বিশ্ব সম্প্রদায় আগামী বছরে একটি গভীর সংকটের আশঙ্কা করছে: প্রধানমন্ত্রী

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

অক্টোবর ১১ ২০২২, ১৮:১৭

যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দেশবাসীকে আরও খাদ্য উৎপাদনের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র প্রধান, সরকার প্রধান এবং বিভিন্ন সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা করেছেন, বিশেষ করে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায়, যেখানে সকলেই অত্যন্ত উদ্বিগ্ন এবং আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, ২০২৩ সালে একটি গুরুতর দুর্ভিক্ষ হতে পারে যখন অর্থনৈতিক মন্দা আরো গভীর হবে এবং খাদ্য সংকট দেখা দেবে। খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। এটি এখন আমাদের জন্য অনিবার্য এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

আজ (১১ অক্টোবর) মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি-একনেক সভায় তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি বৈঠকে যোগ দিয়ে প্রারম্ভিক বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে অনেক দেশে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। ‘সুতরাং, আমাদের খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে এবং খাদ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে এবং সেই সাথে খাদ্যকে প্রক্রিয়াজাতকরণের বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে।’ আমাদের একটা সুবিধা আছে যে আমাদের জমি অনেক উর্বর এবং যেখানে বীজ বপন করা হয় সেখানে কিছু উৎপন্ন হয়’। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও এটা বলতেন। বঙ্গবন্ধুর এই বাণী অনুসরণ করে ব্যাপকভাবে খাদ্য উৎপাদনে মনোযোগ দিতে হবে। শুধু তাই নয় খাদ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা ও করতে হবে। আমরা কোন অপ্রয়োজনীয় খরচ বাড়াব না, বরং আমরা বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পানি, গ্যাস ইত্যাদি ব্যবহারে আরো সাশ্রয়ী এবং সচেতন হবো। পাশাপাশি জনগণকে কঠোর পরিশ্রম করার আহ্বান জানান তিনি।

দেশের প্রতিটি পরিবারকে তাদের সাধ্যমত সঞ্চয় করার অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি সরকারের জন্যও প্রযোজ্য। সরকার কোনো কিছুই অপ্রয়োজনে ব্যবহার করতে যাবে না। আমরা যা প্রয়োজন তা ব্যবহার করব, এর বেশি নয়। আমাদের অপ্রয়োজনীয় কোন কিছু ব্যবহারের কোনো সুযোগ নেই। কারণ আমি বিশ্বনেতা ও সংস্থার প্রধানদের মধ্যে উদ্বেগ দেখেছি। তাই আমাদের যথেষ্ট সতর্কতামূলক পদক্ষেপ বজায় রাখতে হবে। সব প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, সরকার তাই করবে যতদিন জনগণ আমাদের সঙ্গে থাকবে। জনগণ আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। যতদিন মানুষ আমাদের সাথে থাকবে ততদিন আমাদের কোনো টেনশন নেই। আমাদের জনগণকে উৎসাহিত করতে হবে এবং তাদের কাজে লাগাতে হবে, যেভাবে আমরা করোনাভাইরাস মোকাবিলার সময় করেছিলাম।

সবসময় মূল্যস্ফীতি নিয়ে আলোচনা করে মূল্যবান সময় ক্ষেপণ না করার জন্য পরিকল্পনা কমিশনকে অনুরোধ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কারণ, বিশ্বের অনেক দেশই এই বিষয়ে আলোচনা করে না। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় দেশগুলো মূল্যস্ফীতির বিষয়ে অনেক বেশি আগ্রহ দেখালেও তাদের নিজেদের দেশে বিষয়টি নিয়ে খুব বেশি আলোচনা করে না। এসব দেশ মূল্যস্ফীতির প্রভাব নিয়ে খুব একটা আলোচনা করে না। আমাদেরও বিষয়টি নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা করার দরকার নেই, তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম সাধারণের নাগালের মধ্যে রাখার চেষ্টা করা উচিত। এর জন্য যা যা প্রয়োজন আমরা তা করব। প্রতিটি প্রকল্প নেওয়ার আগে সবাইকে দেশের জনগণের সর্বোচ্চ কল্যাণ এবং সেই প্রকল্প থেকে কি সাফল্য আসবে সে কথা ভাবতে হবে। ফান্ড পাওয়া গেলেই অপ্রয়োজনে কোনো প্রকল্পে ঝাঁপিয়ে পড়ার দরকার নেই। যে কোনো প্রজেক্ট আমাদের খুব সাবধানে যাচাই-বাছাই করে নিতে হবে যাতে সেই প্রজেক্ট থেকে আমরা কিছু রিটার্ন পেতে পারি, যা দেশের জন্য উপকারী হবে। আমরা সেই ধরনের প্রকল্প গ্রহণ করব। এমন কোনো প্রকল্প নেওয়ার প্রয়োজন নেই যা দেশের জন্য কল্যাণকর হবে না। আমি সেরকম কোনো প্রজেক্ট নিইনি, আমরা এ ব্যাপারে সবসময় সতর্ক ছিলাম। ভবিষ্যতে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। জনগণের প্রতি সরকারের সব সময় দায়িত্ব রয়েছে। আমরা তা অনুধাবন করতে পারি এবং আমরা এ লক্ষ্যে কাজ করি।প্রকল্প সম্পন্ন করলে আমরা যেসব প্রকল্পের সুফল পেতে পারব এবং দেশের অর্থনীতিতে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে, আমাদের সেসব প্রকল্প বেছে নিতে হবে এবং দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। যেসব প্রকল্প কিছুটা ধীরে ধীরে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে সেগুলো বাছাই করার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতা ছাড়া কোনো দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। ২১ বছরে ক্ষমতা জনগণের হাতে ছিল না। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ক্ষমতা ছিল সেনানিবাসের ভেতরে। দেশের সংবিধান উপেক্ষা করে সামরিক অধ্যাদেশ দ্বারা দেশ পরিচালিত হয়েছিল। গণতন্ত্রের নামে প্রহসন এবং নির্বাচনের নামে ভোট কারচুপির উৎসব চলছে। আমরা এগুলো প্রত্যক্ষ করেছি। ফলে বাংলাদেশ এগোতে পারেনি। ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে সরকার উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের স্বীকৃতি লাভ করতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশে গণতন্ত্রের নিরবচ্ছিন্ন ধারাবাহিকতার কারণেই আমরা এই সাফল্য অর্জন করতে পেরেছি। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতা ব্যতীত কোন দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়।