যা আছে ঐক্যফ্রন্টের ১৪ প্রতিশ্রুতিতে
একুশে জার্নাল
ডিসেম্বর ১৭ ২০১৮, ১০:৩০
চলতি বছরের ১৩ অক্টোবর বিএনপিসহ কয়েকটি দল নিয়ে গঠিত হয় ঐক্যফ্রন্ট। দুই দফা তারিখ পেছানোর পর অবশেষে রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহার ঘোষণা চলছে। ইশতেহারে দেয়া হয়েছে ১৪টি প্রতিশ্রুতি।
সোমবার বেলা ১১টা ২৬ মিনিটে রাজধানীর পূর্বাণী হোটেলে ইশতেহার পাঠ শুরু করেন নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না।
ইশতেহারের বলা হয়, নির্বাচনে জিতে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পেলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট রাষ্ট্রের সকল নাগরিক কল্যাণে সরকার পরিচালনা করবে। এই পরিচালনার মূলনীতি হবে ঐকমত্য, সকলের অন্তর্ভুক্তি এবং যেকোনো রকম প্রতিহিংসা থেকে মুক্ত থাকা।
১. প্রতিহিংসা বা জিঘাংসা নয়, জাতীয় ঐক্যই লক্ষ্য
বিগত ১০ বছরে কল্পনাতীত স্বেচ্ছাচারিতা এবং পুলিশকে দলীয় ক্যাডার হিসেবে ব্যবহার করে হাজার হাজার মিথ্যা মামলায় ঘুষ বাণিজ্য ও বিচারবহির্ভূত হত্যায় লাখ পরিবার ক্ষুব্ধ এবং বিপর্যস্ত। এই সমস্যা সমাধান করে সামাজিক শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সমাজকর্মী, আইনজীবী সমন্বিত সর্বদলীয় সন্ধান ও বিভেদ নিরসন কমিশন গঠন করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের অতীতের হয়রানি মামলা করার লক্ষ্যে খোলা মনে আলোচনা করে ক্ষমা ও ক্ষতিপূরণের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা হবে।
সকল জাতীয় বীরদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অন্তর্ভুক্ত করে স্কুল কলেজে পড়ানো হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করা হবে। একদলীয় শাসন যেন পুনর্জন্ম না ঘটে তা নিশ্চিত করা হবে।
২. নাগরিকদের জীবনের নিরাপত্তা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং গুম পুরোপুরি বন্ধ করা হবে। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাতিল করা হবে। রিমান্ডের নামে পুলিশি হেফাজতে যে কোনো প্রকার শারীরিক নির্যাতন বন্ধ করা হবে। সাদা পোশাকে কাউকে গ্রেফতার করা হবে না।
মিথ্যা মামলার অভিযুক্তদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে এবং মিথ্যা মামলার সহায়তাকারী পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কর্মক্ষেত্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াতের ক্ষেত্রে সকল নারীর উপর বাচিক কিংবা শারীরিক যৌন হয়রানির ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স দেখানো হবে। যৌতুক পুরোপুরি বন্ধ করা হবে।
মামলাজট কমানোর নানা পদক্ষেপের সঙ্গে উচ্চ আদালতের বাৎসরিক ছুটি ছয় সপ্তাহে সীমিত করা হবে।
সংখ্যালঘু এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানবিক মর্যাদা অধিকার নিরাপত্তা এবং সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে। তাদের ওপর যেকোনো রকম হামলার বিচার হবে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম চলমান থাকবে।
৩. ক্ষমতার ভারসাম্য
নির্বাচনকালীন সরকারের বিধান তৈরি করা, নির্বাচন কমিশনকে পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা দেয়াসহ অন্যান্য পদক্ষেপ নেয়ার মাধ্যমে মুক্তভাবে মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগের অধিকার নিশ্চিত করা হবে। সংসদে একটি উচ্চকক্ষ সৃষ্টি করা হবে। সবার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ৭০ অনুচ্ছেদের পরিবর্তন আনা হবে।
প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য আনা হবে। একটানা পরপর দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকা যাবে না।
সংসদের ডেপুটি স্পিকার বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে নির্বাচিত হবে। সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সভাপতির পদ সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক বিরোধীদলের জন্য নির্দিষ্ট থাকবে।
আইন ও রাষ্ট্রীয় নীতি প্রণয়ন এবং পর্যালোচনাই হবে সংসদ সদস্যদের মূল কাজ। সংসদে বিরোধীদলের মর্যাদা নিশ্চিত করা হবে। রাষ্ট্র পরিচালনার লক্ষ্যে জাতীয় কমিশন গঠন এবং ন্যায়পাল নিয়োগসহ বিরোধীদলের মতকে যথাযথ গুরুত্ব দেয়া হবে।
