ভুল ব্যাখ্যার জন্য ক্ষমা চাইলেন মাওলানা হাফিজুর রহমান সিদ্দিকি

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

জুলাই ১৪ ২০১৯, ১৪:১৯

কুরআনের আয়াতের অপব্যাখ্যা করেছেন দাবি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ইসলামিস্টদের মধ্যে ভাইরাল হওয়া দেশের আলোচিত বক্তা মাওলানা হাফিজুর রহমান সিদ্দিকের একটি বক্তব্যের ব্যাপারে তিনি ক্ষমা চেয়ে পূনরায় বক্তব্য দিয়েছেন।

গতকাল শনিবার (১৩ই জুলাই) বাঁশখালী দারুল কারীম মাদরাসার হিফজ সমাপনী ছাত্রদের পাগড়ী প্রদান উপলক্ষে বাঁশখালী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ময়দানে আয়োজিত ওয়াজ মাহফিলে প্রধান বক্তার আলোচনায় তিনি তার পূর্বের বক্তব্যের ব্যাপারে ক্ষমা চেয়ে আলোচনা করেন।

তিনি বলেন, “আমি এক বক্তব্যে পবিত্র কুরআনের সুরা তাহরিমের এক আয়াতের ব্যাখ্যায় তাওবাতান নাসূহা সম্পর্কে যা বলেছিলাম, আসলে ব্যাপারটা এমন না। নাসূহা সম্পর্কে মাওলানা জালাল উদ্দিন রূমী রহ. মাআরেফে মসনবীতে একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন কিন্তু সেই ঘটনার সাথে আয়াতের কোনো সম্পর্ক নেই। সেটা ভিন্ন ঘটনা। কুরআন ও হাদিসে নাসূহা সম্পর্কে কোনো ঘটনা উল্ল্যেখ নেই বরং কুরআনে বর্ণিত সুরা তাহরিমের ৮ নং আয়াতের তাওবাতান নাসূহা অর্থ হলো খাটি তওবা করা” আমার বক্তব্যের ব্যাপারে আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করুক সাথে সাথে সকলকে ক্ষমা করুক।

তিনি তার বক্তব্যে আরও বলেন, ছিদ্রান্বেষণকারী লোকের অভাব নেই, ভুল ধরার লোকেরও অভাব নেই কিন্তু ভুল ধরায়া দেওয়ার লোকের অনেক অভাব। আল্লাহ তায়ালা সকলকে ক্ষমা করুক এবং কুরআন হাদিস মত আলোচনা করার তৌফিক দান করুক।

তবে মাওলানা হাফিজুর রহমান সিদ্দিকের বক্তব্যের ব্যাপারে বা তার ব্যাপারে তৈরি হওয়া বিভিন্ন বিতর্কের ব্যাপারে তিনি আরও গঠনমূলক ও যৌক্তিক সমাধান দেবেন বলে আশা করেন অনেকে। মাহফিলে মাহফিলে সবকিছুর সমাধান দেওয়ার চেষ্টা না করে আরও বুদ্ধিভিত্তিক ও পরামর্শমূলক কাজ করবেন বলে আশাবাদ ব্যাক্ত করেন তার শুভাকাঙ্খিরা।

প্রসঙ্গত : পবিত্র কুরআনের সুরা তাহরিমের ৮ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘তূবূ ইলাল্লাহি তাওবাতান নাসূহা’। সেই ‘নাসূহা’ শব্দকে একজন ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে বয়ান করায় শুরু হয় সোস্যাল মিডিয়ায়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি নিজের বক্ত্যব্যের জন্য ক্ষমা চাইলেন।

