মজলিস-জাপা চুক্তি বৈচিত্র্যের মাঝে ঐক্যের খোঁজ- রশীদ জামিল
একুশে জার্নাল
আগস্ট ১২ ২০১৮, ১৭:১৩
মজলিস-জাপা চুক্তি
বৈচিত্র্যের মাঝে ঐক্যের খোঁজ
——————-রশীদ জামীল
ভাবছি কী বলা যায়!
জলকে ঘোলা করা, নাকি ঘোলাকে জল বানানো!
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস এবং এরশাদের জাতীয় পার্টির মধ্যে একটি রাজনৈতিক সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। মজলিসের দেয়া ছয়টি শর্ত বা দাবি মেনে নিয়ে যৌথ পথচলায় একমত হয়েছে জাপা। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের এই সিদ্ধান্ত কতটা সঠিক হল; মন্তব্য করবার জন্য আমরা আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে চাই।
স্মরণ করা যায়, ২০০৬ সালে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনকে সামনে রেখে দলটি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাথে পাঁচদফার ভিত্তিতে একটি নির্বাচনী সমঝোতা চুক্তি করেছিল। নির্বাচন পিছিয়ে যাওয়ার কিছুদিন পরেই আওয়ামীলীগ সেই চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ায়। তবে আওয়ামীলীগের মতো একটি ধর্মনিরপক্ষ দলকে ছয়টি ইসলামী শর্ত মানতে রাজি করিয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করাতে পারাকে এখনো দলটির অনেকে সাফল্য বলেই মনে করেন।
২.
জল ঘোলা হচ্ছে খুব। কেউ কেউ আবার ঘোলাকেই জল বানিয়ে বোতলে ভরে সাপ্লাই করছেন দেখলাম। কিছু আছেন পরের, কিছু আবার ঘরের। কারো কারো মত প্রকাশের ভাষা আবার জঘন্য থেকে আরো নীচ পর্যায়ের। বাবা তোমার যাকে ভালো লাগবে, তাঁকে নবী বানিয়ে ছাড়বা, যাকে তোমার ভালো লাগবে না, তাঁর সমালোচনা করবা ইতরামী ভাষায়; এটা কেনো?
বেশ কিছুদিন আগে একবার বলেছিলাম, ফেইসবুক আমাদেরকে একটি বেয়াদব প্রজন্ম উপহার দিচ্ছে। বড়তে ছোটতে ব্যবধান থাকতে দিচ্ছে না। মানষিকতার পরিবর্তন ঘটানো না গেলে তো সমস্যা।
৩.
আজকাল বাঁশ থেকে কঞ্চিগুলোই বরং বেশি মোটা হয়ে গেছে। ইচড়েপাঁকা প্রজন্ম ফেইসবুকের কল্যানে তাদের বাবার উস্তাদতুল্যদের পর্যন্ত রাজনৈতিক জ্ঞান দেয়। কেউ কেউ আবার কাঁচের ঘরের ভেতরে বসে বাইরের দিকে ঢিল ছুড়ে। বসে বসে দেখি। দেখি আর হাসি। হাসি নাকি হার্টের জন্য ভালো; ডাক্তাররা বলে থাকেন।
৪.
এই চুক্তিতে ঘিরে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নেতাকর্মীগণ শরীরে এক ধরনের প্রশান্তি অনুভব করবেন, অন্যান্য ইসলামী দলের নেতাকর্মীদের শরীরে হালকা একটু জ্বালাপোড়া করবে- জানা কথা। বলার তো কিছু নেই। বাংলাদেশের ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলো গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে এসে নিজেরাই চলমান রাজনীতির মতো হয়ে গেল! রাজনীতিটাকে নিজেদের মতো করতে পারল না। যদি পারত, আগামীর ইতিহাস হয়ত অন্যরকম লেখা হত।
৫.
কথা অন্যদিন বলা যাবে।
আজ তাদের কথা শুনি…
একজন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা যুবায়ের আহমদ আনসারী, অপরজন একই দলের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক। দু’জনেই একমত হলেন চুক্তি যথা নিয়মেই হয়েছে।
তাহলে ভিন্নমত কেনো?
জানতে চাইলাম মাওলানা মামুনুল হকের কাছে।
📞
_ মামুন ভাই! জাপার সাথে চুক্তি নিয়ে কিছু কথা বলার ছিল।
-এটা নিয়ে কথা কম বলাই ভালো মনেহয়।
– কিন্তু কথা তো থেমে নেই। ছোট্ট করে দুটি কথা বলে ফেলি?