সকল সাংবিধানিক পদে নিয়োগের জন্য সুস্পষ্ট আইন তৈরি করা হবে। ন্যায়পাল, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিসহ সব নিয়োগের জন্য বিরোধীদলীয় সংসদ এবং বিশিষ্ট নাগরিকদের সমন্বয়ে স্বাধীন কমিশন গঠন করা হবে।
সকল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হবে। সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হবে। তবে প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচনের জন্য সকল রাজনৈতিক দল জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ন্যূনতম ২৩ শতাংশ নারীর মনোনয়ন দেয়া বাধ্যবাধকতা থাকবে। বাংলাদেশের প্রাদেশিক সরকার প্রতিষ্ঠার যুক্তিকতা পরীক্ষার জন্য একটি সর্বদলীয় জাতীয় কমিশন গঠন করা হবে।
৪. ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ
দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের দায়িত্ব থাকবে নির্বাচিত স্থানীয় সরকারের হাতে। স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করা হবে। বর্তমানে কমবেশি ৫ শতাংশ বাজেট স্থানীয় সরকারের মাধ্যমিক ব্যয় এর পরিবর্তে প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে বাড়িয়ে পাঁচ বছরে কমপক্ষে ৩০ শতাংশ বাজেট স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে ব্যয় এর বিধান করা হবে।
জেলা পরিষদ জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হবে। পুরো এলাকাগুলোতে এসব সেবা সংস্থা মেয়রের অধীনে রেখে সিটি গভর্নমেন্ট চালু করা হবে।
জনকল্যাণে প্রশাসনিক কাঠামো প্রাদেশিক পর্যায়ে বিনষ্ট করা এবং স্থানীয় সরকারের স্তর নির্ধারণের লক্ষ্যে কমিশন গঠন করা হবে।
৫. দুর্নীতি দমন এবং সুশাসন
এই সরকারের আমলে দুর্নীতির তদন্ত করে তার সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা হবে। ন্যায়পাল নিয়োগ করা এবং সাংবিধানিক নির্দেশিত সব দায়িত্ব পালনে ন্যায়পালকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া হবে।
দুর্নীতি দমন কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়া হবে। দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তা গ্রেফতারে সরকারের অনুমতি লাভের বিধান বাতিল করা হবে।
অর্থপাচার রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বর্তমানে চলমান কোনো উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ করা হবে না কিন্তু বর্তমান সরকারের শেষ দুই বছর তড়িঘড়ি করে নেয়া প্রকল্পগুলো পুনর্বিবেচনা করার জন্য কমিটি গঠন করা হবে। বর্তমানে চালু থাকা উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর ব্যয় নিরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ব্যাংকিং সেক্টরে লুটপাটে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং ব্যাংকগুলোকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বময় ক্ষমতা দেয়া হবে। সরকারি মদদে শেয়ারবাজারে লুটপাটে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সঠিক ব্যবস্থা এবং প্রণোদনার মাধ্যমে শেয়ার বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা করে শেয়ারবাজারকে তার সঠিক গতিপথে নিয়ে যাওয়ার সব ব্যবস্থা খুব দ্রুত নেয়া হবে।
দেশের ক্রিয়া সংস্থা ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজনীতির বাইরে রেখে পেশাগতভাবে গড়ে তোলা হবে।
ভিনদেশি ও ক্ষতিকর সাংস্কৃতিক আগ্রাসন থেকে নাগরিকদের রক্ষা করার জন্য দৃঢ় ও কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে। নিজস্ব সংস্কৃতি রক্ষা এবং প্রসারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
৬. কর্মসংস্থান এবং শিক্ষা
পুলিশ এবং সামরিক বাহিনী ব্যতীত সরকারি চাকরিতে প্রবেশের জন্য কোনো বয়সসীমা থাকবে না। সরকারি চাকরিতে শুধুমাত্র অনগ্রসর জনগোষ্ঠী এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য কোটা ছাড়া আর কোনো কোটা থাকবে না।
ত্রিশোর্ধ শিক্ষিত বেকারদের জন্য বেকার ভাতা চালু করার উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রীয় সক্ষমতা পরীক্ষা করে বাস্তবায়ন করার জন্য একটি কমিশন গঠন করা হবে।
আগামী তিন বছরের মধ্যে সব সরকারি শূন্যপদে নিয়োগ সম্পন্ন করা হবে। ব্যাপকসংখ্যক নন-গ্র্যাজুয়েট কর্মসংস্থান হবে কৃষি উৎপাদন এবং কৃষি বিপণন সমবায়।
