বেফাক্ব ও হাইয়্যাতুল উলইয়া বাংলাদেশ এর কেন্দ্রীয় পরীক্ষার রুটিন প্রাসঙ্গিক কিছুকথা

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

মার্চ ১৫ ২০২০, ১৪:০৬

মাহফুজ আহমাদ

বেফাক ও হাইয়্যাতুল উলইয়ার কেন্দ্রীয় পরীক্ষা চলতি মাসের শেষ ও আগামী মাসের প্রথম দিকে শুরু হতে যাচ্ছে। চলতি মাসের ২৮ তারিখ ২০২০ইং হতে ০৪এপ্রিল ২০২০ পর্যন্ত একটানা আটদিন বেফাকের চারটি ফাইনাল ক্লাসের পরীক্ষা চলবে। এবং হাইয়্যাতুল উলইয়ার পরীক্ষা ০৬এপ্রিল ২০২০ ইং হতে ১৬ এপ্রিল ২০২০পর্যন্ত মোট ১১দিন চলবে।

বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ এর সাথে দেশের শতকরা ৮০%মাদ্রাসা নিবন্ধিত এবং হাইয়্যাতুল উলিয়ার সাথে ৬টি বোর্ডের দাওরায়ে হাদীস মাস্টার্স এর প্রায় সকল মাদ্রাসা নিবন্ধিত। দেশের ক্বওমী মাদ্রাসা সিলেবাস, পরীক্ষা রুটিন ও নিয়ম কানুন সম্পুর্ন স্বতন্ত্র ও আলাদা যা সবারই জানা।

সময়ের পরিবর্তনে সকল ধারার প্রতিস্ঠান আপটেড, উন্নত হলেও কওমী মাদ্রাসার নিয়ম কানুন শিক্ষা ব্যবস্থা এবং আধুনিকায়নে এখনো অনেক পিছিয়ে আছে।

এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে।

১/ শিক্ষা সিলেবাস

২/ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ও মানবন্টন

৩/ পরীক্ষার রুটিন।

৪/অনিয়ন্ত্রিত প্রতিস্টান

৫/ অপ্রশিক্ষিত শিক্ষক – ইত্যাদি

একটানা বিরতিহীন পরীক্ষা :

যেখানে সকল ধারার (আলিয়া/জেনারেল) প্রতিষ্ঠানের কেন্দ্রীয় পরীক্ষাগুলোতে ছাত্রদের পর্যাপ্ত পরিমাণ সময় দেয়া হয়। কমপক্ষে প্রত্যেকটি সাবজেক্ট পরীক্ষার আগে একদিন করে গ্যাপ /বিরতি দেয়া হয়। এবং কঠিন সাবজেক্ট হলে দুই থেকে তিনদিন ও বিরতি দেয়া হয়। যাতে করে সকল স্তরের ছাত্ররা ভাল রেজাল্ট করতে পারে।

সেখানে কওমী মাদ্রাসার পরীক্ষাগুলো একটানা কোন ধরনের বিরতী ছাড়াই পরীক্ষা নেয়া হয়। এতে ছাত্রদের অনেক কস্ট স্বীকার করে হলে ও পরীক্ষা দিতে হয়।

এবারের বেফাক পরীক্ষা রুটিনে দেখলাম মেশকাত জামাতের পরীক্ষা একটানা ০৮ দিন মধ্যখানে কোন বিরিতি নেই। এমনকি শুক্রবারে ও বিরতি নেই। অবশ্য অন্য জামাতগুলোতে মাত্র একদিন বিরতী দেয়া হয়েছে।

হাইয়্যাতুল উলইইয়ার একটা ১১দিনের পরীক্ষায় মাত্র একদিন বিরতী দেয়া হয়েছে, তাও আবার বৃহঃবার। শুক্রবার বিরতি দেয়া হয়নি।

কোন ধরনের বিরতি ছাড়া একটানা পরীক্ষা নেয়ার মধ্যে কোন ফযীলত আছে বলে মনে হচ্ছে না। বলবেন হয়তো এতে ব্যয় বেড়ে যাবে, যাক ব্যয় বেড়ে যাক সমস্যা কোথায়, ছাত্রদের থেকে সেই পরিমাণ ফি আদায় করে নেয়া হবে। অসুবিধা কিসে?

