মেডিকেল বোর্ডের অনুমতি ছাড়াই খালেদা জিয়াকে জোর করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে – সংবাদ সম্মেলনে চিকিৎসকবৃন্দ
একুশে জার্নাল
নভেম্বর ০৮ ২০১৮, ২৩:২৮
বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের অনুমতি ছাড়াই জোর করে অসুস্থ অবস্থায় তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ব্যক্তিগত জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকেরা। হাইকোর্টের নির্দেশে গত ৬ অক্টোবর চিকিৎসার জন্য নাজিমউদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বেগম খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) নেওয়া হয়।
তার চিকিৎসায় গঠন করা হয় মেডিকেল বোর্ড। হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. এম এ জলিলের নেতৃত্বে মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা হলেন অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আতিকুল হক (রিউম্যাটলজি), অধ্যাপক সজল কৃষ্ণ ব্যানার্জি (কার্ডিওলজি), অধ্যাপক নকুল কুমার দত্ত (অর্থোপেডিক্স) ও সহকারী অধ্যাপক ডা. বদরুন্নেসা।
এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চিকিৎসা শেষে বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১১টায় বিএসএমএমইউর কেবিনব্লক থেকে বেগম খালেদা জিয়াকে পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগার চত্বরে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। আজকের শুনানি শেষে আদালত এই মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী বুধবার দিন রেখেছেন। আদালতে বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবী তার অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে শুনানি পেছানোর আবেদন করলেও তা মঞ্জুর করেননি বিচারক মাহমুদুল কবির।
ওই ঘটনায় বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেন বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকরা। এ সময় লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন বিএসএমএমইউর শিশু সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ও সার্জারি অনুষদের সাবেক ডিন ডা. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। লিখিত বক্তব্যে তিনি অভিযোগ করেন, অসুস্থ বেগম খালেদা জিয়াকে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ জোর করে ছাড়পত্র বানিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) মহাসচিব ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ. জেড. এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘প্রফেসর জলিলুর রহমান চৌধুরী যিনি মেডিকেল বোর্ডের প্রধান উনি কোথায়? ডা. বদরুন্নেসা যিনি মেম্বার, উনি কোথায়? যে চিকিৎসক উনার চিকিৎসার সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন সেই চিকিৎসক কোনো মেডিকেল সার্টিফিকেট অথবা উনার ডিসচার্জ সামারি, অথবা কেস সামারি কিছুই তৈরি করেন নাই। এবং আতিকুল হক সাহেবকে ক্লাস থেকে বের করে পরিচালক মহোদয় বলেছেন, যে আপনি এটার মধ্যে সই করে দেন। সৈয়দ আতিকুল হক বলেছেন, আমি তো রোগী ছুটিই দেই নাই, রোগী গেল কখন?’
ডা. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া গত ৮ ফেব্রুয়ারি আদালত কর্তৃক দণ্ডপ্রাপ্ত হলে সরকার তাকে নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো, জরাজীর্ণ, অবসবাসযোগ্য, পরিত্যক্ত নির্জন কারাগারে পাঠায়। গত ৬ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানান্তরের আগে বেগম জিয়া গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার আইনজীবীদের আইনি লড়াই ও প্রবল জনমতের কাছে নতি স্বীকার করে আদালত বেগম খালেদা জিয়াকে সুচিকিৎসার জন্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে স্থানান্তরের নির্দেশ দেন। প্রথমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল তার স্বাস্থ্য বিষয়ে জনগণকে অবহিত করলেও দুদিনের মাথায় তারা তা থেকে বিরত থাকেন। এর ফলে গত এক মাসে বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য বিষয়ে জনগণ কিছুই জানতে পারেনি।’
ডা. সাইফুল বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটেছে এমন কোনো সংবাদ দেশবাসীকে জানাতে পারেনি। বেগম খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আবার সেই কারাগারে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় যে কারাগারে তিনি গুরুতরভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ডা. আব্দুল মান্নান মিয়া, অধ্যাপক ডা. সিরাজউদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক ডা. এম. এ. কুদ্দুস, অধ্যাপক ডা. এ কে এম আমিনুল হক, অধ্যাপক ডা. মোস্তাক রহিম স্বপন, ডা. মো. সাইফুল ইসলাম সেলিম, ডা. সাইফ উদ্দিন নেসার আহমেদ তুষান, ডা. মো. রফিকুল ইসলাম, ডা. মনোয়ারুল কাদির বিটুসহ সিনিয়র চিকিৎসকবৃন্দ।
উৎস–জাস্ট নিউজ