কোরআনে উল্লেখিত ‘তাওবাতুন নাসূহা’এর প্রকৃত ব্যখ্যা

নাসূহা (نَصُوحًا)
এটি نَصَح থেকে مبالغة এর সিগাহ। অর্থাৎ জোরদান ও প্রগাঢ়তার অর্থবোধক বিশেষ্য।
যার অর্থ, খাঁটি, বিশুদ্ধ, আন্তরিক, বিশ্বস্ত, সৎ।
অভিধানে এসেছে, كل شيءٍ خَلَصَ ، فقد نَصَحَ “প্রতিটি খাঁটি বস্তুই নাসুহ।
কুরআন কারিমে মহান আল্লাহ তাআলা সূরা তাহরিমের ৮ নং আয়াতে শব্দটি ব্যবহার করেছেন তাওবার সিফাত বা বৈশিষ্ট্য হিসেবে। বলেছেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا تُوبُوا إِلَى اللَّهِ تَوْبَةً نَّصُوحًا
“হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা করো-খাঁটি ও আন্তরিক তাওবা।”
খাঁটি ও আন্তরিক তাওবা (تَوْبَةً نَّصُوحًا) কাকে বলে, অজস্র হাদিসে তার ব্যাখ্যা এসেছে যে, কোনো গুনাহ থেকে অনুতপ্ত হৃদয়ে এ তাওবা করা যে, আর কখনই সেই গুনাহে লিপ্ত হব না।
যেমন, তাফসিরে ইবনে কাসিরের মাঝে এসেছে,
قال العلماء : التوبة النصوح هو أن يقلع عن الذنب في الحاضر ، ويندم على ما سلف منه في الماضي ، ويعزم على ألا يفعل في المستقبل
‘তাওবায়ে নাসুহা’ বলা হয়, ব্যক্তি তৎক্ষণাৎ গুনাহ থেকে ফিরে আসবে। অতীতে যে পাপ করেছে, তার ওপর অনুশোচনা বোধ করবে এবং আগামীতে এ পাপে না জড়ানোর দৃঢ় প্রত্যয় নেবে।’ [তাফসিরে ইবনে কাসির]
আমি তাফসিরে বাগাভি ও তাফসিরে ইবনে কাসির থেকে কয়েকটি বর্ণনা এখানে তুলে ধরছি,
১.
عن النعمان بن بشير، قال: سُئل عمر عن التوبة النصوح، قال: التوبة النصوح: أن يتوب الرجل من العمل السيئ، ثم لا يعود إليه أبدًا.
২.
عن سماك بن حرب، قال: سمعت النعمان بن بشير يخطب، قال: سمعت عمر بن الخطاب رضي الله عنه يقول: ( يَا أيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا تُوبُوا إِلَى اللَّهِ تَوْبَةً نَصُوحًا ) قال: يذنب الذنب ثم لا يرجع فيه.
৩.
عن أَبي الأحوص، عن عبد الله ( تَوْبَةً نَصُوحًا ) قال: يتوب ثم لا يعود.
৪.
عن ابن عباس، قوله: ( يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا تُوبُوا إِلَى اللَّهِ تَوْبَةً نَصُوحًا ) أن لا يعود صاحبها لذلك الذنب الذي يتوب منه، ويقال: توبته أن لا يرجع إلى ذنب تركه.
৫.
حدثني الحارث، قال: ثني الحسن، قال: ثنا ورقاء جميعًا عن ابن أَبي نجيح، عن مجاهد، قوله: ( تَوْبَةً نَصُوحًا ) قال: يستغفرون ثم لا يعودون.
৬.
عن الضحاك، في قوله: ( تَوْبَةً نَصُوحًا ) قال: النصوح. أن تحول عن الذنب ثم لا تعود له أبدًا.
৭.
عن قتادة ( يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا تُوبُوا إِلَى اللَّهِ تَوْبَةً نَصُوحًا ) قال: هي الصادقة الناصحة.
৮.
قال ابن زيد، في قول الله.( تُوبُوا إِلَى اللَّهِ تَوْبَةً نَصُوحًا ) قال: التوبة النصوح الصادقة، يعلم أنها صدق ندامة على خطيئته، وحبّ الرجوع إلى طاعته، فهذا النصوح.
৯. তাফসিরে ইবনে কাসিরের মাঝে এসেছে,
يا أيها الذين آمنوا توبوا إلى الله توبة نصوحا ) أي : توبة صادقة جازمة ، تمحو ما قبلها من السيئات ، وتلم شعث التائب ، وتجمعه ، وتكفه عما كان يتعاطاه من الدناءات .
১০.
عن عبد الله بن مسعود ، قال : قال رسول الله – صلى الله عليه وسلم – : ” التوبة من الذنب أن يتوب منه ، ثم لا يعود فيه ”
মুফতি মুহাম্মদ শফি রহ. ‘মাআরিফুল কুরআন’ এর মাঝে সংক্ষেপে চমৎকার ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি লিখেছেন, نصوح শব্দটি نصحة থেকে উদ্ভূত। যার অর্থ খাঁটি করা। (تَوْبَةً نَّصُوحًا) তাওবায়ে নাসুহা’ এর অর্থ, এমন তাওবা, যা রিয়া ও নাম-যশ থেকে খাঁটি। কেবল আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জন ও আযাবের ভয়ে ভীত হয়ে এবং গুনাহের কারণে অনুতপ্ত হয়ে গুনাহ পরিত্যাগ করা। [দেখুন, মাআরিফুল কুরআন, বাংলা সংস্করণ, পৃষ্ঠা : ১৩৮৮]।