মিজানুর রাহমান আজহারীর প্রতি খোলা চিঠি
একুশে জার্নাল
জানুয়ারি ০৭ ২০২০, ১২:১০
প্রিয় মিজানুর রাহমান আজহারি সাহেব, মন চাইলো দুটি কথা লিখি আপনার বরাবরে। হয়তো কাজে লাগলে লাগতেও পারে।
ভাইজান,
আপনাকে আল্লাহ পাক লেসান কালাম সুর জ্ঞান পান্ডিত্য সবই দান করেছেন। দান করেছেন সময় জ্ঞানও। পেয়েছেন ভরা যৌবন। চেহারা সুরত সবদিক দিয়ে একদম ফিট একজন ইনসান বলা যায়। আপনার উপস্থাপনা জনতাকে মুগ্ধ করে। শিক্ষিতদের করে উজ্জিবীত। একজন আলেমের সময় জ্ঞান দেখে স্যাকুলারগণ অন্তত সমীহ করতে বাধ্য হয়। সে হিসাবে আপনার কাছে কিছু বলার আছে আমাদের।
আপনি জাকির নায়েকের মত সর্বজ্ঞানী হয়ে ফতোয়া দিতে যাবেন না। ছোট ছোট ফিকহি মাসআলা নিয়ে কথা না বললেই হবে। আপনার মাজহাব মানসাব মাশরাব যাই থাকুক মানুষকে ডাকবেন কোরআন সুন্নাহর দিকে। পলিসি হিসাবে তারেক জামিল সাহেবের হেকমত অবলম্বন করতে পারেন।
ভাইজান,
দয়াকরে প্রচলিত রাজনৈতিক লেবাস পরিধান করবেন না। কোনো দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নে নামবেন না। আপনার সামনে বস্তার বস্তা টাকার অফার আসবে। নেতৃত্ব কর্তৃত্বের লোভ দেখানো হবে। দোহাই এসবে পা দিবেন না। একজন দায়ীর জন্য ইন আজরিয়া ইল্লা আলাল্লাহ’ এই মনোভাব রাখুন। কোটি কোটি টাকা দিয়ে ধন দৌলত জমিয়ে করবেনটা কি? আপনার চোখের সামনে হয়েছে কত তারকার পতন। ফাঁসি জেল জিন্দান খানার উদাহরণ কি কম দেখেছেন?
ভাইজান,
ইমাম আবু হানিফা, ইমাম মুহাম্মদ, সৈয়দ আহমদ সেরহিন্দীর ইতিহাস জানেন। ইসলামের আহলুস সুন্নাহর দাওয়াত দিতে গিয়ে বিপদ যতই আসুক ধৈর্য রাখবেন। আপনি জামাল উদ্দীন আফগানি না হতে পারলে তুরস্কের সায়ীদ নুরসীর পথ অনুসরন করুন। রেসালায়ে নুরের মত কুরআনের আলো প্রজ্বলিত করতে থাকুন। কাউকে দোজখে দেয়ার চেষ্টা না করে সকলকে নিয়ে কিভাবে জান্নাতে যাওয়া যায় সেই পথটি দেখাবেন।
ইসলামের সৌন্দর্য প্রকাশ করুন। Islam is the final solution এবং Quran is the last revolution একথা মানুষের মাঝে যৌক্তিক ভাবে তুলে ধরুন। ইহুদি নাসারা হিন্দু বৌদ্ধ বলে হেয় না করে তুলনামূলক আলোচনার মাধ্যমে ইসলামের বৈশিষ্টের বয়ান দিন।
কাউকে কারো দালাল না বানিয়ে বলবেন আসুন সকলে মিলে আল্লাহর গোলাম হই। কবর পুঁজারি পীর পুঁজারি বলে কাউকে উপহাস না করে আল্লাহ তায়ালাই একমাত্র ইবাদতের মালিক সে কথা কলবের ভিতর গেঁথে দিন।
ভাইজান,
আমাদের সেনানিবাসে পুলিশ হেডকোয়ার্টারে বিজিবির দরবার হলে কোনো আলেম যেতে পারেনা। আমাদের উকিল বারে আদালতের হলে সচিবালয়ে কোনো ওয়াইজের ওয়াজ চলেনা। সেখানেও চাই আপনার সুআগমন। ওদের কাছে কে দ্বীন পৌঁছাবে? আমাদের দেশের দুতাবাস গুলোর বৈঠকে গিয়ে বৈশ্বিক বিষয়ে একটা লেকচারের জন্য কোনো আলেমকে ডাকা হয়না। কিন্তু সেখানে তো যেতে হবে কাউকে। তাই আমেরিকা ইসরাইল ভারত রাশিয়া সহ সকল দেশ বিদেশের লোকদের কাছে ইসলামের দাওয়াত যাতে পৌঁছানো যায় সেই মুখ টুকু রক্ষা করে চলবেন।
আচ্ছা ভাইজান,
একদিন শুভিজের নায়ক নায়িকাদের নিয়ে ডেকে বসতে পারেন না? বললেন- ওয়াও! তোমাদের পারফরমেন্স কত সুন্দর। তোমাদের টেলেন্ট দেখে জাতি বিমুগ্ধ। ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ, ওমর মুখতার, বাদশাহ হারুনুর রশীদ, স্পেনের সভ্যতা, বাগদাদ ও দিল্লির ইসলামি রেনেসাঁর উপর কিছু ছবি করলে কেমন হয়?
