ভারতে মুসলমানদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বায়তুল মোকাররামে বিক্ষোভ
একুশে জার্নাল ডটকম
ফেব্রুয়ারি ২৮ ২০২০, ১৫:২৩
ভারতের রাজধানী দিল্লিতে মুসলমানদের ওপর হিন্দুত্ববাদীদের চালানো হত্যা ও নির্যাতনের প্রতিবাদে আজ শুক্রবার জুমার নামাজের পর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে যৌথভাবে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে সমমনা কয়েকটি ইসলামিক দল।
সমমনা দলগুলো হচ্ছে- জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, ইসলামী ঐক্য আন্দোলন এবং বাংলাদেশ মুসলিম লীগ।
সমাবেশ শেষে তারা মিছিল বের করেন। এসময় মুসল্লিরা মোদী বিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেন। এর আগে বায়তুল মোকাররম মসজিদের আশপাশের এলাকায় ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। মসজিদে বিপুল সংখ্যক মুসল্লীর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। নামাজ শেষে তাদের অনেকে বিক্ষোভে যোগ দেন।
সমাবেশে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ’র মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী বলেছেন, আমরা গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, ভারতে নতুন নাগরিকত্ব আইন ও নাগরিকপঞ্জি তৈরির বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদের কারণে দেশটির সংখ্যালঘু মুসলমান সম্প্রদায়ের উপর উগ্রবাদী হিন্দুরা নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছ। ভারতের রাজধানী দিল্লিতে বেশ কয়েক দিন ধরে পদ্ধতিগত এই হত্যা চললেও দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আদালত, রাজ্য সরকার; কেউই তা থামাতে কার্যকর কোন প্রদক্ষেপ গ্রহণ করছেনা।
তাছাড়া দিল্লীতে একের পর মসজিদে হামলা চলছে। সেখানে মসজিদের মিনারগুলোতে হিন্দুধর্মীয় প্রতীক স্থাপন করা হচ্ছে। যা মুসলমানদের ঈমান-বিশ্বাস-অনুভূতির প্রতি চরম অবমাননাকর। যা মুসলিম বিশ্ব নিরবে সহ্য করতে পারেনা।
জমিয়তে যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমীর পরিচালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড.আহমদ আব্দুল কাদের, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ এর সহসভাপতি আল্লামা আব্দুর রব ইউসূফী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক, মুসলিম লীগের মহাসচিব কাজী আবুল খায়ের, খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা জাফরুল্লাহ খান, নায়বে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের মাসচিব মাওলানা মোস্তফা তারিকুল হাসান, ইসলামী ঐক্য জোটের মহাসচিব মাওলানা ডা.আব্দুল করিম,
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন , খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আহমেদ আলী কাসেমী,জমিয়তের যুগ্ম মহাসচিব মুফতি মুনির হোছাইন কাসেমী, এন ডি পির চেয়ারম্যান ক্বারী আবু তাহের, খেলাফত মজলিসের সাংগঠনিক সম্পাদক ড. মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সাল, জমিয়তের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মতিউর রহমান গাজীপুরী, প্রচার সম্পাদক মাওলানা জয়নুল আবেদীন প্রমুখ।
বিক্ষোভ সমাবেশে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন, আমরা ভারতের প্রতিবেশী হওয়ায় আমাদেরকে সর্বাগ্রে সচেতন হওয়া উচিত। দেশব্যাপী প্রতিবাদী ঝড় তুলতে হবে। মুসলমানদেরকে নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে হবে। দেশের সম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার সার্থে হিন্দু ধর্মালম্বীদেরকেও প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়া উচিত। ভারতকে মুসলিম নিধন বন্ধে কার্যকর ভুমিকা পালন করতে সরকারকে বাধ্য করতে হবে। বাংলাদেশের জনগণ রাজপথে নেমেছে রাজপথে থাকবে।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ -এর সহসভাপতি শায়খুল হাদীস আল্লামা আবদুর রব ইউসুফী বলেন, ভারতের উগ্র হিন্দু গোষ্ঠি সে দেশের সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় মুসলমানদের উপর জুলুম নির্যাতনের যে নীল নকশা তৈরি করেছে তার বিরুদ্ধে বিশ্ব মানবাধিকার গোষ্ঠি, বিশেষ করে মুসলমানদের কঠোর প্রতিরোধ গড়ে না তুললে বিশ্ব পরিস্থিতি ভয়াবহ রুপ ধারণ করবে। বিশ কোটি মুসলিম অধ্যূসিত ভারতের মুসলিম নিধনে যদি তারা সফল হতে পারে, তাহলে বিশ্বের অন্যান্য অমুসলিম দেশও ভারতের পদাংক অনুসরণ করতে পারে। এক সময় হয়তো মুসলিম রাষ্ট্রসমূহে অবস্থানকারী হিন্দুদের নিরাপত্তা নিয়েও ঝুঁকি হতে পারে। মুসলমানদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেলে বিশ্বব্যাপী ভয়াবহ যুদ্ধ লেগে যেতে পারে।
আমারা বিশ্ব সংস্থাগুলোকে বলবো- রক্তাক্ত বিশ্বের চেহারা দেখার পূর্বেই মুসলিম নিধন বন্ধে এগিয়ে আসুন।
ড.আহমদ আব্দুল কাদের বলেন, ভারতীয় এই গণহত্যা থামানোর জন্য জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে রাষ্ট্রীয়ভাবে জোরালোদাবি তুলে ধরা বাংলাদেশ সরকারের একটা নৈতিক, ধর্মীয় ও সাংবিধানিক দায়িত্ব।
কারন সাংবিধানিকভাবে বিশ্বের নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়ানোর জন্য বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশের দল-মত-ধর্ম নির্বিশেষে সকলকে ভারতীয় এই গণহত্যার বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ গড়ে তুলতে হবে। চরম উস্কানি সত্ত্বেও এ মুহূর্তে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করে আমাদেরকে আবারও বিশ্বের দরবারে সাম্প্রদায়িক শান্তির উজ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে, এবং একই সঙ্গে ভারতীয় গণহত্যার বিরুদ্ধেও জোরালো প্রতিবাদ গড়ে তুলতে হবে।