বড় পাপ থেকে বেচে থাকলে ছোট গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেয়া হবে

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

মার্চ ০৪ ২০১৯, ১৭:৫১

নোমান আলি খান: আজকে আমি সুরাতুন নিসার দুইটি আয়াত শেয়ার করতে চাই। একটি আয়াতে আল্লাহ বলেছেন সবার আগে কোন কোন পাপগুলো থেকে আমাদের দূরে থাকা প্রয়োজন। অনেক সময় একজন মুসলিমের জীবনে কাজের অগ্রাধিকার নির্ধারণের ক্ষেত্রে সঠিক বুঝের অভাব দেখা যায়। কিছু কিছু কাজ অন্য কাজের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অন্যান্য কাজের চেয়ে আপনার নামাজ বেশি জরুরি। ইসলামের এমন অনেক আমল রয়েছে যা জীবনকে সৌন্দর্য্যমন্ডিত করে তুলবে, কিন্তু সে কাজগুলো গুরুত্বের দিক থেকে নামাজের কাছাকাছি পর্যায়েও নেই।

ত্রুটি, বিচ্যুতি এবং পাপ কাজের ক্ষেত্রেও এরকম প্রাধান্য রয়েছে। অনেক আমল রয়েছে যেগুলো আমাদের করা উচিত। যেমন – ঘরে প্রবেশ করার সময় ডান পা দিয়ে প্রবেশ করা উচিত, টয়লেটে প্রবেশ করার সময় বাম পা দিয়ে প্রবেশ করা উচিত এবং নির্দিষ্ট দোয়াগুলোও পড়া উচিত। এ ধরণের আমলগুলো করার চেষ্টা থাকা উচিত। এগুলোকে উপেক্ষা করা কিছুটা সমস্যাপূর্ণ। কিন্তু এমন অনেক পাপ কাজ রয়েছে যেগুলো করা কবিরা গুনাহ।

অনেক সময় এই অগ্রাধিকার নির্ধারণে মানুষের যখন সঠিক জ্ঞানের অভাব থাকে বা বিকৃত জ্ঞান থাকে, তখন তারা ছোট ছোট ব্যাপারকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। তারা নিশ্চিত করতে চায় যে, আমি অমুক অমুক সুন্নাহ ঠিকভাবে পালন করছি তো? অমুক অমুক দোয়াগুলো নিয়মিত পড়ছি তো? শুক্রবারে সূরাতুল কাহাফ পড়েছি তো? ইত্যাদি ইত্যাদি। তো, তারা ছোট ছোট আমলগুলো সঠিভাবেই আদায় করে।

কিন্তু একই সময়ে চোখের সামনে থাকা বিশাল বিশাল গুনাহগুলো অনায়াসেই করে যায়। করার সময় দ্বিতীয়বার চিন্তাও করে না। উদাহরণস্বরূপ, হারাম উপায়ে টাকা উপার্জন করা, জিনা করা, সুদ এরকম বড় বড় গুনাহ। বিরাট বিরাট শয়তানি পাপগুলো সে অনায়াসেই করে যায়, মনে হয় যেন চোখ থাকতেও সে অন্ধ। ছোট ছোট আমলগুলো আপনি ঠিকই গুরুত্ব দিয়ে করে যাচ্ছেন, যেন মনে মনে ভালো ফিল করতে পারেন যে, যাক, আমি তো ধর্ম পালন করছি।

এই জন্যই কুরআন আমাদেরকে বিভিন্ন আমলের সঠিক অনুপাত ঠিক করে দিয়েছে। আল্লাহ এই আয়াতে বলেছেন – إِن تَجْتَنِبُوا كَبَائِرَ مَا تُنْهَوْنَ عَنْهُ – “যদি তোমরা নিষিদ্ধ কাজের বড় বড় গুলো হতে বিরত থাক….. ।” সুতরাং দেখা যাচ্ছে এমন অনেক বড় বড় পাপ রয়েছে যেগুলো থেকে আমাদের অবশ্যই বিরত থাকতে হবে, যদি আমরা এটা করতে পারি, তাহলে ছোট ছোট পাপের ক্ষেত্রে আল্লাহ বলেন – نُكَفِّرْ عَنكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ – “তাহলে আমি তোমাদের ছোট ছোট পাপগুলো ক্ষমা করে দেব।”

অর্থাৎ, আগে সিরিয়াস ব্যাপারগুলোর যত্ন নাও। কুরআন যেগুলোর উপর গুরত্বারোপ করেছে। যেমন, টাকা উপার্জনের বিষয়টা। কিভাবে আমরা টাকা আয় করি এবং কিভাবে তা ব্যয় করি সে ব্যাপারে আগে যত্নবান হওয়া। এটা খুবই সিরিয়াস একটা ব্যাপার। আমাদের আশে পাশে যারা আছে তাদের অধিকারের ব্যাপারে সাবধান থাকা। এর অন্তর্ভুক্ত হলো পরিবারের লোকজন এবং পরিবারের বাইরে আমাদের পাড়া প্রতিবেশী যারা এতিম এবং অভাবগ্রস্ত তাদের দেখা শোনা করা। সূরা মাউনে আছে – فَذَٰلِكَ الَّذِي يَدُعُّ الْيَتِيمَ – “সে সেই ব্যক্তি, যে এতীমকে গলা ধাক্কা দেয়।” এগুলো বড় ধরণের পাপ।

তারপর যেভাবে আমরা আমাদের ব্যবসা বাণিজ্য চালাই। কেউ যদি আপনার কাছে টাকা পায়, কোন কন্ট্রাক্ট মানতে যদি ওয়াদাবদ্ধ হন, কোন সেবা প্রদান করার জন্য আপনাকে যদি বেতন দেয়া হয়, কাজের ক্ষেত্রে সততা বজায় রাখা – এগুলো বড় বড় বিষয়। ঠিক একইভাবে কুরআনে বর্ণিত সবচেয়ে ভয়ংকর পাপগুলোর একটি হলো সুদ বা রিবা। এটাও অনেক বড় গুনাহ। একইভাবে আমাদের পবিত্রতা রক্ষা করা অর্থাৎ জেনা ব্যভিচার থেকে বিরত থাকা, এটা কবিরা গুনাহ। এটা এতো বড় গুনাহ যে আল্লাহ বলেন – ব্যভিচারের কাছেও যেও না।

এই বড় পাপগুলোর ব্যাপারে সতর্ক থাকো, হ্যাঁ, অন্যান্য ছোট ছোট গুনায় তোমরা হয়তো জড়িয়ে পড়বে …. হতে পারে তোমার নামাজে যথেষ্ট মনোযোগ ছিল না, ওযুটাও হয়তো উত্তমরূপে করা হয়নি, হতে পারে যখন নামাজ পড়ছিলে অন্য কোথাও মন পড়ে ছিল, হতে পারে হজ্জ্ব বা উমরা করার সময় কিছু কিছু নিয়ম কানুন ঠিকমত পালন করতে পারোনি, কখনো কখনো হয়তো ধৈর্য হারিয়ে ফেলেছিলে। এই ছোট ছোট বিষয়গুলো ক্ষমা করে দেয়া হবে, কারণ তোমরা বড় বড় পাপ থেকে বিরত ছিলে। ছোট বড় পাপের এমন একটি তারতম্য কুরআনে জোর দিয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে।