নি।

এর মধ্যেই তার ক্ষমতাসীন জোটের বড় অংশ এমকিউএম তাকে ছেড়ে বিরোধী জোটে যোগ দিলে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থন হারায় তার সরকার।

এ-ঘটনার কয়েকদিন আগে থেকেই ইমরান খান বিরোধী দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছিলেন, এরা ‘বিদেশি রাষ্ট্রের’ সঙ্গে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তিনি আরও অভিযোগ করেছিলেন, এই ষড়যন্ত্রের পেছনে আছে যুক্তরাষ্ট্র, কারণ তিনি রাশিয়া এবং এবং চীনের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। এজন্যেই তাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র চলছে বলে তিনি দাবি করেন। তবে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে এসব অভিযোগের কোন ভিত্তি নেই।

বিরোধী দলীয় নেতারা রাতারাতি এই অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করেননি। ইমরান খানের বিরুদ্ধে প্রস্তাবটি দেওয়ার পরিকল্পনার লেগে গেছে কয়েক মাস। এই ঘটনার বীজ বপন করা হয়েছিল আরও অনেক আগে। ২০২১ সালের শেষ নাগাদ প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করার জন্য পিএমএল-এন সুপ্রিমো নওয়াজ শরিফকে সমর্থন করা শুরু করে।

তবে চূড়ান্তভাবে ২০২২ সালের ২৮ মার্চ জাতীয় পরিষদের বিরোধী দলের নেতা শাহবাজ শরীফ প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করেন। কিন্তু ডেপুটি স্পিকার কাসেম সুরি রুল জারি করেন যে, এই অনাস্থা প্রস্তাব পাকিস্তানের সংবিধানের পঞ্চম অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করেছে, যেটিতে রাষ্ট্র এবং সংবিধানের প্রতি আনুগত্যের কথা আছে।

এরপর ইমরান খান পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়ার কথা ঘোষণা করেন। এর ফলে ৯০ দিনের মধ্যে পাকিস্তানের পরবর্তী নির্বাচন হওয়ার কথা।

কিন্তু এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান বিরোধী নেতারা। তারা প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সংবিধানের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ আনেন। এরপরই তারা সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করতে যান এই বলে যে, অনাস্থা ভোট আটকে দিয়ে সরকার তার সাংবিধানিক ক্ষমতার সীমা অতিক্রম করেছে।

এর বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ বিরোধী দলগুলো সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় এবং তাদের আবেদনে বলা হয় যেভাবে অনাস্থা প্রস্তাবটি ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে আটকে দেয়া হয় তা ছিল বেআইনি ও অসাংবিধানিক। একই সঙ্গে স্পিকার আসাদ কায়সারকে শনিবার জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ডাকার ঘোষণা দেন। সেই অধিবেশনেই ইমরান খানের অনাস্থা প্রস্তাবের ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হবে।