“মৃত্যু অমোঘ সত্যের নাম”। শরীফ আহমদ

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

অক্টোবর ২৪ ২০২২, ০১:২০

শরীফ আহমদ: মৃত্যু অমোঘ এক সত্যের নাম। পৃথিবীতে মানুষের আগমনই হচ্ছে তার গমনের বার্তা। মানুষের জন্ম যেন তার মৃত্যুর’ই অপর অংশ। পৃথিবীতে আগমনের ধারাবাহিকতা থাকলেও বিদায়ের কোনো নির্দিষ্ট ধারাবাহিকতা নেই। কে ছোট কে বড়,কে বাবা কে সন্তান- মৃত্যু এসব চেনে না,বুঝে না। অথচ চিরসত্য এ মৃত্যুকে সবচেয়ে বেশি ভুলে থাকে মানুষ!

মৃত্যুর আগমন নিশ্চিত হলেও তার আগমন সময়কাল একেবারেই অনিশ্চিত। পূর্ব নির্ধারিত কোনো সময়সূচি নেই। যেই মুহূর্তে মৃত্যুর ডাক আসবে- কোনো সাত-পাঁচ ভাবা ছাড়াই এই ডাকে সাড়া দিতে হবে। আল্লাহ তাআলার বাণী : প্রত্যেক সম্প্রদায়ের একটি মেয়াদ রয়েছে। যখন তাদের মেয়াদ এসে যাবে, তখন তারা না এক মুহূর্ত পিছে যেতে পারবে, আর না এগিয়ে আসতে পারবে।(সূরা আল আ’রাফ- ৩৪)

যাপিত জীবনে কত স্বপ্ন থাকে,কত চাওয়া-পাওয়া থাকে, মানুষ হিসেবে নানান রকম চাহিদা থাকে- মৃত্যুর মাধ্যমে সব চাহিদা বিলীন হয়ে যায়। সব চাওয়া-পাওয়া স্ব-স্ব স্থানে থেকে যায়, থাকে না শুধু মানুষ।

নির্ধারিত সময় হলে ‘মৃত্যু’ ব্যক্তিকে পাকড়াও করবেই। ব্যক্তির নাগাল পাবেই। তাকে অবকাশ দেওয়া হবে না। প্রয়োজন পূরণের সুযোগ দেওয়া হবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘তোমরা যেখানেই থাকো (একদিন না একদিন) মৃত্যু তোমাদের নাগাল পাবেই, চাই তোমরা সুরক্ষিত কোনো দুর্গে থাকো না কেন।’ (সুরা: নিসা, আয়াত : ৭৮)

অপর একটি আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।’ (সুরা আনআম- ১৮৫)

যেহেতু মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতেই হবে; এর পূর্বে পাথেয় জোগাড় করার চেষ্টা করা হবে প্রকৃত বুদ্ধিমানের কাজ :

আল্লাহ তাআলা স্বীয় নবীকে লক্ষ করে বলেন: ‘নিশ্চয় তুমি মরবে এবং তারাও মরবে’ (যুমার ৩৯/৩০)। পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষটিকে আল্লাহ তাআলা নিজে জিবরিলকে (আ.) পাঠিয়ে মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। অতএব মৃত্যুর কথা স্মরণ করা ও স্মরণ করিয়ে দেওয়া দু’টিই প্রত্যেক মুমিনের জন্য অবশ্য কর্তব্য। কেননা দুনিয়ায় লিপ্ত মানুষ মৃত্যুকে ভুলে যায়; ফলশ্রুতিতে শয়তান এই ফাঁকে মানুষকে বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত করে ফেলে।বিপরীতে মৃত্যুর স্মরণ মানুষকে গোনাহের কাজ থেকে দূরে রাখে। একারণেই নবীজি ﷺ বলেছেন: জীবনের স্বাদ বিনষ্টকারী মৃত্যুকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করো।’ (তিরমিজি)

দুনিয়াতে সবকিছু পুরোপুরিভাবে আঞ্জাম দিয়ে শুধু পরকাল থেকে উদাসীন হওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়।

