মাদক থেকে তরুণ প্রজন্মকে বাঁচাতে হবেই
একুশে জার্নাল ডটকম
জুলাই ২৩ ২০১৯, ১৭:৪২
এহসান বিন মুজাহির
বর্তমান সমাজে মাদক জন্ম দিচ্ছে একের পর এক অপরাধ। মাদকের ছোঁয়ায় সম্ভাবনাময় তারুণ্য শক্তি অধঃপতনের চরম শিখরে উপনীত হচ্ছে। মাদকদ্রব্যের প্রতি আসক্তি সারা বিশ্বের তারুণ্যের মধ্যে এক ভয়াবহ মহামারি রূপে দেখা দিয়েছে। মাদক এখন সহজলভ্য। শহর-নগর, গ্রামসহ মফস্বল এলাকায়ও হাত বাড়ালেই পাওয়া যায়। আশির দশকের শেষ দিকে ফেনসিডিলের আবির্ভাব হয়। পর্যায়ক্রমে এটার ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটে। নব্বইয়ের দশকে মাদকের জগতে সংযোজন হয় ইয়াবা।
এ ছাড়া গাঁজা, আফিম, চরশ, বাংলা মদ, গুল, মরফিন, কোকেন, বিয়ার, ওয়াইন, হেরোইন, প্যাথেলিন, মারিজুয়ানা, ডেক্রপরটেন, প্যাথেডিন কোকেন, ইকসটামি, এল এস ডি, ইলিকসার, চোলাইমদসহ রকমারি মাদকের সঙ্গে তরুণদের সংশ্লিষ্টতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম বিধ্বংসকারী মাদকের বিস্তার সমাজে যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে সচেতন অভিভাবক মহল উদ্বিগ্ন। দেশের আগামী ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাময় তারুণ্যশক্তি বিপর্যয়ের মুখে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহায়তায় পরিচালিত এক জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশে ১৮ বছরের ওপরে শূন্য দশমিক ৬৭ শতাংশ মানুষ মাদকাসক্ত। মাদকাসক্তদের মধ্যে ৮৫ শতাংশের বয়স ১৮ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। ইদানীং শিশু-কিশোরদের মধ্যে নানা ধরনের মাদক সেবনের প্রবণতা বাড়ছে। সমাজসেবা অধিদফতরের এক গবেষণায় দেখা যায়, শহর, গ্রাম থেকে নিয়ে স্কুল-কলেজ এবং ভার্সিটির শিক্ষার্থীরাও মাদকাসক্ত। নামিদামি অনেক কলেজ-ইউনিভার্সিটিগুলোতেও চলছে মাদকের রমরমা বাণিজ্য। প্রতিনিয়িত বসছে নেশার আড্ডা। অনেকে নেশার টাকা জোগাড় করতে নেমে পড়ছে অপরাধ জগতে। আবার কোনো কোনো ভার্সিটির ছাত্রীরা মাদকের টাকা সংগ্রহের জন্য ঘৃণিত দেহব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। মাদকের চাহিদা মেটাতে তরুণ-তরুণীরা ক্রমেই অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠছেন। অনেক শিক্ষার্থী নেশার মোহে পড়ে সম্ভাবনাময় জীবনকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দিচ্ছেন। আজ পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে চলে এসেছে যে, মরণনেশা মাদকের ছোবলে দেশ ও জাতির আশা-ভরসাস্থল তারুণ্যশক্তি অন্ধকারের অতল গহব্বরে তলিয়ে যাচ্ছে। চলার পথে ঘোর আঁধার নেমে আসছে।
র্যাবের সূত্রমতে, দেশে বর্তমানে প্রায় ৬০ লাখ মাদকসেবী রয়েছে, সে মাদকসেবীদের শতকরা ৯১ ভাগই কিশোর ও তরুণ। এরমধ্যে ৪৫ দশমিক ৭৪ ভাগ বেকার, ৬৫ দশমিক ১ ভাগ আন্ডার গ্র্যাজুয়েট, ১৫ ভাগ উচ্চ শিক্ষার্থী, ২২ দশমিক ৬২ ভাগ ব্যবসায়ী, ১০ দশমিক ৬৭ ভাগ চাকরিজীবী, ৬ দশমিক ৬৭ ভাগ ছাত্র এবং ৬ দশমিক ৮০ ভাগ শ্রমিক। এর পেছনে ব্যয় হওয়া টাকার অংশও কম নয়। ৬০ লাখ মাদকসেবীর পেছনে খরচ করে ৯১,১২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। তন্মধ্যে কেবলমাত্র ফেনসিডিলই বছরে আমদানি হয় ১৭০০ কোটি টাকা; যা সীমান্ত পথে, যশোর, রাজশাহী, বেনাপোল, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা, কুমিল্লা, আখাউড়া ও সিলেট হয়ে দেশে ঢুকছে।
মাদকাসক্তির পেছনে বহু কারণের মধ্যে সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়। ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক অস্থিরতা। দারিদ্র্যতার কষাঘাত। বেকারত্বের নৈরাশ্যতা। মাদকদ্রব্যের সহজলভ্যতা। মাদক আগ্রাসন প্রতিরোধে মাদক পাচার ও ব্যবসায়ীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। মাদক পাচার রোধ ও মাদকের সহজপ্রাপ্যতা বন্ধ করতে হবে। আইন প্রয়োগের মাধ্যমে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কার্যকর করতে হবে। দেশের অভ্যন্তরে মাদকের উৎপাদন এবং পার্শ্ববর্তী দেশের মাদক চোরাচালানের সব পথ বন্ধ করতে হবে। অভিভাবক নিজ সন্তানদের প্রতি কঠোর যতœশীল হতে হবে। শিক্ষার সর্বস্তরে ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। কেবল রাষ্ট্রীয়ভাবে নয়, সামাজিক ও পারিবারিকভাবেও সচেতন হতে হবে। মাদকের বিরুদ্ধে পরিবার থেকে রাষ্ট্র পর্যায় সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। উপরিউক্ত কার্যকরী পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন করতে পারলে, আশা করি মাদকাসক্তি প্রতিরোধ করা সম্ভব।
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট ও শিক্ষক