একটি জরীপ চালিয়ে দেখা গেছে এধরনের একটানা পরীক্ষা নেয়ার উপর অধিকাংশ ছাত্ররাই অসন্তোষ।আমরা যখন পরীক্ষা দিয়েছি তখন এর বাস্তবতা স্বংয় উপলব্ধি করেছি।

আশাকরি কর্তৃপক্ষ সকল স্তরের ছাত্রদের প্রতি লক্ষ্য রেখে আগামী দিনে কমপক্ষে একদিন করে বিরতি দিয়ে পরীক্ষার রুটিন করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

পরীক্ষা রুটিন ও শুক্রবারে পরীক্ষা নেয়া

পৃথিবীর কোন ইসলামী প্রতিষ্ঠানে শুক্রবারে সাধারণত পরীক্ষা নেয়া হয়না। এমনকি বাংলাদেশের আলিয়া মাদ্রাসা ও জেনারেল প্রতিষ্ঠানগুলোতে সাধারণত শুক্রবারে পরীক্ষা নেয়া হয়না। ব্যতিক্রম শুধু আমাদের কওমী মাদ্রাসা। অনেকে বলতে পারেন শুক্রবারে পরীক্ষা নেয়া কি নাজায়েজ ? আসলে এখানে জায়েজ নাজায়েজের বিষয় না।

শুক্রবারের জুমা কে কেন্দ্রকরে বেশ কিছু সুন্নাহ রাসুল (স:) হতে প্রমাণিত। তাছাড়া শুক্রবারের পরীক্ষা নেয়া হয় সকাল ৮টা থেকে ১১-৩০পর্যন্ত, এখানে লক্ষ্য করুন একজন ছাত্র আগের দিন পরীক্ষা দিয়ে পরের দিন আবার সকাল আটটায় পরীক্ষা দেবে, পরীক্ষার পুর্ব প্রস্তুতিমুলক যে সময় তা এখানে পর্যাপ্ত নয়। এবং পরীক্ষা দিয়ে জুমুআর নামাজের জন্য যে প্রস্তুতিমুলক সময় থাকবে তা ও যথেষ্ট নয়।  আমরা আশারাখি কর্তৃপক্ষ আগামীতে শুক্রবারে পরীক্ষা না দেয়ার বিষয়টি খেয়াল করবেন।

আমি যখন ২০১৫ সালে বেফাক বোর্ডের কেন্দ্রীয় পরীক্ষার নেগরান /পরীক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাই, তখন উপরোক্ত বিষয়গুলো ভালভাবেই উপলব্ধি করতে পেরেছি।

পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ও মানবন্টন 

বেফাক হাইয়্যাসহ দেশের সবকটি কওমী মাদ্রাসার প্রশ্নপত্র ও মানবন্টনে রয়েছে অনেক অসংগতি যেমন, দাওরায়ে হাদীস মাস্টার্সের সিলেভাসভুক্ত একটি কিতাব সহীহুল বুখারী, উক্ত কিতাবটিতে অনেকগুলো অধ্যায় থাকলে ও অধ্যায় ভিত্তিক কোন মান বন্টিত নয়। যার দরুন সাধারণ ছাত্ররা বেশ সমস্যায় পড়ে যায় । নির্ধারীত কিছু প্রশ্নোত্তর পড়ে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেয়। এরকম প্রায় সকল কিতাবের ই একই অবস্থা।

এছাড়া আধুনিক বিশ্বের সবখানে যখন (এমসিকিউ ) সিস্টেম চালু, কওমী মাদ্রাসায় তা এখনো চালু হয়নি। শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরো উন্নত করতে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা ও এখন সময়ের দাবী। ।

শিক্ষাবর্ষ শুরু : কওমী মাদ্রাসার প্রাতিষ্ঠানিক হিসাব নিকাশ আরবী মাসের সাথে করা হলে ও শিক্ষাবর্ষ শুরু হয় রমজানের পর থেকে। অথচ এখানে অধিক যুক্তিযুক্ত ছিল মুহাররম মাস থেকে শিক্ষা বর্ষের সুচনা হওয়া, এবং জিলক্বদ/ মাসে কেন্দ্রীয় পরীক্ষা সম্পাদন করে মুহাররম থেকে সুন্দরভাবে শিক্ষাবর্ষ শুরু করা যেত।

অবশ্য সৌদিআরবে এখন ও রাষ্ট্রীয়ভাবে আরবী মাসের হিসাব গণনা করা হয়। শিক্ষাবর্ষের সুচনাও মুহাররম মাস থেকে হয়।

কওমী মাদ্রাসার শিক্ষা সিলেবাস.,প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ম কানুন, বিষয় অনেকে অনেক কিছুই লিখেছেন। এবিষয়ে নতুন করে লেখতে গেলে কলেবর আরো অনেক বৃদ্ধি হয়ে যাবে।আগামীতে লেখার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ,

দেশের সকল ক্বওমী মাদ্রাসা চিরউন্নত চির উজ্জীবিত হউক এই কামনা।

মাহফুজ আহমাদ। ইসলামিক ইউনিভার্সিটি মাদীনা মুনাওয়ারা, সৌদিআরব।