ভারতীয় পানি আগ্রাসন ও সরকারের জনবিরোধী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলুন
একুশে জার্নাল ডটকম
জুলাই ০২ ২০২২, ২০:০৯
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই বলেছেন, “সরকার অতিমাত্রায় ভারতপ্রেমী হওয়ায় ভারতের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করতে পারছে না। ভারতের পানি আগ্রাসন ও সীমান্তে বাংলাদেশীদের হত্যার কোনো কার্যকরি পদক্ষেপ নিতে পারছে না। তিনি বলেন, ভারতে বিজেপি নেত্রী কর্তৃক রাসূল সা. এবং উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রা.-এর শানে কটুক্তির প্রতিবাদে বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় উঠলেও আমাদের সরকার ভারতের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব আনতে পারেনি। তাদের কাছে নবীর ভালবাসার চেয়েও ভারতের ভালবাসা বেশি।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। নদীকে কেন্দ্র করে আমাদের সভ্যতা সৃষ্টি হয়েছে। শতশত নদীর গতিপথ ধরে বিকশিত হয়েছে জীবন, গড়ে উঠেছে জীবিকা প্রবাহ। অথচ দেশের সরকারগুলোর ভুল নীতি, ভারতীয় পানি আগ্রাসন ও সরকারগুলোর নতজানু পররাষ্ট্রনীতি এই দেশটাকে মরুভূমি বানিয়ে ফেলেছে।”
তিনি বলেন, “বন্যায় সয়লাব করে জীবন-জীবিকা ধ্বংস করছে। বাংলাদেশে ২৪ হাজার কিলিমিটার নৌপথ ছিলো। বর্তমানে তা ৪ হাজার কিমিতে নেমে এসেছে। স্বাধীনতার পরে শুকিয়ে গেছে ১৫৮টি নদী।” পীর সাহেব বলেন, “ভারতের সাথে যৌথ ৫৪টি নদীসহ দেশের প্রধান পানির প্রবাহগুলোকে ভারত ফারাক্কা, গজলডোবা ইত্যাদি বাধ দিয়ে মেরে ফেলেছে। প্রয়োজনীয় মুহুর্তে পানি আটকে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ধ্বংস করছে আর বর্ষার সময়ে পানি ছেড়ে দিয়ে ফসল নষ্ট করছে, মানুষ হত্যা করছে।”
আজ শনিবার বিকেলে ভারতের পানি আগ্রাসনের প্রতিবাদসহ ১৫ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর উদ্যোগে জাতীয় মসজিদ বাইতুল মোকাররমের উত্তর গেইটে বিশাল গণমিছিল পূর্ব জমায়েতে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জমায়েতে বক্তব্য রাখেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী, সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই, মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন ও অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান ও ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, সহকারি মহাসচিব অধ্যক্ষ শেখ ফজলে বারী মাসউদ ও মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম, কেএম আতিকুর রহমান, অধ্যাপক সৈয়দ বেলায়েত হোসেন, ইসলামী যুব আন্দোলনের সেক্রেটারী জেনারেল ইঞ্জিনিয়ার আতিকুর রহমান মুজাহিদ, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নূরুল করীম আকরাম, শ্রমিকনেতা আলহাজ্ব আব্দুর রহমান ও ডা. শহিদুল ইসলাম প্রমুখ। গণমিছিল পূর্ব সমাবেশ পরিচালনা করেন দলের কেন্দ্রীয় প্রচার ও দাওয়াহ বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম।
উল্লেখ্য যে, গত ১ এপ্রিল রাজধানীতে অনুষ্ঠিত জাতীয় মহাসমাবেশ থেকে দলের আমীর ৩ মাসের কর্মসূচি এবং ১৫ দফা দাবি পেশ করেছিলেন। ভারতে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা. ও উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রা.