বিট কর্মকর্তার সহযোগিতায় কুলাউড়ায় দুটি বাঁশ মহাল ধ্বংস
একুশে জার্নাল ডটকম
অক্টোবর ২৫ ২০২০, ২০:৪৯

মারজান আহমদ কুলাউড়া(মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি: মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলায় দুটি বাঁশমহালের প্রায় ৩০ একর জায়গার বাঁশ কেটে সাবাড় করছে ভূমিখেঁকো একটি মহল। সামাজিক বনায়নের নামে স্থানীয় বিট কর্মকর্তার সহযোগিতায় মহালের এসব বাঁশ কেটে সাবাড় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কুলাউড়ার বেগুনছড়া ও লবণছড়া বাঁশমহালে প্রায় ৩০ একর জায়গা রয়েছে। ৩-৪ মাস থেকে নলডরি বিট কর্মকর্তা অর্জুন কান্তি দস্তিদারের সহযোগিতায় বেগুনছড়া ও লবণছড়া মৌজার প্রায় ৩০ একর জায়গা থেকে মুলি ও মাকাল প্রজাতির বাঁশ কেটে ফেলেছে একটি মহল। যার আনুমানিক বাজারমূল্য ৮ লাখ টাকা হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পানজুমের অনেক শ্রমিকরা জানান, স্থানীয় বিট কর্মকর্তা অর্জুন কান্তি দস্তিদার বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে সামাজিক বনায়নের নামে বস্তিবাসীদের দিয়েই এসব বাঁশ কর্তন করাচ্ছেন। আর কর্মধা ইউনিয়নের নলডরি গ্রামের লিটন হচ্ছেন এর মূল হোতা।
প্রত্যক্ষদর্শী ওই শ্রমিকরা আরো জানান, বাঁশ কর্তনের বিষয়টি বিট কর্মকর্তা অর্জুন কান্তি দস্তিদারকে জানালেও তিনি বিষয়টি ধামাচাপা দিতে স্থানীয় খাসিয়াদের উপর দোষ চেপে অযথা তাদের দায়ী করেন।
সরেজমিন দেখা গেছে, বেগুণছড়া বাঁশমহালের পূর্ব-দক্ষিণ পাশের কয়েক একর জায়গায় মুলি ও মাকাল বাঁশ কেটে একেবারে সাবাড় করা হয়েছে। জানতে চাইলে সেখানকার স্থানীয় পানজুম শ্রমিকরা জানান, প্রায় সপ্তাহখানেক আগে এসব বাঁশ কাটা হয়েছে। ওই শ্রমিকরা আরো জানান, ৩/৪ মাস আগ থেকেই এভাবে বাঁশ কাটা হচ্ছে মহাল থেকে। কাটা বাঁশ শুকিয়ে গেলে তা আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়। তারা আরো জানান, এভাবে চললে এক সময় মহালে আর বাঁশ থাকবে না। ফলে একদিকে পরিবেশ তার ভারসাম্য হারাবে, অন্যদিকে সরকার বঞ্ছিত হবে বড়ধরনের রাজস্ব আয় থেকে।
খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে, নলডরি বিট কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বে) অর্জুন কান্তি দস্তিদারের সহযোগিতায় এর আগেও ছোটকালাইগিরি, বড়কালাইগিরির মহাল থেকে বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বাঁশ ও গাছ সাবাড় করা হয়েছে। স্থানীয়রা ওই বিট কর্মকর্তার কাছে মহালের বাঁশ কাটার অভিযোগ করলে তিনি সরেজমিন যাচ্ছেন, যাবেন বলে আর যাওয়া হয়নি।
স্থানীয় পানজুম শ্রমিক ও খাসিয়ারা অভিযোগ করে বলেন, ওই বন কর্মকর্তার যোগসাজশে এবং সহায়তায় বন একেবারে উজাড় হয়ে যাচ্ছে। হুমকির মুখে রয়েছে বেগুনছড়া, লবণছড়ার বাঁশ ও বনসহ অন্যান্য বনাঞ্চল। নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি লবণছড়া ও বেগুনছড়া মহালের কর্তনকৃত বাঁশ সরেজমিন দেখতে গিয়ে বিট কর্মকর্তা অর্জুন অদৃশ্য কারণে অর্ধেক রাস্তা থেকে ফিরে আসেন। ওই সূত্রটি আরো জানায়, অর্জুন কান্তি দস্তিদার অযথা খাসিয়াদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে তাদের হয়রানি করা হচ্ছে। তার খুঁটির জোর নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
জানতে চাইলে নলডরি বিট কর্মকর্তা অর্জুন কান্তি দস্তিদার (অতিরিক্ত দায়িত্বে) তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বাঁশমহালের কয়েক একর জায়গা খাসিয়ারা জবর-দখল করে রেখেছেন। তিনি সরকারি জায়গা উদ্ধার করতে সেখানে সামাজিক বনায়নের উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, জবর-দখলকারী খাসিয়াদের বিরুদ্ধে ২০ অক্টোবর কুলাউড়া থানায় এবং ১৭ অক্টোবর মৌলভীবাজার কোর্টে একটি মামলাও দায়ের করেছেন।
সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এসএম সাজ্জাদ হোসেন জানান, বনাঞ্চলসহ মহালের বাঁশ রক্ষা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। বেগুনছড়া বাঁশমহালের বাঁশ সাবাড় হওয়ার বিষয়টি আমি জানিনা। তবে খোঁজ নিয়ে দেখব, যারা এর সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।