হযরত উমর (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ ﷺ কে জিজ্ঞাসা করা হলো: হে আল্লাহর রাসুল! সবচে’ বুদ্ধিমান লোক কে? তিনি বললেন, যে ব্যক্তি অধিকহারে মৃত্যুকে স্মরণ করে এবং মৃত্যু পরবর্তী জীবনের প্রস্তুতি গ্রহণে ব্যস্ত থাকে।’ (ইবনে মাজাহ)

মানুষ মরে যায়, থেকে যায় তার কর্ম; কর্মের মাধ্যমে মানুষ বেঁচে থাকে যুগের পর যুগ।একজন মানুষ ক’বছরই বা জীবন লাভ করে- ষাট থেকে সত্তর বছর বা এর চে একটু কমবেশি। এই ছোট্ট জীবনের মাধ্যমেই পরকালের পাথেয় জোগাড় করতে হয়। দুনিয়ার জীবনকে পুঁজি করে পরকালে হয়তো চির শান্তি ও সুখের আবাসস্থলে স্থান হবে নাহয় ভয়ঙ্কর সাপ-বিচ্ছুর ঘর হবে আপন ঠিকানা।

মহান আল্লাহ বলেন:‘পক্ষান্তরে যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে, তারাই জান্নাতের অধিবাসী। তারা সেখানেই চিরকাল থাকবে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ৮২)

দুনিয়ার জীবনে অনেক ধন-সম্পদ, বিত্ত-বৈভব,সন্তান-সন্ততি থাকলেও মৃত্যুর পর এসব কোনো কাজে আসবে না,শুধুমাত্র নেককর্ম উপকারে আসবে।

হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাযি) বর্ণনা করেন,রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: ‘তিনটি জিনিস মৃত ব্যক্তিকে অনুসরণ করে থাকে। দু’টি ফিরে আসে, আর একটি তার (মৃত ব্যক্তির) সঙ্গে থেকে যায়। জিনিস তিনটি হলো: তার পরিবার, তার ধন-সম্পদ ও তার আমলনামা। এর মধ্যে পরিবার ও ধন-সম্পদ ফিরে আসে। তার সঙ্গে শুধুমাত্র আমলনামাই থেকে যায়। (বুখারি ও মুসলিম)

হযরত আবু হুরায়রা (রাযি) প্রিয়নবী ﷺ থেকে বর্ণনা করেছেন: ‘যখন মানুষ মারা যায়, তিনটি কাজ ছাড়া মানুষের আমলের দরজা বন্ধ হয়ে যায়।

প্রথটি হলো: অর্জিত ধন-সম্পদ থেকে সাদকা করা- যে দানের সাওয়াব অবিরাম দানকারী মৃতব্যক্তির আমল নামায় পৌঁছবে।

দ্বিতীয়টি হলো: এমন জ্ঞান অর্জন করা; যার দ্বারা মানুষ উপকৃত হবে।

আর তৃতীয়টি হলো: এমন নেক সন্তান রেখে যাওয়া; যে সন্তান মৃত্যুর পর মৃতব্যক্তির জন্য আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করবে। (মুসলিম)

আমাদের জীবন সর্বদা মহানবী ﷺ এর দেখানো পথে যাপিত হলে, মৃত্যুর ভয় আমাদেরকে কাবু করতে পারবে না, পাপ-পঙ্কিলতামুক্ত জীবন অতিবাহিত হলে মৃত্যু আলিঙ্গন করতে আমরা ভয় পাবো না।

‘যারা আল্লাহর সঙ্গে মিলিত হওয়ার আশা রাখে, তাদের নিশ্চিত থাকা উচিত, আল্লাহর নির্ধারিতকাল অবশ্যই আসবে।’ (সুরা: আনকাবুত, আয়াত : ৫)

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সর্বদা সীরাতে মুস্তাকীমের উপর অটল এবং অবিচল থাকার তাওফীক দান করুন।

 

লেখক: অধ্যয়নরত, তাকমিল ফিল হাদিস। জামেয়া ক্বাসিমুল উলূম দরগাহ হযরত শাহজালাল রহ. সিলেট।