যিনি একজন কমিশনার হয়েও চা বিক্রি করেন

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

জানুয়ারি ৩১ ২০১৯, ০৮:০৪

শিরোনাম দেখে অবাক হওয়ারই কথা। হ্যা তিনি একজন ওয়ার্ড কমিশনার আবার পেশায় চায়ের দোকানদার। এটি গল্প কিংবা বিজ্ঞাপন চিত্র নয়, সত্যিই সত্যিই চা বিক্রি করে সংসার চালান টাঙ্গাইলের মির্জাপুর পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের কমিশনার আব্দুর রাজ্জাক (৪২)। তাও আবার মির্জাপুর উপজেলা পরিষদ চত্বরের অস্থায়ি জায়গায়। উপজেলার পৌর সদরের বাইমহাটী গ্রামের মো. নাজিম উদ্দিনের ছেলে আব্দুর রাজ্জাক স্কুল জীবন থেকেই বসতেন বাবার চায়ের দোকানে। তার বাবার হাতের চায়ের বেশ কদর ছিল এলাকায়। সেই সূত্রে বেশ ভাল লোক সমাগম থাকতো দোকানে। মিষ্টি ভাষী সৎ ও পরোপকারী রাজ্জাক তখন থেকেই এলাকাবাসীর কাছে অত্যন্ত কাছের ও পছন্দের মানুষ।

২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর মির্জাপুর পৌরসভার নির্বাচনে এলাকাবাসী এসএসসি পাস করা এই রাজ্জাককে কমিশনার হিসেবে দেখতে চায়। নিজের আপত্তি থাকলেও সবার আবদারে নির্বাচনেও দাড়ান রাজ্জাক। জনগনের ইচ্ছায় নির্বাচনে দাড়ানো রাজ্জাক নির্বাচনে জয়ী হন বিপুল ভোটে। কিন্তু কমিশনার হওয়ার পরও জীবন ব্যবস্থা ও জীবিকা পাল্টাননি রাজ্জাক। যা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিরল।

সরেজমিন মির্জাপুর পৌরসভার সামনে উপজেলা চত্বরে অবস্থিত এই কমিশনারের চায়ের দোকানে গেলে দেখা যায়, নিজ হাতে তিনি চা বানিয়ে বিক্রি করছেন। দোকানে নেই কোন কর্মচারীও। চা বিক্রির সময় বিভিন্ন জন আসছেন তার কাছে পৌর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কাজে। আর এসব কাজের জন্য দোকানেই রেখে দিয়েছেন নিজের সিল ও প্যাড। তাই খুব সহজেই যে কেউ তার কাঙ্খিত সেবা পেয়ে যান।

নজরুল, আমিরুল, আব্দুর রহমান, অপর্ণা ও স্কুল শিক্ষক আব্দুল বারেক মিয়াসহ এলাকার বেশ কয়েকজনের সাথে কথা হলে তারা বলেন, এলাকায় কেউ মারা গেলে বাঁশ কাটা থেকে কবর খুড়া আর বিয়ে অনুষ্ঠানের রান্না থেকে শুরু করে পুরো ব্যবস্থাপনা নিজ আগ্রহে ও দায়িত্বে পালন করে থাকেন রাজ্জাক কমিশনার। তাকে দিনরাত যে কোন সময় চাইলেই আমরা কাছে পাই। তিনি অনেক দক্ষ ও ন্যায় বিচার করে থাকেন সব সময়। আমরা এমন সাদা মনের একজন কমিশনার পেয়ে সত্যিই অনেক ধন্য।
আলাপচারিতায় রাজ্জাক বলেন, আমি একজন সাধারন মানুষ। এলাকার মানুষ আমাকে কমিশনার বানিয়েছে। তাই এলাকার মানুষ আগে আমাকে যেভাবে পেত এখনো যেন সেভাবেই পায় তাই আর পেশা বদলাচ্ছিনা। চায়ের দোকান করে যে আয় হয় তা দিয়ে ভালভাবেই সংসার চলে আমার। মানুষের ভালবাসা আমাকে কমিশনার বানিয়েছে। মানুষের ভালবাসা নিয়ে তাদের মাঝেই থাকতে চাই। আর তাছাড়া চায়ের দোকানদার হওয়াতো দোষের কিছুনা। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে গেলে এই দেশও একদিন বদলে যাবে।