বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তাকর্মীর মারধরের শিকার শিক্ষার্থী

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

মার্চ ২৭ ২০১৯, ০৫:৫০

একুশে জার্নাল ডটকম: সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে (গবি) নিরাপত্তাকর্মী কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে মারধর এবং লাঞ্ছিত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মারধরের পর ঐ শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে আটকে রাখা হয়েছিল। পরে কতিপয় শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের তালা ভেঙে মারধরের শিকার হওয়া শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।

মঙ্গলবার (২৬মার্চ) রাত সাড়ে ৯ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এই ঘটনা ঘটে। মারধরের শিকার হওয়া শিক্ষার্থী হাসান মোহাম্মদ রুবাই গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান ও সমাজকর্ম বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী।

একজন প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্য অনুযায়ী, রাতে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশ থেকে শোরগোলের আওয়াজ আসে। একটু এগিয়ে গিয়ে “চোর চোর” শব্দ শুনতে পাই। পরে বুজতে পারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মীরা এমনভাবে আওয়াজ করছেন। “চোর চোর” চিৎকার করতে করতে একটি ছেলেকে ধাওয়া করছেন তারা। বিস্তারিত বোঝার জন্য বের হতেই দেখি ছেলেটাকে তারা মারতে মারতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। এসময় দেখতে পাই ঐ ছেলের গায়ের পোশাক ছেঁড়া। এরপরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তাকর্মীরা তাকে প্রশাসনিক ভবনে নিয়ে আটকে রাখে। আমরা তখনো মূল ঘটনা সম্পর্কে অবগত না।

পরে জানতে পারি বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান “বৈধ উপাচার্য” আন্দোলনের অংশ হিসেবে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ভবনের দেয়ালে ‘ভিসি দিবি কিনা বল’ এবং ‘আমরা অসাম্প্রদায়িক কিন্তু হিজাব আলাদা ব্যাপার’ লেখার কারণে তাকে এমনভাবে মারধর এবং লাঞ্ছিত করা হয়।

এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মী ইদ্রিসের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোন তথ্য দেননি।

সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের জিএস নজরুল ইসলাম রলিফ জানান, র‍্যাব বা আশুলিয়া থানার ওসি আসার কথা থাকলেও আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মাশরিকুল ইমন এসে তালা ভেঙ্গে আটক শিক্ষার্থীকে বের করে নিয়ে যায়। প্রথমে ইমনকে বাধা দিয়েছিলাম যে আগে প্রশাসনের লোক আসুক। তারা এসে দেখুক তারপর না হয় তালা ভাঙ্গা যাবে। কিন্তু সে আমার কথা না শুনে তাকে নিয়ে যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তাকর্মীর মারধরের স্বীকার শিক্ষার্থী
আটক রুবাইয়ের মুক্তির দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার আবু মুহাম্মদ মোকাম্মেল বলেন, ঐ শিক্ষার্থীকে নিরাপত্তার স্বার্থে আটকে রাখা হয়েছিল। তার জন্য খাবার সহ ঘুমাবার জায়গা ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এত রাতে তাকে ছেড়ে দিলে আবার যদি কোন অঘটন ঘটে তাই আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। ইমন তালা ভেঙ্গে ঐ শিক্ষার্থীকে নিয়ে যায়। এখন ঐ ছেলের নিরাপত্তার দায়ভার ইমনের।

তিনি আরও বলেন,আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে সকালে জিজ্ঞাসাবাদের পর ছাড়তে চেয়েছিলাম। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান প্রথমে জিএস রলিফ এবং আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ইমন দুজনেই আটক শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করার চেষ্টা করলেও পরে ইমন রাত ১১ টার দিকে আটক শিক্ষার্থীকে বের করে নিয়ে যায়।

ঘটনার পরবর্তী সময়ে সেখানে শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত হয়ে আটক শিক্ষার্থীর মুক্তি দাবী করেন। এসময় তারা ‘বৈধ ভিসি চাই’ এই শ্লোগান দেয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার আটক শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করলেও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসংসদের জিএস রলিফ জানান নিরাপত্তা কর্মীরা ঐ শিক্ষার্থীকে মারধর এবং লাঞ্ছিত করেছে।

সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, আমি এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে অবস্থিত আমার বন্ধুর বাসায় আছি। আমার বাবার সাথে যোগাযোগ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী আমাকে এখানে রেখে গিয়েছেন।”

মূল ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমি আমার নৈতিক জায়গা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের ভবনে চিকা মারি। তখন নিরাপত্তা কর্মীরা আমার দিকে তেড়ে আসলে আমি প্রথম দফায় পরিচয় দেই, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ড দেখাই। কিন্তু তারা আমাকে ধরে প্রশাসনিক ভবনের দিকে নিয়ে যায় এবং পেছন থেকে তাদের কেউ কেউ হাতাহাতি করতে থাকে। এতে করে আমার টি-শার্ট ছিঁড়ে যায়। এরপরে তারা আমাকে প্রশাসনিক ভবনে নিয়ে তালাবদ্ধ করে রাখে।

এদিকে এই ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈধ ভিসি চাই এই আন্দোলনে জোরদার হয়। বুধবার সকাল ১০ টা থেকে তারা নতুন করে আন্দোলনের ডাক দেয়।