মিথিলা-সৃজিতের বিয়ে ও সমাজ ধ্বংসের বিষক্রিয়া

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

ডিসেম্বর ১০ ২০১৯, ১৭:৫৪

।। নূরুল্লাহ মারূফ ।।

সম্প্রতি জনৈকা শোবিজ তারকা কলকাতার এক ফিল্ম মেকারের সাথে গাঁট বেঁধেছেন। একজন মুসলিম এবং অমুসলিমের এমন বিয়েবন্ধন ২০১৯ সালের প্রেক্ষাপটে যদিও নতুন কিছু নয়, কিন্তু তারকা অঙ্গনে হিঁদু-মুসলিমের বিয়ে সম্ভবত নতুনই বটে।

রূপালী জগতের এসব বিয়েশাদী নিয়ে আমার মতো একজন হুজুর মানুষের বিশেষ কোনও মাতামাতির কারণ না থাকলেও, সমাজটা যেহেতু মুসলিম এবং আমি সেই মুসলিম সমাজেরই একজন ওয়ারিসে নবী— সে হিসেবে আমার এই ঘটনা নিয়ে আশঙ্কার কিছু কারণও আছে।

এ বিয়ে কি বৈধ?

আশঙ্কার কারণ বলার আগে এটা স্পষ্ট হওয়া জরুরি যে, এঁদের এ বিয়ে আদৌ বৈধ কিনা? পরিষ্কার উত্তর— এ বিয়ে মোটেও বৈধ নয়। ইসলাম যদিও ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদেরকে বিয়ের উদারতা দেখিয়েছে, কিন্তু সেটা কেবল প্রকৃত আহলে কিতাবদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। অর্থাৎ যারা ঐশী কিতাব নাযিল হয়েছে— পূর্ববর্তী এমন কোনও নবীর পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ করেন।

বলা বাহুল্য, আজকের যুগে এমন আহলে কিতাব পাওয়া দুষ্কর; বরং নেই বললেই চলে। কারণ ইতিমধ্যেই আহলে কিতাবগণ তাদের ওপর নাযিলকৃত ঐশী কিতাবে বিস্তর বিকৃতি সাধন করে ফেলেছে এবং ধর্মীয় বিধিবিধানও যথেচ্ছা সংযোজন-বিয়োজনের মাধ্যমে আমূল বদলে ফেলেছে।

আর তাছাড়া হিন্দু সম্প্রদায় কখনোই আহলে কিতাব ছিল না। তাঁরা সম্পূর্ণই মূর্তি পূজা নির্ভর একটি ধর্মীয় গোষ্ঠী, কুরআনের ভাষায় যাদেরকে মুশরিক বলা হয়েছে। যদি বলা হয়, আমাদের আলোচিত সেই ফিল্ম মেকার সাহেব হিন্দু নন; বরং সেক্যুলার বা নাস্তিক, তাহলে কুরআনের ভাষায় তাকে বলতে হবে কাফের বা স্রষ্টার অস্তিত্ব অস্বীকারকারী।

আহলে হক ওলামায়ে কেরামের ঐকমত্য ফতোয়া হচ্ছে, এ যুগের কোনও মুসলিমের জন্য কাফের বা মুশরিক কারো সাথেই বিয়ে বৈধ নয়। কাজেই বিয়ে বৈধ না হলে তাদের সবরকম পারস্পরিক মেলামেশা সম্পূর্ণ ব্যাভিচার হিসেবে গণ্য হবে এবং এ সম্পর্কের হাত ধরে আগত-অনাগত সকল সন্তানও অবৈধ বলেই বিবেচিত হবে।

আমার মূলত আশঙ্কার বিষয় এখানে তিনটি:

১. একটি অবৈধ বিয়ে, যা প্রকারান্তরে ব্যাভিচার— আমাদের তরুণ ও যুবসমাজ তা নিয়ে যেভাবে উচ্ছ্বসিত এবং উদ্বেলিত— যে কোনো মুসলিম সমাজের জন্যই তা উদ্বেগজনক। তারকাদের এহেন কার্যকলাপে যদি যুবসমাজও এসবের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে একটি মুসলিম সমাজ তৈরি হবে ব্যাভিচারী সমাজে।

২. একটি মুসলিম সমাজ ব্যাভিচারী সমাজে পরিণত হলে তা নিয়ে তথাকথিত সুশীল উদারমনাদের কোনও মাথাব্যথা না থাকলেও আমার আছে। কারণ হাদীসে পাকে নবীজী উল্লেখ করেছেন, “যে জাতির মাঝে যিনা-ব্যাভিচার ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়বে, তারা দুর্ভিক্ষ ও অভাব-অনটনে পতিত হবে। আর যে জাতির মাঝে ঘুষের ব্যাপক প্রচলন শুরু হবে, তারা ভীরুতা ও কাপুরুষতায় পতিত হবে।” মুসনাদে আহমাদ: ১৭৮২২।

৩. কোনও সমাজে বিবাহের নাম দিয়ে ব্যাভিচার ব্যাপক আকার ধারণ করার মানে হচ্ছে, সেই সমাজে অবৈধ সন্তানের বৃদ্ধি এবং একসময় তাদের ক্ষমতায়ন। শঙ্কার কথা হচ্ছে, নবীজী সা. বলেছেন, আমার উম্মত ততদিন কল্যাণের মধ্যে থাকবে, যতদিন না তাদের মধ্যে জারজ সন্তানের প্রসার ঘটবে। যখনই তাদের মধ্যে জারজ সন্তানের প্রসার ঘটবে, অনতিবিলম্বে আল্লাহ তখন তাদেরকে শাস্তিতে পাকড়াও করবেন। মুসনাদে আহমাদ: ২৬২১০।

জারজ সন্তানের প্রসারে শাস্তি প্রদানের কারণ স্বরূপ ইমাম ইবনুল কাইয়ুম রহ. বলেন, কতিপয় আলেমদের গবেষণা মতে অবৈধ ও নাজায়েজ সম্পর্কের ফসল হবার দরুণ অধিকাংশ জারজ সন্তানের স্বভাব-চরিত্রে এর প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। ফলতঃ তাদের কার্যক্রমও তাদের বাবা-মায়ের অনুরূপই হয় এবং সমাজে এর বিষক্রিয়া বৃদ্ধি পেতে থাকে। আল-মানারুল মুনিফ : ১৩৩