যুন-নুরাইন হযরত উসমান ইবনে আফফান রা.

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

মার্চ ০৬ ২০১৯, ১৭:০৪

হাবীব আনওয়ার:: ১.হযরত উসমান ইবনে আফফান রা.। জাহিলি ও ইসলামি উভয় যুগেই তার নাম ছিল উসমান। উপনাম ছিল আবু উমর এবং আবু আব্দুল্লাহ। তাঁর বংশধারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে আবদে মানাফ পর্যন্ত গিয়ে মিলিত হয়েছে।

উসমান রা. এর জন্ম সন ও তারিখ নিয়ে বেশ মতপার্থক্য রয়েছে। অধিকাংশের মতে তার জন্ম ৫৭৬ খ্রিষ্টাব্দে অর্থাৎ হস্তীসনের ছয় বছর পর। এ হিসেবে তিনি হযরত মুহাম্মদ সা. থেকে ছয় বছরের ছোট। অধিকাংশ বর্ণনামতেই তাঁর জন্ম সৌদি আরবের মক্কা নগরীতে।অনেকে তায়েফ নগরীতে বলেছেন।

হযরত উসমান রা. কে বলা হয় যুন নুরাইন (দুই নূরের মালিক) অনেকে এর ব্যাখ্যা হিসেবে বলেন, তিনি হুজুর ছা. এর দুই কন্যা ছাড়া অন্য কোন নারীকে বিবাহ করেন নি।আবার কেউ বলেন, তিনি জান্নাতে প্রবেশকালে দু’বার নূরের আলোকচ্ছটা প্রকাশিত হবে বলে তাকে যুন- নুরাইন বলা হয়।

২. হযরত উসমান রা.ছিলেন, দয়ালু ও মহানুভাব একজন সাহাবী। তাকে খলিফা নির্বাচিত করা হলে তার নম্রতা ও বিনয় আরো বৃদ্ধি পায়।তিনি নিজ সম্পদ থেকে জনগণের খাদ্যের ব্যবস্থা করতেন। কিন্তু নিজে সিরকা ও যায়তুনের তেল ব্যবহার করতেন।
হযরত হুজাইফা ইবনে ইয়ামান রা. বলেন, হুজুর ছা. একবার তাকে প্রেরণ করেছিলেন যুদ্ধফাণ্ড তৈরী করতে।তিনি হুজুর ছা. এর হস্ত মুবারকে দশ হাজার স্বর্ণমুদ্রা তুলে দেন।তখন হুজুর ছা. হযরত উসমান রা.এর হাতে চুমু দিয়ে বলেন, হে উসমান! কিয়ামত পর্যন্ত ইচ্ছায় অনিচ্ছায় যা কিছু কর, আল্লাহ তোমায় ক্ষমা করুন!

৩. মদীনা শরীফে দুর্ভিক্ষ দেখা দিল।সবাই কষ্টে দিনযাপন করতে লাগলো।শিশুরা ক্ষুধার জ্বালায় ছটফট করছে।তখন মদীনার ব্যবসায়ী ছিলেন হযরত উসমান ইবনে আফফান রা.! সিরিয়ার সঙ্গে তার ব্যবসাবানিজ্য।এই দুর্ভিক্ষের সময় একশো উট খাদ্যদ্রব্য আনতে সিরিয়ায় পাঠান। যখন খাদ্যবোঝাই উট মদীনায় পৌঁছল,মদীনার সব ব্যবসায়ী হযরত উসমান রা.এর উঠানে হাজির। সোজা প্রস্তাব ; আপনি যত দেরহাম দিয়ে খাদ্য এনেছেন আমরা ঠিক সেই পরিমাণ লাভ দিব।খাদ্যগুলে আমাদের দিয়ে দিন।

: দাম এরচে বেশি আগেই হয়েছে! বললেন হযরত উসমান রা.!
: তাহলে দ্বিগুণ লাভ দিই! ব্যবসায়ীরা বললো!
: না আরো বেশি হয়েছে…
: তিনগুণ দিই
: না…
: চারগুণ, পাঁচগুণ…
: আরো বেশি হয়েছে হযরত উসমান রা. এর জবাব!
ব্যবসায়ীরা তো অবাক।তারা বলল, এই মদীনায় আমারা ছাড়া তো আর কোন ব্যবসায়ী নেই! কে আমাদের চেয়ে বেশি দাম হাকিয়েছেন?
এবার হযরত উসমান যুন-নুরাইন রা. মুখ খুললেন, তিনি বললেন। আমার আল্লাহ আমাকে দশগুণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন! তোমরা কি এরচে বেশি দিতে পারবে?
ব্যবসায়ীদের জবাব, না কখনো সম্ভব নয়!

: এবার হযরত উসমান ইবনে আফফান রা. এমন ঘোষণা দিলেন, যা পৃথিবীর ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা হয়ে গেল।প্রজন্মের পর প্রজন্ম যা বলতে ও শুনতে গর্ববোধ করবে। যুগের পর যুগ যা থেকে শিক্ষা নিবে। তিনি বললেন, তোমরা সাক্ষী থেকো; এই সকল খাদ্য আমি মদীনার গরীবদের দান করে দিলাম! তারপর পুরো একশ উট খাবার মদীনার অভাবী দরিদ্রদের মাঝে ভাগ করে দেন! ( সোনার হরফে লেখা পৃষ্ঠা ২৬-২৭)

এমন শত শত ঘটনা ইতিহাস গেঁথে রেখেছে পরম যত্নে।আর শতাব্দীর পর শতাব্দী তা থেকে শিক্ষা নিচ্ছে নিজের জীবন সাঁজাতে।এমনি বদান্যতা ছিলেন হযরত উসমান ইবনে আফফান রা.! তিনি ছিলেন, নবী পরশে ধন্য।নবী ছা. কলিজার টুকরা দু’টি কন্যাকে তুলে দিয়েছেন, উসমান রা. হাতে।

৪.ইবনে কুতাইবা রা. বলেন, হযরত উসমান রা. এর খিলাফতকালে মিশর, ইরান, আফ্রিকা, তিবরিস, রোম উপকূল, শেষ উস্তাখার, প্রথম পারস্য, তিবরিস্তান, কিরমান, সিজিস্তান, আল আসাবিয়াহ, জর্দানের উপকূলীয় এলাকা, মারভ ইত্যাদি এলাকা বিজয় হয়।

হযরত উসমান ইবনে আফফান রা. সম্পর্কে আল্লাহর নবী বলেন, যাকে দেখে ফেরেশতাগণ লজ্জা পায়, আমি তাকে দেখে কেন লজ্জা পাব না? তিনি জীবিত থাকা অবস্থায় জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছেন।তার শাহাদতের ব্যাপারে আল্লাহর রাসূল ছা. ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন।

৬৫৬ খ্রিস্টাব্দে হযরত উসমান রা. ৮৮ বছর বয়সে তিনি শাহাদত বরণ করেন। তার খিলাফাত কাল ছিল, ১১ বছর ১১ মাস ৪ দিন।রাযিআল্লাহ আনহু।

লেখক: শিক্ষার্থী, মেখল হামিয়ুচ্ছুন্নাহ মাদরাসা হাটহাজারী,চট্টগ্রাম।