ভালোলাগার আশ্রয়স্থল জবি আইন বিভাগ ফিরে পাক পূর্ণতা
একুশে জার্নাল ডটকম
সেপ্টেম্বর ২৬ ২০২০, ১৪:২৪
অনন্য প্রতীক রাউত: জগন্নাথে জীবনযুদ্ধ শুরু করার পর থেকেই ভালোবাসা তথা ভালোলাগার এক পরিপূর্ণ আশ্রয়স্থলে পরিনত হয়েছিল আইন বিভাগ। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রতিটা শিক্ষার্থীর কাছে তাঁর নিজ বিভাগ সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা একটু অন্য মাত্রায় থাকে। আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা সেখানে যেমন ব্যতিক্রম নয় তেমনী স্রোতে গা ভাসানোর মতো ও নয়৷ তাঁরা ভিন্নতর। দিনশেষে নানান জটিলতার পরেও ভালোবাসার বিভাগ টার স্বার্থে সবাই মিলেমিশে একাকার৷ যেন এক ছাতার নিচে সৃষ্টি হয় প্রাণের বন্ধণ, সমৃদ্ধ হয় জীবনবোধ।
পহেলা জানুয়ারী ২০২০ এ আইন বিভাগের সন্মানিত শিক্ষক ড. শহিদুল ইসলাম স্যারের ক্লাসের মধ্য দিয়ে যাত্রা ঘটে আইন অঙ্গনে আমাদের। তখনকার অনুভূতি ছিলো নান্দনিকতার স্পর্শে পরিপূর্ণ। স্যারের নানান জটিল ইংরেজি কথা না বোঝা সত্ত্বেও একফোটা বিরক্তি ভাব মনে আসে নাই এই ভেবে যে পেয়েছি একটি পরিবার, যেখানে তৈরী হবে বা পূর্ণতা পাবে আইনকেন্দ্রিক স্বপ্নগুলো। এরপর সবার সাথে ধীরে ধীরে গড়ে উঠে পরিচয়। নানা প্রান্ত বা নানা কলেজ থেকে আসা সহপাঠীরা। কেউ টেকনাফ তো কেউ তেতুলিয়া, কেউ শরীয়তপুর, মাদারীপুর বা চাঁদপুর কেউবা সেই পাহাড়ি পার্বত্য রূপ লাবণ্য ঘেরা খাগড়াছড়ি, বান্দরবান থেকে কিংবা সীমান্তবর্তী ঠাকুরগাঁও বা দিনাজপুর থেকে। ছিলো না আগের পরিচয় বা চেনা-জানা তবুও এক নিমিষে সবাই মিলেমিশে একাকার এক আইন বিভাগের বা পরিবারের ছায়াতলে একটুখানি তৃপ্তির খোঁজে।
সম্পর্কের মেরুকরণে যারা এখন শুধুই বন্ধু নয় বরং নিজের ভাই-বোনের অবস্থান কেড়ে নিয়েছে হৃদয়ের অন্তঃস্থলে। ক্লাস, ক্লাসের ফাঁকে সেমিনার আড্ডা কিংবা আইন বিভাগের নেমপ্লেটের সামনে ছবি থাকার পরেও বারবার জড়ো হয়ে সেলফি তোলাতেও আসতো না একঘেয়ামি। চলতো ক্লাস রুমে বসে অবিরাম গানের আসর (“ভালো আছি, ভালো থেকো আকাশের ঠিকানায় চিঠি লেখো”- গানটি বহুবার একসাথে গাওয়া হয়েছে) ৯১৫, ১৬ কিংবা ১৭ নম্বর রুম থেকে বের হয়ে চোখে পড়া ভাইয়া/আপুদের সাথে সম্পর্ক সৃষ্টি বা কাছের যাওয়ার পায়তারা করতাম দলগত ভাবে। কাছে যাবার উদ্দেশ্য থাকতো ট্রিট নেয়া তবে আমাদের অজান্তেই সামান্য সেসব কিছু মুহূর্ত সৃষ্টি করে দিয়েছে জীবনের সেরা বন্ধনের। যা অব্যাহত থাকবে জীবনের শেষদিন অব্দি এ আমাদের চির প্রত্যাশা। সৌভাগ্যক্রমে কিংবা বিভাগীয় সৌন্দর্যের কারনেই হয়তো শিকার হতে হয়নি “র্যাগ” নামক অমানবিক নিষ্ঠুরতার। বরং বুকে টেনে নিয়ে অগ্রজরা শিখিয়েছেন কোনটা করা উচিত, কোনটা নয় অথবা পূর্বের কলেজ জীবনের সাথে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পার্থক্য আসলে কোথায়।
