বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ আর নেই
একুশে জার্নাল ডটকম
জুলাই ১৭ ২০২০, ১৩:৩৭
এম. এম আতিকুর রহমান:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ আর নেই। আজ শুক্রবার (১৭ জুলাই) সকালে তিনি রাজধানীর বেসরকারি হাসপাতাল ল্যাবএইডে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিয়ুন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। বেসরকারি বিভিন্ন টেলিভিশনে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
জানা গেছে, ভোররাতে স্ট্রোক করার পর তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে ছয়টার দিকে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান অধ্যাপক এমাজউদ্দীন।
প্রফেসর ড. এমাজউদ্দীন আহমদ ১৯৩২ সালের ১৫ ডিসেম্বর তৎকালীন মালদাহ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও ভারতের কিছু অংশ) জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের ‘গোহাল বাড়ি’ এলাকায় পরিবারসহ দীর্ঘদিন বসবাস করেন প্রফেসর এমাজউদ্দীন।
মহান ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে, ১৯৫২ এর পরবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ছাত্রনেতা হিসেবে অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ কারাবরণও করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য এবং উপাচার্য (১ নভেম্বর ১৯৯২-৩১ আগস্ট ১৯৯৬] হিসেবে দীর্ঘদিন সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ (ইউডা) ভিসি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে তুলনামূলক রাজনীতি, প্রশাসন-ব্যবস্থা, বাংলাদেশের রাজনীতি, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি, দক্ষিণ এশিয়ার সামরিক বাহিনী সম্পর্কে গবেষণা করেছেন। এসব ক্ষেত্রে সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ায় তিনি বিশেষজ্ঞ হিসেবেও প্রখ্যাত। দেশ বিদেশের খ্যাতনামা জার্নালে তাঁর প্রকাশিত গবেষণামূলক প্রবন্ধের সংখ্যা শতাধিক।
শিক্ষাক্ষেত্রে অবদান এবং সৃজনশীল লেখার জন্যে তিনি দেশ ও বিদেশে বিশেষভাবে সম্মানিত হয়েছেন। সৃষ্টিশীল গবেষণা ও আলেখ্য রচনার জন্য ‘মহাকাল কৃষ্টি চিন্তা সংঘ স্বর্ণপদক’, জাতীয় সাহিত্য সংসদ স্বর্ণপদক, জিয়া সাংস্কৃতিক স্বর্ণপদক অর্জন করেন। শিক্ষাক্ষেত্রে অনবদ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ১৯৯২ সালে একুশে পদক, মাইকেল মধুসুদন দত্ত গোল্ড মডেল, শেরে বাংলা স্মৃতি স্বর্ণপদক, ঢাকা সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক স্বর্ণপদক, বাংলাদেশ যুব ফ্রন্ট গোল্ড মেডেল, রাজশাহী বিভাগীয় উন্নয়ন ফোরাম স্বর্ণপদকসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বহু পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেন।
তিনি বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী হিসেবে সমধিক পরিচিত ছিলেন। বিভিন্ন সময় গঠনমূলক পরামর্শ দিতেন এবং বিভিন্ন ইস্যুতে তার মতামতকে গুরুত্ব দেয়াও হয়েছে।
তাঁর লিখিত গ্রন্থের সংখ্যা অর্ধশতাধিক। লিখিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল: রাষ্ট্র বিজ্ঞানের কথা(১৯৬৬) মধ্যযুগের রাষ্ট্র চিন্তা (১৯৪৫) তুলানামূলক রাজনীতি: রাজনৈতিক বিশ্লেষণ (১৯৮২), বাংলাদেশে গণতন্ত্র সংকট (১৯৯২), সমাজ ও রাজনীতি (১৯৯৩), গণতন্ত্রের ভবিষৎ ( ১৯৯৪), শান্তি চুক্তি ও অন্যান্য প্রবন্ধ (১৯৯৮), আঞ্চলিক সহযোগিতা, জাতীয় নিরাপত্তা (১৯৯৯), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য প্রবন্ধ (২০০০)।
শিক্ষাক্ষেত্রে অনবদ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ ১৯৯২ সালে একুশে পদক পান অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ। জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী এ শিক্ষাবিদ ও দার্শনিকের মৃত্যুতে আমরা শোকাভিভূত। মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁকে ক্ষমা করে জান্নাতুল ফেরদৌসের আলা মাকাম নসিব করুন মাবুদের দরবারে এই ফরিয়াদ মনেপ্রাণে।