ভারত রাষ্ট্রের আঁকা গণহত্যার ছক ভারত রাষ্ট্রের জন্যই হুমকি
একুশে জার্নাল ডটকম
ফেব্রুয়ারি ২৯ ২০২০, ১৪:৪২

•আরজু আহমাদ•
দিল্লিতে এখনো অবধি প্রাণ গেছে ৩৯ জনের। অবস্থাটা ভীষণই মন্দ। তার উপর একের পর এক বিজেপি নেতার উস্কানিমূলক বক্তব্য আগুনে যেন ঘি ঢেলে চলেছে।
উত্তরপূর্ব দিল্লীর মুস্তাফাবাদের ছোট্ট হাসপাতাল আল হিন্দে যখন বিশ জন আহত অবস্থায় বিনা চিকিৎসায় প্রায় মৃত্যুপথযাত্রী। তখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বউদ্যোগে বারবার পুলিশকে অনুরোধ করে যেন পুলিশ উন্নত চিকিৎসার জন্য আহত মুসলমানদের সাহায্য করে।
কিন্তু পুলিশ এতে সাড়া দিচ্ছিল না। নেহাত রোগীদের জীবন রক্ষার্থে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রাত একটায় বিচারপতি মুড়ালিধরের কাছে রিট আবেদন নিয়ে যায়।
তাৎক্ষণিক তিনি নিজের জুনিয়র বিচারপতি ভাম্বানিকে নিয়ে দ্বৈত বেঞ্চ গঠন করে পুলিশকে নির্দেশ দেন পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করতে। পুলিশ আদালতের আদেশের পর এ কাজ করতে বাধ্য হয়।
বুধবার এই সাম্প্রদায়িক সংঘাত প্রসঙ্গে তিনি আরও দুটি রিট আবেদন শুনেন। আর মোট তিনটি শুনানিকালেই তিনি সরকার ও পুলিশকে ব্যার্থতার জন্য দায়ী করে পর্যবেক্ষণ দেন।
উসকানিদাতা বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে এফআইআর না নেওয়ায় পুলিশ ও এটর্নি জেনারেলের দফতরকে কড়া ভাষায় নিন্দা করেন এবং দ্রুত এফআইআর গ্রহণ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন।
তৃতীয় রিট আবেদনের শুনানি শেষে তিনি সরকারকে নির্দেশ দেন, ‘সংঘাতে আহতদের চিকিৎসা, উদ্বাস্তুদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ এবং কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা করতে।’
প্রত্যেকটা শুনানির বিরুদ্ধে পোক্ত অবস্থান ছিল সরকারের পক্ষে শুনানি করা সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তার। কিন্তু বিচারপতি মুরালিধর তাতে একমত না হয়ে দ্রুততার সঙ্গে রিট পিটিশন আমলে নিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে তড়িৎ নির্দেশ দিয়েছেন।
বিস্ময়করভাবেই সেই দিন রাতেই ভারত সরকার তাকে দিল্লি হাইকোর্ট থেকে ইমিডিয়েট বদলির নির্দেশ দেয়। এইরকম তাৎক্ষণিক আদেশ কেবল নজিরবিহীনই নয় বরং তা শাস্তিমূলক বদলির ক্ষেত্রেও তা বিরল।
আহতদের চিকিৎসায় সরকারের অবহেলা, হিংসাত্মক কর্মকাণ্ড নিরসনে পুলিশের গড়িমসি।এমনকি খোদ সাংবিধানিক অধিকারের পক্ষে শুনানি গ্রহণ করে জনগণের সংবিধান প্রদত্ত অধিকারের প্রশ্নে রায় দিয়ে নিজের সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করা বিচারপতির বিরুদ্ধে এই ‘শাস্তিমূলক’ পদক্ষেপ প্রমাণ করে ভারতে আজ যা হচ্ছে তা রাষ্ট্রের শাসনযন্ত্রেরই আঁকা ছক।
ফলত একথা বলতে আপত্তি নেই যে এটা কোনও দাঙ্গা নয় বরং জাতিগত নিধনের আয়োজন (Ethnic cleansing) অর্থাৎ সে বিচারে যা হচ্ছে তাতে এটাকে গণহত্যার প্রস্তুতি বললে অত্যুক্তি হবে না।
বিজেপি সরকারের এই জাতিবিদ্বেষী প্রকল্প ভারত রাষ্ট্রের জন্যই হুমকির। ভারতের অস্তিত্ব সেদেশের ধর্মীয়, ভাষাগত ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ভালো থাকার উপরই নির্ভরশীল। এই ব্যাপারটা যতদ্রুত ভারতীয়রা বুঝবে ততই তাদের জন্য মঙ্গল।
যা হোক, ভারতের মুসলমানদের এই দুঃসময়ে আমরাও সমানভাবেই ব্যথিত। আমাদের পরস্পরের রয়েছে পরম্পরাগত আত্মার রিশতা। অর্ধ সহস্র বছরের অধিককাল একই রাষ্ট্রযন্ত্র ভাগ করে নেওয়া আর দুইশো বছর একসঙ্গে সংগ্রাম ও নির্যাতিত হওয়ার স্মৃতির সমান অংশীদার আমরা।
আজ তাদের এই দুঃখবোধে আমাদের দুঃখভাগের আকাঙ্ক্ষাকে যেন কেউ বিপথে চালিত করতে না পারে তা আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। একইসাথে যারা এই সুযোগে বাংলাদেশেও অন্যায় উত্তেজনা ও সাম্প্রদায়িকতা ছড়ানোর চেষ্টা করছেন তাদের ব্যাপারে আমাদের সাবধান হতে হবে।
মনে রাখতে হবে, এরা আদতে দিল্লীর সেই সাম্প্রদায়িক শক্তির লোকাল এজেন্ট। তারা এখানের অস্থিতিশীলতা তৈরি করে ভারতের হত্যাযজ্ঞের লেজিটিমেসি দিতে চায়।
যাক, আমরা তো দাবি করি- আমরা ভারতের এই খুনী হিন্দুত্ববাদীদেরকে ঘৃণা করি। অথচ সেই ঘৃণার প্রকাশ আমাদের কর্মের মধ্যে বিন্দুমাত্র নেই। একইসাথে ভারতীয় পণ্য কেনার মধ্য দিয়ে জুলুমের অর্থনীতি চাঙ্গা করে এই রসদ যোগান দেব- আবার বলব ঘৃণা করি, তা তো হবে না।
আমরা ভারতের পণ্য কিনি, হাতে ক’টা টাকা হলেই দলে দলে ভারতে বেড়াতে গিয়ে ওদের ইকোনমি চাঙ্গা করে দিই- এগুলোর জন্যও জবাবদিহি করতে হবে আমাদের রব্বের কাছে ।
আমাদের ভাইয়েরা ভালো থাকুক। শামিল থাকুক আমাদের শেষ রাত্রির প্রার্থনায়, প্রতিটি দোয়ায়।