মুসলমানদের পতন উদযাপনের উৎসব থার্টি ফার্স্ট নাইট
একুশে জার্নাল
জানুয়ারি ০১ ২০২০, ২৩:৫৮

।। আরজু আহমাদ ।।
উমার রা. তখন মসনদে খিলাফতে। সিদ্ধান্ত নিলেন মুসলমানদের নিজস্ব বর্ষগণনার জন্য পঞ্জিকা প্রবর্তনের। পরামর্শ সভা ডাকলেন। সকলকেই মত দিতে বললেন।
ইতিহাসে সেই ঘটনা স্বতন্ত্রভাবেই বর্ণিত আছে। মতসমূহের উল্লেখও আছে। প্রসিদ্ধ ইতিহাসগ্রন্থগুলোর প্রায় সব বর্ণনা থেকে সাকুল্যে ৬ ধরনের মত পাওয়া যায়, যেসব সাহাবারা সেই পরামর্শ সভায় দিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে-
১। কেউ মত দিলেন বাইজেন্টানাইন ক্যালেন্ডারকে গ্রহণের।
২। কেউ বললেন পারসিকদের রীতি মেনে নেওয়া।
৩। আবার কারও মত ছিল রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম মাস থেকে গণনার কথা।
৪। কেউ বললেন রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর দিন থেকে গণনা শুরু হোক।
৫। কেউ বললো নবুওয়াত প্রাপ্তির সময় থেকে গণনা করতে।
৬। এ মতও আসলো যে, হিজরতের মাস থেকে এই বছরের গণনা শুরু হোক।
উমার রা. শেষ মত গ্রহণ করলেন। উপস্থিত সব সাহাবা সমর্থন করলেন। সাহাবাদের মধ্যে ইজমা হলো। উমার রা. কেন সেদিন নতুন বর্ষপঞ্জিকা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন?
কারণটা কেবলমাত্র যদি তারিখের হিসেব রাখা হতো তবে বাইজেন্টানাইন কিম্বা পারসিক পঞ্জিকাকে গ্রহণ করতে পারতেন। কিন্তু করেন নি, কারণ তিনি চেয়েছিলেন মুসলমানদের স্বতন্ত্র্য রীতি।
কেন উমার হিজরতের মাসকেই ইসলামের বর্ষপঞ্জিকার শুরু হিসেবে ধরেছিলেন? সাহাবিরাও কেন সে বিষয়ে ঐক্যমত্যে পৌঁছালেন?
যদি কেবল রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর উদ্দেশ্যই থাকতো তবে তো তাঁর জন্মের মাসই ছিল সর্বাপেক্ষা উপযোগী। অথচ তা কিন্তু মেনে নেওয়া হয় নি।
আর যদি ইসলামের আগমনই উদ্দেশ্য হয়, তবে নবুওয়্যাত প্রাপ্তির মাসই ছিল সর্বাপেক্ষা উপযুক্ত সময়। তবুও তারা সেইমাসকে গ্রহণ করেন নি। বরং গ্রহণ করেছিলেন হিজরতের মাসকে।
এর কারণ কী ছিল? কারণ ছিল এ মাসেই মুসলমানদের একটি রাষ্ট্র কাঠামো প্রতিষ্ঠিত হয়। মদিনায় কায়েম হয় ইসলামি রাষ্ট্র। যার মাধ্যমে দুনিয়ায় ইসলামি খেলাফতের যাত্রা শুরু হয়।
মুসলমানদের স্বতন্ত্র জাতিসত্তা, রাষ্ট্র কাঠামো, বিচার ও সাংস্কৃতিক ভীত রচিত হয়। সুতরাং একটা জাতীয় বর্ষপঞ্জিকার সূচনার জন্য এটাই সর্বাপেক্ষা আদর্শ সময়।
আজকে আমরা ইসলামপন্থীরা যখন ‘থার্টি ফার্স্ট নাইট, বর্ষবরণ না-জায়েজ’ এতটুকুন বলে থেমে যাচ্ছি তখন বিষয়টা খুব সংকীর্ণ বলে আমার মনে হয়। আমাদের তো উচিত ছিল আমরা ইংরেজি বর্ষরীতি ব্যাপারটাকেই অস্বীকার করব।
অথচ সেটাকেই আষ্ঠেপৃষ্ঠে আগলে আছি। আর এক অংশের ব্যাপারে বলছি এটা না-জায়েজ। ইংরেজি বর্ষরীতি কখন আমাদের কাছে এলো?
যখন মুসলমানের পতন হলো, দুনিয়ার এবং নিজেদের নেতৃত্ব থেকেও মুসলমানরা বঞ্চিত হোল, তখনই এর শুরু। সেখান থেকেই থার্টি ফার্স্ট নাইট, নিউ ইয়ারের যাত্রা!
এটা আমাদের জন্য থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন নয়। আদতে মুসলমানদের পতনকে উদযাপনের একটা উৎসব মাত্র। সেই পতনকে ধারণ করার একটা সাধারণ আয়োজন কেবল।
মুসলমানের ঈমানি চেতনা একবার জেগে উঠলে, উম্মাহর জন্য উমারের মত ত্যাগ আর ভালোবাসা জন্মালে এই সব উদযাপন মিইয়ে যাবে। নাই হয়ে যাবে।
অনেকে মনে করেন রোমানদের বর্ষগণনা রীতি রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে ছিল। মানে আরবরা তা অনুসরণ করত। আসলে ব্যাপারটা মোটেও তা নয়।
আরবরা মূলত লুনার ক্যালেন্ডার অনুসরণ করত দক্ষিণ আরবে লুনিওসোলার সিস্টেম মানত। আর বর্ষ গণনা করত ঐতিহাসিক ঘটনা কেন্দ্র করে।