মাধ্যমিক পর্যায়ে সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করতে তিন প্রস্তাব
একুশে জার্নাল
আগস্ট ১২ ২০২০, ২৩:৩৯
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট:
করোনা পরিস্থিতির কারণে মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের সিলেবাস সংক্ষিপ্ত হচ্ছে। সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করে তিনটি প্রস্তাব তৈরি করছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর সময়োপযোগী সংক্ষিপ্ত সিলেবাস পড়িয়ে বার্ষিক পরীক্ষা আয়োজন করা হবে।
এনসিটিবি থেকে জানা গেছে, সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরের মধ্যে স্কুল খোলা সম্ভব হলে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস পড়িয়ে বার্ষিক পরীক্ষার আয়োজন করা হবে। বর্তমান সিলেবাসের যে অংশটুকু গুরুত্বপূর্ণ সেগুলো রেখে বাকিগুলো বাদ দেয়া হবে। পাঠ্যবই বা সিলেবাসের যে অংশটুকু পড়ানো সম্ভব হবে না তার অত্যাবশ্যকীয় পাঠ পরের শ্রেণিতে যুক্ত করা হবে।
শিক্ষার এই ‘রিকভারি প্ল্যান’ চূড়ান্ত করতে বুধবার (১২ আগস্ট) এনসিটিবিতে দুই দিনব্যাপী কর্মশালার আয়োজন করা হয়। কর্মশালায় মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষক ও বিশেষজ্ঞদের ডাকা হয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার এ কর্মশালা শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
জানা গেছে, সিলেবাস সংক্ষিপ্তকরণ কর্মশালার মাধ্যমে তিনটি প্রস্তাব তৈরি করা হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পরে ৭০ দিন সময় পেলে সিলেবাসের কোন অংশটুকু পড়ানো হবে, ৫০ দিন পেলে কতটুকু পড়ানো যেতে পারে এবং ৩০ দিন সময় পেলে কতটুকু অংশ বাতিল করে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো পড়ানো যেতে পারে সে ধরনের তিনটি প্রস্তাব তৈরি করা হচ্ছে। মাধ্যমিক পর্যায়ের দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও বিশেষজ্ঞরা পাঠ্যবই বিশ্লেষণ করে তিন ধরনের প্রস্তাব তৈরি করছেন। এরপর সেসব প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও নির্ধারিত ছুটি থাকার কারণে সিলেবাস সংক্ষিপ্তকরণ করা হচ্ছে। এজন্য দুই দিনব্যাপী আমরা কর্মশালা করছি। এর মাধ্যমে সময়োপযোগী তিনটি প্রস্তাব তৈরি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে যেকোনো একটি প্রস্তাব অনুমোদন করা হবে।
তিনি বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হলে যে প্রস্তাবটি কার্যকর করা হবে সেই সিলেবাস শেষ করে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষার আয়োজন করা হবে। বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের পরবর্তী ক্লাসে উন্নীত করা হবে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব না হলে অটো পাসের মাধ্যমে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের পরবর্তী ক্লাসে উন্নীত করা হবে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্রে জানা গেছে।
অন্যদিকে প্রাথমিকের ‘রিকভারি প্ল্যান’ তৈরি করেছে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি (নেপ)। মাধ্যমিকের ‘রিকভারি প্ল্যান’ তৈরি করেছে বাংলাদেশ পরীক্ষা উন্নয়ন ইউনিট (বিইডিইউ)। এরই মধ্যে উভয় সংস্থাই তাদের পরিকল্পনা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে। পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে এনসিটিবিতে কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে। মাধ্যমিক পর্যায়ে প্রতিটি শ্রেণির ‘কারিকুলাম ম্যাপিং’ করে ‘রিকভারি প্ল্যান’ তৈরি করা হচ্ছে
বিইডিইউয়ের ঊর্ধ্বতন বিশেষজ্ঞ (পরীক্ষা ও মূল্যায়ন) রবিউল কবীর চৌধুরী বলেন, ‘সেপ্টেম্বরে স্কুল খুললে কীভাবে পরবর্তী কার্যক্রম চলবে, অক্টোবরে বা নভেম্বরে খুললে কীভাবে চলবে সে ব্যাপারে আমরা বিস্তারিত পরিকল্পনা জমা দিয়েছি। যদি নভেম্বরের মধ্যে স্কুল খোলা সম্ভব হয় তাহলে সংক্ষিপ্ত পরিসরে পরীক্ষা নেওয়া হবে। সেটা সম্ভব না হলে আমরা অটো প্রমোশন দিতে বলেছি। নভেম্বর পর্যন্ত স্কুল খোলা সম্ভব না হলে ডিসেম্বরে বৃত্তির জন্য মেধাবী শিক্ষার্থীদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে। প্রত্যেক স্কুল থেকে ৫ বা ১০ শতাংশ শিক্ষার্থী এই পরীক্ষায় বসবে। এ ক্ষেত্রে কত শতাংশ বৃত্তি পরীক্ষা দেবে তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ঠিক করবে।’
বিইডিইউ থেকে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের ছুটির কারণে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ৮৮টি কর্মদিবস নষ্ট হচ্ছে। ১৬ মার্চ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা মাত্র ৪১ দিন কর্মদিবস পেয়েছিল, কিন্তু এ সময়ে তেমন একটা লেখাপড়া হয়নি। যদি ১ সেপ্টেম্বর থেকে ক্লাস শুরু করা সম্ভব হয় তাহলে শিক্ষার্থীরা ৬৬ দিন পাচ্ছে। ১ অক্টোবর থেকে ৫২ দিন কর্মদিবস থাকে। এই সময়েও ক্লাস শুরু করা সম্ভব হলে শীতকালীন ১০ দিনের ছুটি বাতিল করা বা কমানোর সুপারিশও আছে।
বিইডিইউ আরো বলছে, সেপ্টেম্বরে স্কুল খুললে সিলেবাস কমিয়ে ১০০ নম্বরের পরীক্ষাই নেওয়া সম্ভব। অক্টোবর বা নভেম্বরে খুললে ৫০ নম্বরের পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে। সেটা সম্ভব না হলে কোনো পরীক্ষা ছাড়াই ‘অটো পাস’র মাধ্যমে পরবর্তী শ্রেণিতে চলে যাবে শিক্ষার্থীরা।
করোনার কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। কয়েক দফা ছুটি বাড়িয়ে তা ৩১ আগস্ট পর্যন্ত করা হয়েছে। গত ১ এপ্রিল থেকে শুরু হতে যাওয়া এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ১৫ দিন পর এই পরীক্ষা নেওয়া হবে বলে পরিকল্পনা রয়েছে।