মেজর সিনহার সহযোগী শিপ্রাকে নিয়ে সমালোচনার ঝড়!

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

আগস্ট ১৫ ২০২০, ১৩:৪৬

এক সাংবাদিক সাক্ষাৎকারে শিপ্রাকে প্রশ্ন করা হয়, সেদিন রাতে কি হয়েছিলো? শিপ্রা উত্তরে বলে, সরি আমি এবিষয়ে কোন মন্তব্য করতে পারছি না। সাংবাদিক আবারও প্রশ্ন করে, আপনাকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে, আসলেই কি আপনার কাছে কোন মাদক ছিলো? শিপ্রা উত্তরে বলে, সরি আমি এবিষয়ে কোন মন্তব্য করতে পারছি না। তার নিকট তৃতীয় প্রশ্ন করা হয়— যেদিন তাকে হত্যা করা হয়, সেদিন কি তিনি সেনাবাহিনীর combat t shift, pant, shoes পরে ছিলেন? শিপ্রা বরাবরের মতে বলে, আপনি যদি কেইস রিলেটেড কোন প্রশ্ন না করেন, তাহলে আমি খুশি হবো। আবার প্রশ্ন করে, এই যে জাস্ট গো ও ভ্রমণ আইডিয়াটা কার ছিলো? আচ্ছা মেজর রাশেদ খান (অবঃ) নাকি আপনাদের? শিপ্রা উত্তরে বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে একটা ইউটিউব চ্যানেল খুলবো বলে চিন্তা করছিলাম, এবং প্ল্যানটা সিনহার সাথে যখন শেয়ার করি তখন সে আগ্রহ দেখায় ও বলে, Let’s do it together.

এর আগে মিডিয়া সাক্ষাৎকারে আমরা দেখেছি শিপ্রা বলেছে, আমরা সব সত্য বলবো। আমরা এখন ট্রমাটাইজড। এমনকি সিফাতের কথা বারবার সে বলে দিয়েছে। সিফাত যখন মুখ খুলতে গেছে, তখন মিডিয়ার সামনেই সিফাতের হাত চেপে ধরেছে এবং সিফাতকে শিপ্রা কোন কথা বলতে দেয়নি।

শিপ্রা ট্রমাটাইজড হলে সে মিডিয়ার সামনে কেন? নিজের ইউটিউব চ্যানেলের প্রচারণা করতে? মেজর রাশেদ খান (অবঃ) এর হত্যার ঘটনাকে ফোকাস না করে হঠাৎ শিপ্রা কেন নিজেদের চ্যানেলের প্রচারণায় ব্যস্ত হয়ে গেলো? হ্যাঁ। শিপ্রা সেটিই বলেছে, সে বলেছে তাদের স্বপ্ন ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাদের জাস্ট গো নামে একাধিক চ্যানেল খোলা হয়েছে, তাই তারা তাদের চ্যানেলে ভিডিও আপলোড শুরু করেছে। এবং এবিষয়ে কথা বলা শুরু করেছে।

প্রথম দিনের সাক্ষাৎকার থেকেই শিপ্রার কথাবার্তা অতিউৎসাহিমূলক। সিফাত কথা বলতে চাইলেও, সে তার মুখ বন্ধ করে দেয়। তাদের মুক্তির দাবিতে রাজপথে আন্দোলন হয়েছে। সবাই বরাবরই বলেছে, আপনারা রাজসাক্ষী। আপনারা বাইরে আসলে জাতি সব সত্য জানতে পারবে, কিন্তু শিপ্রার বক্তব্যের মাঝে মেজরের প্রতি ন্যূনতম সম্মান বা তার মেধাকে মূল্যায়ন করা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। যেখানে সিফাতের বিভিন্ন বক্তব্যে সিনহা স্যার শোনা গেছে। শিপ্রা বলছেন, সিনহা, ও, ওর ইত্যাদি। মেজর সিনহা বন্ধু থাকলেও তখন ছিলো, এখন জিনিসটা কিভাবে প্রেজেন্ট করতে হবে সেই বিষয়ে শিপ্রার উপস্থাপনা দেখে অবাক সবাই।