দেশে কাজ করা ওয়ার্ক পারমিটবিহীন অবৈধ সকল বিদেশি নাগরিকদের চাকরি বন্ধ করা হবে। শিক্ষিত বয়োবৃদ্ধদের জন্য ন্যূনতম ভাতা রেখে অবৈতনিক খণ্ডকালীন কর্মসংস্থান করা হবে।
পিএসসি এবং জেএসসি পরীক্ষা বাতিল করা হবে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জন্য খেলাধুলা ও বিনোদনের ব্যবস্থা করা হবে। সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা ব্যবস্থা করা হবে। মোবাইল ইন্টারনেট খরচ অর্ধেকে নামিয়ে আনা হবে।
দেশের বিভিন্ন গণজমায়েতের স্থান ও গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফ্রি ওয়াইফাই এর ব্যবস্থা করা হবে। প্রথম বছর থেকেই ডাকসুসহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিশ্চিত করা হবে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজগুলোতে সরকারি শিক্ষাব্যয় সুনির্দিষ্ট করা হবে। মাদরাসার শিক্ষার্থীদের কারিগরি শিক্ষা দিয়ে বিদেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে।
কর্মসংস্থানকে প্রাধান্য দিয়ে শিক্ষাব্যবস্থার আমূল সংস্কারের জন্য কমিশন গঠন করা হবে।
৭. স্বাস্থ্য
৩১ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোকে পর্যায়ক্রমে ৫০ শয্যা, সকল জেলায় ২০ শয্যা সিসিইউ, ২০ শয্যা আইসিইউ, ১০ শয্যার এনআইসিইউ স্থাপন করা হবে।
পুরাতন ২১ জেলায় অগ্রাধিকারভিত্তিক একটি করে বিচার কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টার এবং একটি করে ক্যান্সার কেমোথেরাপি সেন্টার গড়ে তোলা হবে এবং পর্যায়ক্রমে তা সকল জেলায় প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা করা হবে।
সকল ইন্টার্ন চিকিৎসকদের এক বছর ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে সার্বক্ষণিকভাবে অবস্থান করে এক বছর প্রশিক্ষণ নেয়া বাধ্যতামূলক করা হবে। তিন মাসের মধ্যে ওষুধ এবং ডায়াগনস্টিক পরীক্ষার খরচ উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কমানো হবে।
সকল বড় জেলা শহরের জেনারেল প্র্যাকটিশনার প্রথা সৃষ্টি করে দ্রুত যথাযথ চিকিৎসার জন্য রেফারেল ব্যবস্থা কার্যকর করা হবে।
জেলা শহরের বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসার জন্য স্থানীয়ভাবে সরকার মনোনীত ২৩০ অনাগ্রহী বিভিন্ন উদীয়মান বিশেষজ্ঞদের রাজধানীর বাইরে বিভিন্ন সরকারি বিশেষায়িত হাসপাতালে দুই বছর সার্বক্ষণিক প্রশিক্ষণ দিয়ে দায়িত্ব নেবার জন্য প্রস্তুত করা হবে।
স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা নিশ্চিতকরণের জন্য একজন ন্যায়পাল থাকবেন। তার অধীনে বিজ্ঞানী, পরিসংখ্যানবিদ, ফার্মাকোলিস্ট, ফার্মাসিস্ট, মাইক্রোবায়োলজিস্ট, ইপিডিমিওলজিস্ট থাকবেন যারা নিয়মিত ওষুধের অপপ্রয়োগ রোধে ব্যবস্থাপত্র নিরীক্ষা এবং সকল হাসপাতাল ও ক্লিনিকে রোগীর মৃত্যুর খতিয়ান নিয়মিত পরীক্ষা করে জনসাধারণকে ফলাফল অবহিত করবেন। সকল নাগরিককে স্বাস্থ্যকার্ড প্রদান করা হবে।
৮. জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন
দুই বছরের মধ্যে গার্মেন্ট শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১২ হাজার টাকা করা হবে। গার্মেন্টসসহ অন্যান্য সকল শিল্পএলাকায় শ্রমিকদের জন্য বহুতল ভবন নির্মাণের মাধ্যমে আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে। সকল খাতের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হবে।
কৃষি উৎপাদনকে লাভজনক পেশায় পরিণত করার লক্ষ্যে উৎপাদন খরচের সঙ্গে চুক্তি মুনাফা নিশ্চিত করে সকল কৃষিপণ্যের মূল্য নির্ধারণ করা হবে স্থানীয় সমবায় সমিতির মাধ্যমে। গ্রাম ও শহরের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সুলভ মূল্যে রেশনিং চালু করা হবে।
কৃষি ভর্তুকি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বাড়িয়ে সার বীজ এবং অন্যান্য কৃষি উপকরণ সহজলভ্য করা হবে। জলমহল ও হাওড়ের ইজারা সম্পূর্ণ বাতিল করে মৎস্যজীবী ও দরিদ্র জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে।
বয়স্ক ভাতা, দুস্থ মহিলা ভাতা, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তদের ভাতার পরিমাণ এবং আওতা বাড়ানো হবে। পুনর্বাসন ছাড়া শহরের বস্তিবাসী ও হকারদের উচ্ছেদ করা হবে না।
স্বাস্থ্যবীমার মাধ্যমে শ্রমিকরা মাসে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ প্রিমিয়ামের মাধ্যমে সকল চিকিৎসা সুবিধা পাবেন।
