যাকাতুল ফিতরের টুকিটাকি ও মুসলিম-অমুসলিমদের ফিতরাহ আদায়

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

মে ১৮ ২০২০, ২২:২২

আব্দুল কাদির আল মাহদি;

বার্সেলোনা, স্পেন থেকে: যাকাতুল ফিতর হচ্ছে ঈদের দিন সুবহে সাদিকের সময় সিয়াম সমাপ্তির কারণে যা ওয়াজিব হয়। যাকাতুল ফিতর আদায়ের অনেক কারণ ও ফায়দা আছে। এমন উল্লেখযোগ্য কিছু কারণ হচ্ছে-

এক. সিয়ামের কিফফারা হিসেবে আদায় করা অর্থাৎ সিয়াম থাকাকালীন খেয়ালে-বেখায়ালে অনেক বেহুদা, ফাহেশা, গীবত-শেকায়াত করায় সিয়ামের পুরাপুরি হক্ব আদায় হচ্ছিল না। এসবের কাফফারা হিসেবে যাকাতুল ফিতর আদায় করা জরুরী।

দুই. একজন সুস্থ, সবল, বিত্তবান মানুষ পুরো রামাদ্বান মাসব্যাপী আল্লাহ তা’আলার বিশেষ ফরজ হুকুম সিয়াম পালনের তাওফিক হচ্ছিল। সুতরাং এমন সুস্থ, সবল হালত ও আল্লাহ তা’আলার তাওফিকের শোকর বা কৃতজ্ঞতা আদায় করতে যাকাতুল ফিতর আদায় করা।

তিন. দীর্ঘ মাস ব্যাপি সিয়াম আদায়ের পর ঈদুল ফিতরের দিন ধনী-গরীব যাতে ঈদের আনন্দ শেয়ার ও ভাগাভাগি করতে পারে এই জন্য যাকাতুল ফিতর আদায় করা। অর্থাৎ গরীবরাও যাতে করে ধনী, বিত্তশালীদের মতো ঈদ আনন্দ করতে পারে তার জন্য যাকাতুল ফিতর আদায় করা।

যাকাতুল ফিতর ওয়াজিব হওয়ার কারণসমূহের দিকে লক্ষ্য করলে এটি আদায়ের সময়, কাকে আদায় করবো, কোথায় আদায় করবো ইত্যাদি প্রশ্নের জবাব চলে আসে।

এটি মূলত ঈদের দিনই ওয়াজিব হয়। এবং ঈদের সালাতের আগে আগে আদায় করে নিতে হয়। কারণ ঈদের সালাতের পর আদায় করলে যাকাতুল ফিতর হিসেবে আদায় হয় না। বরং অন্যান্য স্বাভাবিক সাদাকার মতো হয়ে যায়।

ঈদের দিন ওয়াজিব হলেও ফুক্বাহাগণ ঈদের এক দুদিন আগে দেয়াকেও জায়েয বলেছেন। এমনকি কেউ কেউ এক দুদিন আগে দেয়াকেই ভালো বলেছেন। যাকাতুল ফিতর যেহেতু ওয়াজিব হয় গরীব লোক যেন ভালোভাবে ঈদ করতে পারে। কাজেই এক দুদিন আগে আদায় করে দিলে তারা ঈদের কেনাকাটা করে নিতে পারেন।

অমুসলিমদের যাকাতুল ফিতর দেয়া যাবে কি যাবে না? এমন প্রশ্নের জবাবে ইসলামের একটি মূলনীতি অনুসরন করা যেতে পারে। ইসলামের মূলনীতি হচ্ছে সাদাকা, কাফফারা, যাকাত বা যে কোন দান ইত্যাদি আদায়ের ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম হক্বদার হচ্ছেন ব্যক্তির নিকটতম লোকজন। এই নিকটতম লোকজন যদি বিত্তবান হয়ে থাকেন, তাহলে পরে পর্যায়ক্রমে ইহা অন্য জাতি, গোষ্ঠী পর্যন্ত পৌঁছাতে কোন অসুবিধা নেই। আর মুসলিম মিল্লাত হিসেবে একজন মুসলমান হচ্ছেন আরেকজন মুসলমানের সবচেয়ে নিকটতম ব্যক্তি।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে। আমাদের মুসলমানদের ভিতর সবাই কি বিত্তবান হয়ে গেছেন? সবার জরুরত কি পুরা হয়ে গেছে? জওয়াব আসবে অবশ্যই না। একথা যেহেতু জানা হয়ে গেছে, ননমুসলিমের তুলনায় মুসলিমরা নিকটতম এবং নিকটতম এই শ্রেণীর লোকের জরুরতও পুরা হওয়ার মতো সম্পদ এখনও হয়নি। কাজেই নিকটতম ব্যক্তি ও জরুরত দুটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রেখে মুলমানদেরকেই যাকাতুল ফিতর আদায় করা। তাদেরই হক্ব সর্বপ্রথম। এছাড়াও গরীব মুসলিম ব্যক্তি ঈদ আনন্দ ভালোভাবে করবে, এটিও মুসলমান ব্যক্তিকে ফিতরা দেয়ার অন্যতম কারণ।

ইমাম ও খতিব, দারুল কোরআন ইসলামিক সেন্টার, বার্সেলোনা, স্পেন।