বিশ্বনাথে প্রভাবশালী গোষ্ঠির কাছে জিম্মি নুরজাহান বিবির আর্তি
একুশে জার্নাল
মার্চ ০৬ ২০২০, ১১:০৬

আহমদ মালিক,ওসমানীনগর প্রতিনিধি: প্রভাবশালী গোষ্ঠির হয়রানির শিকার সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের পাটাকইন গ্রামের নুরজাহান বিবি। ওই চক্র কর্তৃক একেরপর এক মিথ্যাচারের কারণে তার পরিবারের সামাজিক মর্যাদা যেমন ধ্বংস হচ্ছে; ঠিক একই ভাবে তার ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদের পায়তারাও চলছে। তাছাড়া ওই চক্রের কারণে তার ছেলে নিখোঁজ রয়েছে এবং অন্তঃস্বত্ত্বা পুত্রবধু আছে কারাগারে। নুরজাহান বিবির দাবি, ‘তার ছেলে তবারক এলাকার বিভিন্ন মসজিদ, মাদরাসা এবং স্কুলের উন্নয়ন কাজের সাথে জড়িত। স্থানীয় বিভিন্ন বিচার কার্যক্রমেও ডাক পড়ে তবারকের। এই কারণে তবারক গ্রামের একটি চক্রের কাছে চক্ষুশূল হয়ে দাঁড়ায়। আর্থিক প্রভাব থাকায় ওই চক্রের হাজারো মিথ্যাচার এবং নির্যাতনের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়ানোর সাহস নেই গ্রামের কারোরই।’
সোমবার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে নুরজাহান বিবি তার অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরেন। অসহায় মা হিসেবেই সন্তানের উপর স্থানীয় সিরাজ গংদের মিথ্যাচারের কথা তুলে ধরতেই তিনি সংবাদ সম্মেলন করতে এসেছেন বলেও জানান। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘তার তিন ছেলে। বড় ছেলে আরশ আলী মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী। মেঝো ছেলে সফর আলী বর্তমানে ইউরোপের দেশ প্যারিসে অবস্থান করছে। আর ছোট ছেলে তবারক আলী দেশে রয়েছেন। তিনি একই ইউনিয়নের পাঁচকড়ি গ্রামের মৃত মনোহর আলীর প্রভাবশালী ছেলে সিরাজ মিয়ার মিথ্যাচারের কারণে নিখোঁজ। তার অন্তঃস্বত্ত্বা স্ত্রী ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় কারাগারে।’
তিনি বলেন, তবারক এলাকার মসজিদ মাদ্রাসা ও স্কুলের উন্নয়নকাজের সাথে জড়িত। তাছাড়া শালিস ব্যক্তিত্ব হিসাবেও সে খুব জনপ্রিয়। এ কারণে সিরাজ ও তার দলবলের রোষানলে পড়ে। তারা সম্প্রতি গ্রামের একটি মসজিদে কিছু অনুদান দিয়ে সিরাজের নামে নেমপ্লেইট লাগিয়ে দেয়। তবারক আপত্তি জানালে তাদের রোষানলে পড়ে। তারা নানা অপপ্রচার ও মিথ্যাচার চালাতে শুরু করে।’
তিনি আরও বলেন, গত বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি রামপাশা ইউনিয়নের আশুগঞ্জ আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় এন্ড কলেজের গভর্নিং বডির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে দাতা সদস্য হিসেবে তবারক পুরো প্যানেল নিয়ে বিজয় লাভ করে। এর আগে এই বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটিতে যুক্ত ছিলেন সিরাজ মিয়া ও তার