ভাষার শুদ্ধচর্চা চাই

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

ফেব্রুয়ারি ২০ ২০১৯, ১৮:৪৯

হাবীব আনওয়ারভাষা আল্লাহর এক নিয়ামত।আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক জাতি-গোষ্ঠীকে স্বতন্ত্র ভাষা দিয়ে পাঠিয়েছেন। পৃথিবীতে আল্লাহ অসংখ্য ভাষা-ভাষীর মানুষ সৃষ্টি করেছেন। যাতে করে একে অপরের সাথে পরিচিত হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা কেন্দ্র এসআইএলের তথ্যমতে, গোটা দুনিয়া জুড়ে প্রায় সাত হাজার ভাষা রয়েছে। প্রত্যেক জাতি তার মায়ের ভাষাকে ভালোবাসে। মাতৃভাষা ছিনিয়ে নিয়ে জোরপূর্বক অন্য ভাষা চাপিয়ে দিক এটা কেউ মানতে পারে না। কারণ, ভাষার প্রতি সবারই এক অদ্ভুত টান আছে! যা মানুষকে ভাষা রক্ষার্থে অনুপ্ররণা দেয়। কেউ ভাষাকে নিয়ে ব্যঙ্গ করুক এটা বরদাশত করতে পারে না।যার জ্বলন্ত প্রমাণ ১৯৫২ ভাষা আন্দোলন। ইতিহাসের এক মাইলফলক হয়ে আছে। বাঙ্গালীরাই একমাত্র জাতি যারা ভাষার জন্য জীবন দিয়েছে!
যার শুরুটা হয়েছিল এভাবে:
১৯৫২সালের একুশে ফেব্রুয়ারি।বাংলা ৮ই ফাল্গুন। নূরুল আমিন সরকার ১৪৪ ধারা জারি করেছেন।ঢাকায় শুরু হয়েছে পূর্ববঙ্গ ব্যবস্থাপক পরিষদের বাজেট অধিবেশন।বাজেটে উপস্থিত হয়েছেন মাও.আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ।বৈঠক চলছে, হঠাৎ ভেসে এলো গুলির শব্দ! চমকে উঠলেন মাওলানা। দ্রুত বের হয়ে মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে দেখলেন হ্নদয়বিদারক দৃশ্য! জালিমের বুলেটের আঘাতে ঝাঁঝরা হয়ে গেছে রফিক,জব্বার,বরকতসহ ভাষা প্রেমী কয়েকজন তরুণের বুক! আহ, কী করুণ দৃশ্য!!
গর্জে উঠলেন মাওলানা।তীব্র প্রতিবাদ জানালেন। পাকিস্তানের গণপরিষদের অন্যতম ভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য করলেন।
অনেক ত্যাগ আর রক্তের বিনিময়ে অবশেষে আমরা ফিরে পেলাম আমাদের অধিকার।আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পেলো ভাষা দিবস। বিশ্বের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শিখলাম। কিন্তু আজ! সেই গৌরব আমরা ধরে রাখতে পারিনি। রক্ত দিয়ে কেনা মায়ের ভাষাকে আজ বিকৃত করা হচ্ছে! আধুনিকতার নামে ভাষাকে করা হচ্ছে আহত, ক্ষত-বিক্ষত!! নিজেকে শিক্ষিত পরিচয় দিতে গিয়ে বাংলার সাথে ইংরেজি মিশিয়ে কথা বলাটা এখন ফ্যাশন হয়েছে। বিশেষ করে টিভিতে অনুষ্ঠান উপস্থাপনা ও এফ.এম রেডিও গুলোতে ভাষা ব্যঙ্গ করা হচ্ছে মারাত্মক ভাবে।
শুধু কি ভাষা? ভাষা শহীদদেরও করা হচ্ছে অবমাননা! ভাষা শহীদদের স্মরণ করা হচ্ছে নাচ-গান আর ঢোল পিটিয়ে!! লাল সবুজের পতাকা গায়ে জড়িয়ে মেতে উঠছে হিন্দিগানে। বিজ্ঞাপন,ফেস্টুন, ব্যানারসহ সবখানে বাংলার পরিবর্তে স্থান করে নিচ্ছে ভিনদেশি ভাষা।স্টার জলসা, জি বাংলাসহ ভারতীয় সিরিয়ালে প্রভাবিত তরুণ প্রজন্মের হিন্দিপ্রীতি সচেতন মহলকে ভাবিয়ে তুলছে!
তাই সময় এখনই ঘুরে দাঁড়িয়ে ভাষাকে তার হারানো সম্মান দেওয়ার। ভাষা মানুষকে দেশপ্রেমের দিকে উদ্বুদ্ধ করে।দেশকে বাঁচাতে হলে আগে ভাষাকে ভালোবাসতে হবে। ভাষাকে মূল্যায়ণ করতে হবে। কারণ, ভাষাই পারে মানুষকে তার তার আদর্শের দিকে ফিরে নিতে।
তাই আমাদের ভাষার শুদ্ধ চর্চা করতে হবে!
করতে হবে সাহিত্য চর্চা।