মানুষ জেগে উঠেছে, আওয়ামী লীগ ভেসে যাবে: ফখরুল
একুশে জার্নাল ডটকম
অক্টোবর ১৫ ২০২২, ১৯:৫৩
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘কথায় কথায় হুংকার দেবে, কথায় কথায় ভয় দেখাবে, তোমাদের হুংকারে বাংলাদেশের মানুষ এখন আর ভয় পায় না। বাংলাদেশের মানুষ এখন জেগে উঠেছে। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত যে উত্তাল তরঙ্গ দেখা যাচ্ছে এতে আওয়ামী লীগ ভেসে যাবে।’
শনিবার (১৫ অক্টোবর) বিকেলে ময়মনসিংহ শহরের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট মাঠে গণসমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকের সব বাধা উপেক্ষা করে এই সমাবেশ প্রমাণ করেছে বাংলাদেশের মানুষ কোনো বাধা মানবে না। তারা অবশ্যই দেশকে মুক্ত করে ছাড়বে ইনশাআল্লাহ।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের নেতা তারেক রহমান বলেছেন- দেশ যাবে কোন পথে ফয়সালা হবে রাজপথে। আরেকটি কথা বলেছেন টেইক ব্যাক বাংলাদেশ। কেন বলেছেন, কোন বাংলাদেশকে ফিরে পেতে চাই আমরা? যে বাংলাদেশের জন্য স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান। তিনি একটি তলাবিহীন ছুরি বাংলাদেশকে তুলে নিয়ে এসে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। বাংলাদেশের যারা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সেটাকে বাতিল করে তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।’
আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘কত বড় বড় কথা বলে। গণতন্ত্র তো তোমরাই ধ্বংস করেছো বারবার। ৭৫ বাকশাল তৈরি করে ধ্বংস করেছো, আবার এখন একনায়কতন্ত্র বাকশাল শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চলেছে। জিয়াউর রহমান প্রথম বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য ভিত্তি স্থাপন করেছেন। তিনি গার্মেন্টসের সূচনা করেছিলেন। তিনি শ্রমিক ভাইদের বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছিলেন সেখান থেকে এখন রেমিটেন্স আসছে। এখন ওই রেমিটেন্সের টাকা মেরে খাচ্ছে আওয়ামী লীগ। এটি একটি ‘চোরের’ দল। এটা আমার কথা নয়, কথা হলো নেতার শেখ মুজিবুর রহমানের।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘১৯৭৪ সালে তখন আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের কারণে দুর্ভিক্ষ হলো, আবার সেই দুঃখের কথা তার মেয়েও বলছেন। দুর্ভিক্ষের সময় তিনি (শেখ মুজিবুর রহমান) বলেছিলেন আমি কী করবো, আমার তো সব চাটার দল, চোরের দল। এতগুলি কম্বল এলো বিদেশ থেকে আমার কম্বলতা গেল কোথায়। এই হচ্ছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের লোক দুর্নীতি ডাকাতি এটা তাদের মজ্জাগত। জিনিস আওয়ামী লীগের বডি কেমিস্ট্রিতে আছে, ওখান থেকে তারা বের হতে পারে না। একটি হচ্ছে চুরি আরেকটি হচ্ছে সন্ত্রাস।’
গাইবান্ধা উপনির্বাচনে প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘দলীয় সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, এটা আমরা পূর্বেই বলেছিলাম। যা গাইবান্ধা উপনির্বাচনে আবার প্রমাণিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনোদিন কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না।’
ফখরুল বলেন, ‘আমরা খুব পরিষ্কারভাবে বলছি, এই সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে এবং একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন হবে তাদের অধীনে নির্বাচনে জনগণের পার্লামেন্ট গঠন করা হবে। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে।’
ফখরুল বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে, আমাদের নেতা তারেক রহমানের সমস্ত মামলা প্রত্যাহার করে তাকে দেশে ফিরে আসার সুযোগ করে দিতে হবে। আমাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে যে মামলা রয়েছে তা প্রত্যাহার করতে হবে। বিলম্বে সভা সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে।’
মানুষ এখন জেগে উঠছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘সকলের প্রচেষ্টায় এই সরকারকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করব এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বাধ্য করব।’
জ্বালানি তেল, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি, চলমান আন্দোলনে ভোলায় নূরে আলম ও আব্দুর রহিম, নারায়ণগঞ্জে শাওন, মুন্সীগঞ্জে শহিদুল ইসলাম শাওন ও যশোরে আব্দুল আলিমসহ পাঁচজনকে হত্যার প্রতিবাদে, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি এবং নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়েরের প্রতিবাদে এই গণসমাবেশের ডাক দেয় বিএনপি। গত ৬ অক্টোবর ময়মনসিংহের ঐতিহাসিক সার্কিট হাউজ মাঠে বিভাগীয় সমাবেশের অনুমতি চায় দলটি। তবে প্রশাসন অনুমতি না দিয়ে সমাবেশের জন্য পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্রাবাস মাঠ নির্ধারণ করে দেয়।
সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।