এদিকে আসিফ নজরুল তার এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, মেজর সিনহার হত্যাকাণ্ডের পর শিপ্রা দেবনাথের একটি ভিডিও দেখে হতভম্ব হয়ে পড়েছি। মনে হয়েছে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহার হত্যার বিচার না, শিপ্রার আসল চিন্তা ইউটিউব চ্যানেলের উপর নিয়ন্ত্রন নিয়ে। সে যেভাবে বলল সিনহা ‘মারা গেছে’ মনে হলো যেন তাকে কেউ হত্যা করেনি, পাহাড়-টাহার থেকে দুর্ঘটনাবশত পড়ে মৃত্যুটি ঘটেছে! তার সাথে সিনহার যতো অন্তরঙ্গ সম্পর্ক থাকুক না কেন, পাবলিকলি সে যেভাবে সিনহা সিনহা বলে তাকে উল্লেখ করেছে তা অত্যন্ত অরুচিকর লেগেছে আমার কাছে। আর এতো ঘনিষ্ঠ যদি হয় তাদের সম্পর্ক, তাহলে তার মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের পর শিপ্রার আচরণ তো খুব সন্দেহজনকও বলতে হবে! পুরো ভিডিওটা দেখে আমি এমন বিরক্ত হয়েছি যে তা বলার মতো না। কি দুর্ভাগা, মেজর সিনহা এমন একটা আজব সহকর্মী রেখে গেছে তার সম্পর্কে বলার জন্য।

অপরদিকে শিপ্রা দেবনাথের সমালোচনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরও। শিপ্রার ফেসবুক প্রোপাইলে প্রকাশিত একটি ভিডিও নিয়ে সমালোচনা করে পোস্ট দেন নুরুল হক নুর।

সেখানে তিনি মেজর সিনহার হত্যাকাণ্ড নিয়ে কথা না বলার জন্য শিপ্রা দেবনাথ ও সিফাতের সমালোচনা করে বলেন, তোমাদের ভূমিকা শুধু আমাদেরকে নয়, পুরো জাতিকেই হতাশ করছে। ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, তোমাদের সেলেব্রিটি বানানোর জন্য আমরা রাজপথে নামিনি। সত্য উদঘাটনের জন্য রাজপথে নেমে বরগুনায় আমার ভাই-বোনেরা প্রদীপ, লিয়াকতদের উত্তরসূরীদের লাঠিপেটা খেয়েছে, একজন এসআই চড় খেয়েছে। প্রতিবাদী মানুষগুলো রাজপথে না নামলে, তোমাদেরকে হয়তো মামলার আসামি হয়েই কারাগারে থাকা লাগতো মাস কিংবা বছর। তিনি বলেন, তোমরা মুক্ত হওয়ার পর সত্য উদঘাটনে যে সংগ্রামে নেমেছি সেটি সহজ হবে বলে মনে করেছিলাম। কিন্তু বর্তমানে তোমাদের ভূমিকা শুধু আমাকে কিংবা আমাদেরকে নয়, পুরো জাতিকেই হতাশ করছে। তোমাদের পাশে পুরো জাতি ছিলো। অথচ তোমরা বুঝলে না। তোমরা চাইলে জাতির কাছে সৎ-সাহসী, অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপোষহীন বীর হিসেবে নিজেদের তুলে ধরে সম্মানিত হতে পারতে। কিন্তু এখন ওদের ভয়ে তোমরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছো। যা আমাদেরকে সাময়িক পীড়া দিলেও পরবর্তীতে তোমাদের জন্যই বিপদের কারণ হবে। কারণ ওরা (প্রশাসন) হয়তো এখন প্রয়োজনে তোমাদেরকে সত্য না বলার জন্য চাপ দিচ্ছে। পাশে থাকবে বলছে, প্রলোভন দেখাচ্ছে। কিন্তু প্রয়োজন শেষে ওরাই তোমাদের বিপদে ফেলতে সময় নেবে না। তাই সময় থাকতে তোমাদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক, যোগ করেন ডাকসুর সাবেক এই ভিপি।