আপনি ক্রিকেটারদের ডেকে এনে তাদের কেরেশমাটিক দক্ষতার প্রশংসা করে বলতে পারেন যে নামাজের সময় যেখানে থাকো আদায় করেনিও। কিছু মন্ত্রী এমপি কোটিপতি শিল্পপতিদের ডেকে এনে গরীব অসহায় মানুষদের সহায়তা করার জন্য পথ দেখিয়ে দিতে পারেন।
আপনি পারবেন সরকারি কর্মচারীদের বলতে যে তোমরা আল্লাহকে ভয় করো আর দুর্নীতি পরিহার করো। জান্নাতের আকাংখা আর দোজখের ডর এবং খোদা ভীতি রাষ্ট্রনায়কদের অন্তরে জাগরুক করার জন্য আপনাকে সেভাবে এগুতে হবে, কাজ করতে হবে।
ভাইজান,
আপনি কওমি আলিয়া স্কুল কলেজ সকলের খেদমতের প্রশংসা করুন। আর ভালবাসার সামীয়ানাকে বিস্তৃত করেদিন বিশাল আকাশের মত। তারপরও ভাববেন না যে, আপনার দুশমন সব মরে যাবে! দুশমনের দুশমনি কিয়ামতের আগপর্যন্ত চলমান। ওরা আপনাকে গালি না দিলে আপনি সতর্ক হবেন কেমনে?
ভাইজান,
আমি আপনাকে দুটি জিনিসের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করার কথা বলবো। একটি হলো সকলকে আল্লাহর পথে চলে আসা। গোটা ইউরোপ উন্নতির সর্বোচ্চ শিখরে গিয়েও অশান্তির মূল কারণ আল্লাহকে ভুলে যাওয়া।
আর পরেরটা হলো সমাজে ইনসাফ কায়েম। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা। গোটা ইউরোপের উন্নতির মূল চাবিকাটি হলো সমতা ও ন্যায় বিচার কায়েম। শিক্ষা চিকিতসা পুলিশ বিচার প্রশাসনের প্রতিটি বিভাগে ইনসাফ কায়েম জরুরি।
ভাইজান,
আপনার কন্ঠ আছে, বলার সুযোগ আছে, গুছিয়ে বলার ক্ষমতা আছে। তাই এসবের জন্য মুতাকাব্বির বা অহংকারি হবেন না। নিজেকে হামছে তুমছে করে দেখাবেন না। বিনয় নম্রতা ভদ্রতা হোক আপনার পোশাক।
ভাইজান,
গলিতে গলিতে ওয়াজে যাবেন না। বিভাগীয় পর্যায়ে একটি করে করুন। পারলে কিছু ট্রেনিং সেশন করুন। ময়দানে যেমন ফায়দা আছে তেমনি লাভ কম হবার সম্ভাবনা প্রবল। বাহবা বেশ পেলেন, লাখ লাখ মানুষ হলো কিন্তু সমাজের অবস্থা যদি যে লাউ সেই কদু থাকে তাহলে কোনো লাভ হবেনা। হ্যাঁ কোন দল গঠন করবেন না। টাকার জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিবেন না। তবে সামাজিক কাজের সুবিধার জন্য কোন সংস্থা বা পরিষদ থাকলে থাকতে পারে। মনে রাখবেন দল করা শুরু করলেই চেয়ার নিয়ে শুরু হবে মারামারি।
ভাইজান,
গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ থাকার নসিহা দিবেন।যত দল যত মত আছে সকলের মাঝে সৌহার্ধপুর্ণ সম্পর্ক তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। কওমি আলিয়া ও কলেজের ভেদাভেদ ভুলে সকলকে উম্মাহর ঐক্যের কথা শোনাবেন।
ভাইজান,
পারলে মাঝে মাঝে হাটাজারি, পটিয়া বগুড়ার জামিল সিলেটের রেংগা দরগাহ কাজির বাজার ও ঢাকার লালবাগ রাহমানিয়ায় ঢোঁ মারবেন। সুযোগ পেলে চরমুনাইতেও গেলেন। আমাদের মাঝে যে ছুঁয়াচে রোগের যে ভয় আছে দেখবেন সেটাও একদিন চলে গেছে।
ভাইজান,
মাঝে মাঝে শ্রুতা হবেন। কারো মাহফিলে যান। জনগণের কথা শোনবেন। প্রশ্নোত্তর পর্ব রাখবেন।
পরিশেষে আপনার ও আপনার মত সকল ওয়াইজীনদের কল্যাণ কামনা করে বিদায় নিলাম।
বিনিত-
(খতিব) তাজুল ইসলাম,লন্ডন।
৭ জানুয়ারি ২০২০