মাদরাসায় শিক্ষার্থী ভর্তির ভাবনীয় বিষয়

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

মে ৩০ ২০২০, ২১:২৩

।। মাসউদুল কাদির।।

মাদরাসা বলতে দারুল উলূম দেওবন্দের অনুসারী দ্বীনী মাদারিসে কাওমিয়াকে বুঝাচ্ছি। আলিয়ার বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। স্বাধীন কওমী মাদরাসার অভিভাবকদের প্রথমেই আমি অভিনন্দন জানাই। স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় সরকার কিংবা আন্তর্জাতিক আইনকে আমলে নিয়ে সুচিন্তিত মতগ্রহণে প্রয়াসী হয়েছেন তারা। আলেমগণ যে সজাগ, সতর্ক ও সামাজিক তা এবার প্রমাণ করে ছেড়েছেন। সত্যিকথা বলতে, কওমী মাদরাসা নিয়ে আমার কোনো কথাই চূড়ান্ত নয়। শুধুই একটা পরামর্শ শেয়ারই উদ্দেশ্য। দেশের মাদরাসাগুলো ভারতের দারুল উলূম দেওবন্দকে অনুসরণ করে থাকে। এবার দেওবন্দ স্বস্থ্যবিধ রক্ষায় পুরনো শিক্ষার্থী নিয়েই চলার ঘোষণা দিয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে একটি ভালো খবর। বাংলাদেশের মাদরাসাগুলোও এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে। বিশেষত এবার মাদ্রাসায় নতুন কোনো বিভাগ বা শুবা না খোলাই উচিত। নতুন কোনো প্রতিষ্ঠান চালুর বিষয়টি ভিন্ন। বৃহত্তর স্বার্থ হেসেবে আমলে নেয়া যেতে পারে। পুরনো সব শিক্ষার্থী যদি আগের প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পায় তাহলে সেটি হবে খুবই উপকারি বিষয়। কিছু কিছু মাদরাসা বোর্ডগুলোকে উপেক্ষা করতে চায়, এটি ঠিক নেয়। সমূহ বিপদ থেকে রক্ষার নিয়ামক হলো বোর্ড। আলোচনা, সমালোচনা ভিন্ন কথা।

মাদরাসাগুলোকে ডিজিটালাইজেশন করার ক্ষেত্রে এখন থেকে গুরুত্ব দিতে হবে। অনলাইন কর্মসূচি বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। অনেক মাদরাসার প্রিন্সিপাল মহোদয়ের যে মেইল এড্রেস খোলে দিয়েছিলাম সেই মেইলের পাসওয়ার্ড নেননি গেল দেশ বছরেও। না, এমন বেপরোয়া হলে চলবে না। অনেকে বলে থাকেন, আমরা কি এইসব বুঝি ভাই? একটা কথা জেনে রাখুন, জেনারেল এডুকেশনেও এমন অসঙ্গতির নজির অহরহ। কোনো কারণে একজন কর্নেলের সঙ্গে আমার কথা হলো, বল্লাম, ঠিক আছে, আমি এক্ষণি মেইল করছি, দেখে দিলে পাঁচ মিনিটেই চূড়ান্ত করে দিচ্ছি। তিনি অপারগতা, অক্ষমতা দেখালেন। তিনি বল্লেন, আমিতো ভাই এইসব একটু বুঝি কম। আজকে আমার সহকর্মী নেই। কাল ছাড়া আমি আরও রিপ্লাই দিতে পারছি না।

আমি আকাশ থেকে পড়লেও একটা বিষয় ভালো লেগেছিল, তাঁর সরলতা। কোনো অহংবোধ ছিলো না। নিজের অবস্থাটা পরিষ্কার করতে কোনো কছুর করেননি।

আমরা কেমন মানুষ তা না-ই বল্লাম। একজন সাবেক মন্ত্রীর কথা বলি। তিনি লুকিয়ে কয়েকদিন হসপিটালাইজড থেকে সচিবালয়ে ফিরলেন। তাঁর ভাগিনা খবরটা জানতে পেরে হন্তদন্ত হয়ে সচিবালয়ে এলেন। এসে বল্লেন, মামা আপনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ছিলেন অথচ আমি কিছুই শুনলাম না। মন্ত্রী মহোদয় নিজের আসন থেকে ওঠে এসে ভাগিনার মুখ চেপে ধরলেন। বল্লেন, তুই কি চাস? আমি মন্ত্রিত্বটা হারাই? ঘন ঘন অসুস্থ হলে আমার এ-ই চেয়ার থাকবে?

পরে সামনের চেয়ার বসা জাতীয় প্রেসক্লাবের একজন মেম্বার সিনিয়র সাংবাদিকের দিকে চেয়ে মুচকি হাসলেন। সে অভিজ্ঞ সাংবাদিকের সঙ্গে আমার কিছু দিন কাজ করার সুযোগ হয়েছিল। নিজের অক্ষমতা প্রকাশেরও একটা সৎ সাহস লাগে। কখনো কখনো এ-ই সরলতাকে দুর্বলতাও মনে করা হয়।

যেমন মাওলানা শব্দটি কেউ কেউ এমনভাবে ব্যবহার করে যে এটি যেনো তার নামের অংশ। এ চিন্তাটা পরিহারযোগ্য।

মাদ্রাসার কথায় আসি, লক খুললে কিছু প্রতিষ্ঠানের জন্যও বিপদ। সত্যিটা হলো, সব প্রতিষ্ঠানের সামর্থই নেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিচালনা করার। একটা গিঞ্জি পবিবেশেই সেসব প্রতিষ্ঠান চলে আসছিল। ওইসব প্রতিষ্ঠান পরিচালকদের নতুন করে ভাবা উচিত।

সদ্য প্রয়াত দেওবন্দের শাইখুল হাদিস মাওলানা সাইদ আহমদ পালন পুরী রহ. ঢাকায় এদেশের কওমী মাদ্রাসার আবাসিক ব্যবস্থাপনার তুমুল সমালোচনা করেছিলেন। এরপরো অন্তত ঢাকায় পরিবর্তনের কোনো লেশ আমি দেখিনি। করোনা কালে হযরত পালনপুরীর চিন্তা নতুন করে ভাবনীয় বিষয় বটে।


লেখক : প্রেসিডেন্ট, শীলন বাংলাদেশ
রামপুরা, ঢাকা