প্যানেল। পরবর্তীতে এই চক্রের হাত ধরেই নতুন কমিটির দায়িত্ব লাভের আগেই স্কুল থেকে মূল্যবান নথিপত্র সরিয়ে ফেলা হয়। সেই সাথে অফিসের কম্পিউটারে সংরক্ষিত সকল তথ্য মুছে ফেলা হয়। স্কুলের এই চুরির ঘটনা বিষয়ে বিশ্বনাথ থানা পুলিশ সম্পূর্ণ অবগত। বিষয়টি সিরাজ গং কর্তৃক সংগঠিত এবং পরিকল্পিত-এই অবস্থা পরিস্কারভাবে জানাজানি হয়ে গেলে এই চক্রটি তবারক আলীকে অন্যভাবে ফাঁসানোর চেষ্টা করে। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি আমার পুত্রবধুর নামে ক্রয়কৃত সিএনজিতে লামাকাজি এলাকা থেকে গাঁজাসহ এক ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়। উক্ত ব্যবসায়ীকে পুলিশ আটক করলেও সিরাজ মিয়ার কুটচালে সিএনজি মালিক তবারক আলীর স্ত্রী আমার পুত্রবধুকে গাঁজা ব্যবসায়ী উল্লেখ করে মামলা দায়ের করা হয়।’
‘একইভাবে চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে ডিবি পুলিশের হাতে ইয়াবাসহ আটক হয় আরো দুই মহিলা। আটককৃত ওই দুই মহিলার দাবি অনুয়ায়ি সেই ইয়াবায় তবারক এবং ৫ মাসের অন্ত:স্বত্বা স্ত্রী জড়িত রয়েছে বলে মামলা দায়ের করা হয়। বর্তমানে হবিগঞ্জ থানায় দায়ের করা এই মামলায় তবারকের স্ত্রী কারবারণ করছে। এর পরবর্তীতে একই মাসের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাত ১১ টায় কুমিল্লা থেকে সিলেট আসার পথে ইয়াবাসহ আরো দুই মহিলাকে আটক করে পুলিশ। মহিলাদের একজন হলেন, বিশ^নাথের আলহেরা মার্কেটের ব্যবসায়ী দুলু মিয়ার স্ত্রী সুমি আক্তার লিপি। তার সাথে সিরাজের সখ্যতা রয়েছে। যে কারণে আটকের দুদিন পর সুমি মিথ্যা স্বীকারোক্তি দেয় যে, ইয়াবার মালিক তবারক ও তার স্ত্রী। তিনি প্রশ্ন রাখেন, আগের মামলায় কারাগারে থাকা সাবিনা কিভাবে ইয়াবা বা গাঁজা সরবরাহ করে? এছাড়া এলাকাসহ পাঁচগ্রামের সমন্বয়ে গঠিত পঞ্চায়েতের অন্যতম একজন সালিশী হিসেবে তবারক আলী কিভাবে এই পেশায় যুক্ত থাকতে পারে?
তিনি বলেন, এসব অভিযোগ মিথ্যা বানোয়াট ও ষড়যন্ত্রমূলক অভিযোগ। মসজিদের নেইমপ্লেট লাগানোর প্রতিবাদ, স্কুলের নির্বাচনে পরাজয় ও নথিপত্রসহ মূল্যবান সামগ্রি চুরির অপকর্ম ঢাকতেই সিরাজ ও তার দলবল ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছেন। এর আগে গত বছর এলাকার প্রায় দুই শতাধিক মানুষের স্বাক্ষর নিয়ে তাদের অনিয়মের বিরুদ্ধে সিলেটের পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ দেয়া হয়েছে। তাদের চক্রান্তে আমার ৫ মাসের অন্তঃস্বত্ত্বা পুত্রবধু আজ কারাগারে। আর মিথ্যা অভিযোগে দায়েরকৃত মামলার কারণে ছেলে তবারক নিখোঁজ। তার আশঙ্কা, সিরাজ গংরা তার ছেলে তবারককে মেরে ফেলার চেষ্টা করছে। তিনি একজন মা হিসাবে তার ছেলে ও পুত্রবধুর বিরুদ্ধে এমন ষড়যন্ত্রকারী সিরাজ গংদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।