মসজিদ জ্বলে গিয়েছে জানি, কিন্তু মন্দিরে কোনো আঁচ লাগতে দেব না

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

ফেব্রুয়ারি ২৯ ২০২০, ১৫:৩৫

ভারতের রাজধানী দিল্লির সংঘর্ষে হাহাকারের মধ্যেই সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল ছবি উঠে এল পুরনো মুস্তাফাবাদের বাবুনগরে। মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে শিব মন্দির রক্ষায় ত্রাতা হয়ে উঠলেন মুসলিমরাই।

আশেপাশের অঞ্চলে গোষ্ঠী সংঘর্ষ ভয়ঙ্কর রূপ নিলেও এই অঞ্চলের বাসিন্দারা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রুখে দিয়েছেন সংঘর্ষ। তুলে ধরেছেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য নজির।

দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত দেশবন্ধু কলেজের শিক্ষার্থী মুহাম্মদ হাসিন এমনই এক জন। বছর চব্বিশের এই শিক্ষার্থী জানান, ‘পরিস্থিতি যেমনই হোক, আমরা চেয়েছিলাম সব সময়েই ঐক্যবদ্ধ থাকতে। যাতে হিংস্র জনতার মোকাবেলা করা যায়। যেকোনো মূল্যে পারস্পরিক বিশ্বাস ও সৌভ্রাত্র অটুট রাখাই ছিল তাদের সংকল্প। সেজন্য মন্দির বাঁচাতে পালা করে পাহারা দিয়েছেন তারা। হাসিনের কথায়, ‘দুই ধর্মের মানুষই ছোট ছোট দল তৈরি করে সতর্ক থেকেছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় হাতে তুলে নিয়েছিলাম লাঠি।’

মন্দির থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে থাকেন কামরুদ্দিন। স্থানীয় চায়ের দোকানে খাবার সরবরাহ করে পেট চলে তার। কামরুদ্দিনের গলাতেও সম্প্রীতির সুর। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমরা একসঙ্গে রয়েছি। কখনও সংঘর্ষের কথা ভাবতেই পারিনি। এই কঠিন সময়ে মানবতা রক্ষা করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। মসজিদ জ্বলে গিয়েছে জানি, কিন্তু মন্দিরে কোনো আঁচ লাগতে দেব না’।

গত ৩০-৩৫ বছর ধরে মন্দিরের তত্ত্বাবধায়ক রীনা (৫২)। দৈনন্দিন পুজোর সমস্ত দায়িত্বই তার। এই বিপদের সময়ে তিনিও ধর্ম বিচার না করে আস্থা রেখেছেন ভিন্ন ধর্মের ভাইদের ওপর। তুলে দিয়েছেন মন্দিরের চাবি। রীনা বলেন, ‘ওরা তো নিজেদেরই লোক। গত কয়েক দিন মন্দিরে যেতে পারিনি। কিন্তু আমি নিশ্চিত ছিলাম, ওরা থাকতে মন্দিরের কোনো ক্ষতি হবে না। এতদিন একসঙ্গে রয়েছি। পরিস্থিতি খারাপ বলে কি সব বদলে যাবে? আমরা পৃথক ভাবে ধর্মাচরণ করলেও ঈশ্বর তো একই।’ তাই মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলেও নিজের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত নন ৫২ বছরের এই নারী। সূত্র: আনন্দবাজার