-আচ্ছা।
-আপনার দল জাপার সাথে চুক্তি করল অথচ আপনি সাথে নেই। অর্থাৎ আপনি ভিন্ন বক্তব্য দিচ্ছেন। বলছেন, এতেকরে দলটি ইমেজ সংকটে পড়বে…
-দেখুন, খেলাফত মজলিস সাংগঠনিক নিয়মে এবং যথা নিয়মেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমি দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দাঁড়াইনি বা সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জও করিনি। আমি আমার ব্যক্তিগত অবস্থান থেকে কথা বলছি।
-আপনাকে এক ইন্টারভিউতে বলতে দেখলাম, আপনি বলছেন, ‘আমি খেলাফত মজলিসে সক্রিয় নই’। একটি দলের যুগ্ন মহাসচিব যদি বলেন তিনি সক্রিয় নন’ তাহলে কর্মীরা কী করবে? লক্ষ করলাম আপনার এমন মন্তব্যে আপনার দলের অনেকেই বিব্রত এবং কিছুটা বিভ্রান্তও।
-বিভ্রান্তির তো কিছু নেই। আমি পরিস্কার বলেছি, আমি বাংলাদশ যুব মজলিসকে রিপ্রেজেন্ট করি। যুব মজলিস বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সহযোগী কিন্তু স্বতন্ত্র সংগঠন হিশেবে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসকে সহায়তা করে যাচ্ছে।
-‘কিন্তু সক্রিয় নই’ কথাটা…?
-একটা দলের সবাই সমান সক্রিয় থাকে না, আমি মূলত যুব মজলিসের কাজেই সময় দেই ৷
.. নো কমেন্ট।
📞
ফোন দিলাম লন্ডনে অবস্থানরত মাওলানা যুবায়ের আহমদ আনসারীকে।
-এমপি সাব, কেমন আছেন?
-এহনই এমপি বানাইয়া লাইতাছইন?
-না, মানে, প্র্যাকটিস করছি আর কি। আচ্ছা, আপনারা জাতীয় পার্টির সাথে হুট করে যে চুক্তি করে বসনেন…
-হুট করে করা হয় নাই। দীর্ঘ আলাপ আলোচনার পর দলীয় ফোরামে সিদ্ধান্ত নিয়াই এটা করা হয়েছে।
-কিন্তু আপনাদের মামুন সাহেব তো ভিন্ন অবস্থানের কথা বলছেন। এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, এই চুক্তির ফলে দল ইমেজ সংকটে পড়বে।
-আমি তো মনে করি এতে করে দলের ইমেজ আরো বৃদ্ধি পাবে।
-এটা কেনো মনে হচ্ছে আপনার?
-কারণ, অন্যান্য দল বিভিন্ন জোটের সাথে আছে এবং ইসলামের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোনো ধরনের শর্ত ছাড়াই। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস তো ইসলামের স্বাতন্ত্রিকতা রক্ষা করে এবং সকল মুসলমানের ছয়টি অরাজনৈতিক ঈমানি দাবি পূরণের শর্তেই চুক্তি করেছে।
-আপনার কি মনেহয় জাতীয় পার্টি সেটা করতে পারবে? তারা নিজেরাই যেখানে এখনো আওয়ামীলীগের ছায়া হয়ে আছে, সেখানে তাদের পক্ষে কতটা কী করার ক্ষমতা আছে?
-আমরা বলেছি না জাতীয় পার্টি সরকার গঠন করে ফেলতে পারবে। তবে আমরা যদি জোটবদ্ধ হয়ে আগামী নির্বাচনে কাজ করি, সংসদে যদি আমাদেরও কিছু প্রতিনিধিত্ব থাকে, তাহলে জাতীয় পার্টিকে নিয়ে আগামী সংসদে দেন দরবার করে সরকারকে দাবিগুলো মানতে শক্ত ভূমিকা রাখা যাবে।
– মামুনুল হক সাহেবের অবস্থান নিয়ে কিছু বলবেন?
-তাঁকে নিয়ে কিছু বলার তো নাই। তিনি আমাদের অন্যতম একজন যুগ্নমহাসচিব। তিনি দলের সিদ্ধান্তের সাথেই আছেন। ব্যক্তি হিশাবে তাঁর ব্যক্তিগত ভিন্নমত থাকতেই পারে। দলের সব সিদ্ধান্ত সবসময় সকলের পছন্দ নাও হতে পারে। জাপার সাথে এই চুক্তির ব্যাপারে দলীয় ফোরামের সিদ্ধান্ত গ্রহণের সেই মিটিং এ মামুন সাহেবও ছিলেন। তিনি তাঁর বক্তব্য তুলে ধরেছেন। বাকিরাও যার যার মতামত দিয়েছেন। আর আপনি তো জানেনই, যে কোনো মিটিং-এর সিদ্ধান্ত অধিকাংশের মতামতের ভিত্তিতেই গৃহীত হয়ে থাকে।
-সেভাবেই হয়েছিল?
-জি, ২১ জনের মধ্যে ১৯ জনের মতামতের আলোকেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
-এর আগে একবার আপনারা আওয়ামীলীগের সাথে নির্বাচনী জোট করেছিলেন। যদিও সেটা স্থায়ী হয়নি। এবার করলেন এরশাদের জাতীয় পার্টির সাথে। বিএনপির সাথেও তো করতে পারতেন। বিএনপি তো ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসের কথা বলে।
-বিএনপির সামনেও আমরা আমাদের দাবিগুলো রেখেছিলাম। কিন্তু তারা এর একটিও মানতে রাজি হয়নি। ইসলামী রাজনীতি মানে তো রাজনীতির জন্য রাজনীতি করা নয়। ইসলামের মৌলিক ব্যাপার সেপারেও যদি কারো অনিহা থাকে অথবা মেনে নিতে চায় না, তাহলে তাদের সাথে জোট করব কিসের স্বার্থে?
… নো কমেন্ট এগেইন।
টাইম উইল সে এভরিথিং।