-এর শানে অবমাননাকর বক্তব্যের প্রতিবাদ, কথিত ‘গণকমিশন’ কর্তৃক দেশের সম্মানিত ১১৬ জন আলেম ও ১০০০ মাদরাসার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ এবং ইসলাম ও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের প্রতিবাদ, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ, শিক্ষা-সিলেবাসে ধর্মীয় শিক্ষার সংকোচন বন্ধ, ইসলাম, দেশ ও মানবতাবিরোধী মদের বিধিমালা বাতিল, স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য-সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতি ও সন্ত্রাসমুক্ত কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ৮ বিভাগে বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। গণমিছিল বিশাল জনসমূদ্রে রূপ নেয়। মিছিলটি বায়তুল মোকাররম উত্তর গেট থেকে বের হয়ে পল্টন মোড়, শান্তিনগর পৌঁছলে পুলিশ মিছিলের গতিরোধ করতে কাঁটাতারের ব্যারিকেড দেয়। এ সময় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। মিছিলের একমাথা বিজয়নগর পৌঁছলেও অপরমাথা বায়তুল মোকাররমই থেকে যায়।
পীর সাহেব চরমোনাই আক্ষেপ করে বলেন, “আমাদের সরকারগুলো ভারতের অন্যায্য পানি প্রত্যাহার ও বাঁধ নির্মানকে যৌথ আলোচনা বা আন্তর্জাতিকভাবে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে পারেনি। বছরের পর বছর ভারত অব্যাহতভাবে পানি আগ্রাসন চালিয়ে কোটি কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা ধ্বংস করছে, দেশের খাদ্য নিরাপত্তা বিনষ্ট করছে অথচ সরকারগুলো কোন ধরনের প্রতিকার করতে পারেনি বরং নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে ভারতীয় পানি আগ্রাসন এখন দেশের মানুষের বাঁচা-মরার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারগুলোর এই ব্যর্থতা আর মেনে নেয়া যায় না।”
তিনি বলেন, “এই সরকার বিগত একযুগেরও বেশি সময় ধরে জনমতকে উপেক্ষা করে ক্ষমতায় ঝেঁকে বসে আছে। ভোটাধিকার হরণ করা, খুন-গুম করে ভিন্নমত দমন করা, উন্নয়নের নামে সীমাহীন লুটতরাজ করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে আছে।” তিনি বলেন, “এরা দেশের তরুণ প্রজন্মকে ধ্বংস করতে মদসহ মাদকের সয়লাব ঘটাতে মদের লাইসেন্স দিচ্ছে, শিক্ষা থেকে ধর্মীয় শিক্ষাকে সরিয়ে দিচ্ছে।”
পীর সাহেব বলেন, “দুর্নীতি, দলীয় কর্মী তোষণের কারণে দ্রব্যমূল্য জনতার নাগালের বাইরে চলে গেছে। মানুষ দুর্ভিক্ষের আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছে আর সরকার উন্নয়ন দেখিয়ে লুটতরাজ সমাপ্তির উৎসব করেছে। তিনি বলেন, সার্বিকভাবে এই সরকার স্বাধীন বাংলাদেশের স্বাধীন নাগরিকদের সম্মান-সমৃদ্ধি ও সম্ভবনার জন্য বিপদজনক হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এই অবস্থা থেকে উদ্ধারের জন্য একটি গণআন্দোলনের কোন বিকল্প নেই।”
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেন, “বিজেপি নেত্রী নুপুরের বিতর্কিত মন্তব্যের বিরুদ্ধে ভারতের রাজ্যেই নিন্দা প্রস্তাব পাশ হয়েছে কিন্তু বাংলাদেশ সরকার কোন নিন্দা প্রস্তাব পাশ করতে পারেনি। এরচেয়ে লজ্জাজনক আর কিছু হতে পারে না।” তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীদের নৈতিকতা এতো নিচে নেমেছে যে, তারা শিক্ষকদের পিটিয়ে মারছে। এমতাবস্থায় যেখানে শিক্ষার্থীদের নৈতিক শিক্ষায় জোড় দেয়ার কথা সেখানে এই সরকার শিক্ষাক্রম থেকে নৈতিকতাসমৃদ্ধ ইসলাম শিক্ষাকে সংকুচিত করছে। জাতিকে ধ্বংস করার পদক্ষেপ তারা একের পর এক নিয়েই যাচ্ছে।”
দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী বলেন, “বন্যার পানিতে যখন মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছে তখন কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মাসেতুর উদ্ভোধনী অনুষ্ঠান করাই প্রমাণ করে এই সরকার কতটা জনবিরোধী সরকার!”