সরকারি পর্যায়ে কর্মজীবী নারীদের সুবিধার জন্য পর্যাপ্ত ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন করা হবে। বেসরকারি ডে কেয়ার সেন্টার স্থাপন করার ক্ষেত্রে খুব সহজ শর্তে ঋণ দেয়া হবে।
মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক তালিকা প্রণয়নের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হবে। এক বছরের মধ্যে মানুষকে ভেজাল এবং রাসায়নিক মুক্ত নিরাপদ খাদ্য পাবার নিশ্চয়তা দেয়া হবে।
৯. বিদ্যুৎ ও জ্বালানি
প্রথম বছরে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো হবে না। সর্বোচ্চ ১০০ ইউনিট ব্যবহারকারীদের বিদ্যুতের মূল্য আগামী ৫ বছর বাড়ানো হবে না। গ্রামীণ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প এবং দেশের সকল সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালকে বাণিজ্যিক দামের পরিবর্তে হ্রাসকৃত বাসস্থানের দামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে।
১০. প্রবাসী কল্যাণ
প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা হবে। ইউরোপ-জাপানসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে শ্রমশক্তির রফতানির জন্য নতুন নতুন বাজার খুঁজে বের করা হবে।
মধ্যপ্রাচ্যে প্রবাসীকর্মীর মৃত্যুর ক্ষেত্রে মরদেহ সম্পূর্ণ সরকারি ব্যবস্থাপনায় দেশে আনা হবে এবং বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হবে।
১১. নিরাপদ সড়ক এবং পরিবহন
নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের ওপর নৃশংস হামলাকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা হবে। বড় শহরগুলোতে ট্রাফিক জ্যাম নিরসনকল্পে জরুরি পদক্ষেপ নেয়া হবে। শহরের গণপরিবহনকে প্রাধান্য দিয়ে পরিবহননীতি প্রণয়ন করা হবে এবং মানুষের জন্য আরামদায়ক কোনো পরিবহনের ব্যবস্থা করা হবে। রেলখাতকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে সম্প্রসারণ করা হবে।
১২. প্রতিরক্ষা ও পুলিশ
প্রতিরক্ষা বাহিনীর জন্য প্রয়োজনীয় যুদ্ধাস্ত্র এবং অন্যান্য সব সরঞ্জাম অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কেনা হবে। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের জন্য কল্যাণমূলক প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। পুলিশ বাহিনীর ঝুঁকিভাতা বৃদ্ধি করা হবে। পুলিশ বাহিনীর পেশাদারিত্ব বৃদ্ধিতে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
জাতিসংঘ বাহিনীতে পুলিশের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পুলিশের জন্য কল্যাণমূলক প্রকল্প গৃহীত হবে।
১৩. পররাষ্ট্রনীতি
সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়-নীতিতে পররাষ্ট্রনীতি পরিচালিত হবে। সার্কসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক এবং উপ-আঞ্চলিক জোটগুলোকে আরও শক্তিশালী করার জন্য ভূমিকা রাখা হবে। সমতার ভিত্তিতে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করার পদক্ষেপ নেয়া হবে।
চীনের ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ এর যে সকল প্রকল্প দেশের জন্য লাভজনক বিবেচিত হবে সেগুলোতে বাংলাদেশ যুক্ত হবে।
তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানি বন্টন, রোহিঙ্গা সমস্যাসহ অন্যান্য দ্বিপাক্ষিক সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত সমাধান করা হবে।
১৪. জলবায়ু পরিবর্তন
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধকল্পে বাংলাদেশ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তার চেষ্টা অব্যাহত রাখবে। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে অভিযোজন এবং এর ক্ষতিকর প্রভাব রোধ করার জন্য বাংলাদেশ আরও অনেক বেশি আন্তর্জাতিক সাহায্য নিশ্চিত করার চেষ্টা করবে এবং সেটার সদ্ব্যবহার করবে।
ইশতেহার পাঠে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত আছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষনেতা ড. কামাল হোসেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আ স ম আবদুর রব, নজরুল ইসলাম খান, মাহমুদুর রহমান মান্না, সুব্রত চৌধুরী, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, মোস্তফা মহসিন মন্টু, ড. রেজা কিবরিয়া প্রমুখ।