অগ্রজ বা সন্মানিত শিক্ষকরা যেভাবে ভালোবাসায় বা আদর-শাসনে টেনে নিয়েছেন কাছে তা একদিকে যেমন ছিলো কল্পনাতীত অন্যদিকে নতুনত্বের সৌন্দময় ছোঁয়া। এমনকি, জীবনের প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে পেশাগত জীবনে পদার্পণ করা অগ্রজরাও ছুটে আসেন নিজেদের আশ্রয়স্থল আইন বিভাগ। মেতে উঠেন স্মৃতিচারনে, শেখান জীবনের বাস্তবতাকে। অনুজদের যেকোন প্রয়োজনে ছুটে আসেন নিজেদের সর্বোচ্চ টা দিয়ে। বৈশ্বিক মহামারী করোনায় যখন বিপর্যস্ত পুরো পৃথিবী, কোলাহলময় আইন বিভাগ যখন শূন্যতায় নিস্তব্ধ, অনেকে যখন নানা সংকটে চিন্তায় মগ্ন (বিশেষত আর্থিক) তখন অগ্রজরা ছুটে এসেছেন মানবিকতার ভরসাময় হাত নিয়ে। সমস্যার ধরন অনুযায়ী বন্টন করেছেন প্রয়োজনীয় উপহার।
মাত্র এক যুগের অল্প সময়ে আইন বিভাগে যে পারিবারিক বন্ধন সৃষ্টি হয়েছে সবার মধ্যে তা সত্যিকার ভাবেই দৃষ্টান্তমূলক নজির। পাশাপাশি মেধা, দক্ষতায় আইন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে গিয়েছে সবার সাথে সমান তালে শক্ত ভাবে। যার নেপথ্যে কারিগর বাংলাদেশের আইন অঙ্গনের উজ্জ্বল নক্ষত্র শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক ড.সরকার আলী আক্কাস স্যার (চেয়ারম্যান, আইন বিভাগ এবং ডিন, আইন অনুষদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়)।
মাত্র কয়েক মাসেই হৃদয় মণিকোঠায় এক সুদৃঢ় অবস্থান করে নিয়েছে আইন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। নিঃসন্দেহে এখন অব্দি যা সারা জীবনের জন্য সেরা অর্জন। কোলাহলময় সেই প্রাণের স্পন্দনে আইন বিভাগ কবে ফিরবে আপন মহিমায় সে আশায় দিন গুনছি অবিরাম। ফিরে আসুক আবার জীবনের সোনালী সময়গুলো, সৃষ্টি হোক গভীর ভাতৃত্ব বোধ। পৃথিবী হোক সুস্থ, বাংলাদেশের আইন অঙ্গন হোক আমাদের হাত ধরে আলোকিত।
যেন প্রতিটি মানুষ পায় ন্যায় বিচারের ছোঁয়া, কাউকে যেন আটকে থাকতে না হয় আইনের কঠিন বেড়াজালে অন্যায়ভাবে। দেখা হবে সুস্থ পৃথিবীর কোন এক রৌদ্রজ্বল কিংবা বৃষ্টিস্নাত দিনে এ মোদের হৃদয়ের চির আকাঙ্খা। ভালোবাসি আইন বিভাগ, ভালোবাসি তোমার সেই কোলাহল ময় চিরচেনা রূপ লাবণ্যকে। সমৃদ্ধ হোক আইন অঙ্গনের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের অগ্রযাত্রা, শুভকামনা সকলের তরে।