বিটিভি প্রদর্শিত হচ্ছে সমগ্র ভারতবর্ষে, সংসদে তথ্যমন্ত্রী
একুশে জার্নাল ডটকম
জুলাই ০৪ ২০২১, ০৭:১১

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, আমাদের দেশের টেলিভিশন পার্শ্ববর্তী দেশে প্রদর্শিত হয়। বহু বছরের প্রচেষ্টা ছিল বিটিভি যাতে ভারতে প্রদর্শিত হয়। কিন্তু সেই প্রচেষ্টা বহু বছর ধরে সফল হয় নাই। বহু বছর পরে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে পুরো ভারতবর্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন ফ্রি ডিটিএইচ’র মাধ্যমে প্রদর্শিত হচ্ছে এবং একই সাথে বাংলাদেশের চ্যানেলগুলো। কেউ দেখে আর না দেখে সেটি ব্যক্তিগত ব্যাপার, কিন্তু প্রদর্শিত সুযোগ ছিল না সেই বিটিভি সমগ্র ভারতবর্ষে প্রদর্শিত হচ্ছে।
শনিবার (০৩ জুলাই) একাদশ জাতীয় সংসদের ত্রয়োদশ অধিবেশনে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট আইন-২০২১ পাসের আগে বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যদের জনমত যাচাই-বাছাইয়ের প্রস্তাবের জবাব দিতে গিয়ে মন্ত্রী একথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সকাল ১১টায় অধিবেশন শুরু হয়।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, সমগ্র ভারতের, সমস্ত রাজ্যে বিটিভি প্রদর্শিত হচ্ছে। ত্রিপুরা, গোহাটি, কলকাতায় বেশ কিছু চ্যানেল প্রদর্শিত হয়। দুই দেশের সরকারের কোন সমস্যা নেই। ভারত সরকারের পক্ষ থেকে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই কিন্তু যারা ক্যাবল অপারেটর তাদের পক্ষ থেকে উচ্চ ফি দাবি করা হয়। সেই উচ্চ ফি দিয়ে যেহেতু সেখানে আমাদের চ্যানেলগুলো প্রদর্শন করে তাদের জন্য অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হচ্ছে না সেজন্য সেটি হচ্ছে না। এই উচ্চ ফি নিয়ে আলোচনা করছি। কমানোর জন্য আলোচনা করছি।
তিনি বলেন, আকাশ সংস্কৃতির কারণে সংস্কৃতিতে হিংস্র থাবা নেমে এসেছে টেলিভিশনে, একই সাথে ওটিটি প্লাটফর্ম, মোবাইলের মাধ্যমে নেটফ্লিক্সসহ নানা কিছুর কারণে মানুষ আগের মতো হলে যায় না। এটি শুধু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট নয় এটি সমগ্র বিশ্বব্যাপী প্রেক্ষাপট। বোম্বে যেটিকে চলচ্চিত্রের রাজধানী বলা হয়, সেখানে গত ১০ বছরের ৫০টির বেশি সিনেমা হল বন্ধ হয়েছে। তবে সেখানে আবার সিনেপ্লেক্স গড়ে উঠেছে। আমাদের দেশেও সিনেপ্লেক্স দিন দিন বাড়ছে। প্রথমে একটি ছিল এখন ৬-৭টি আছে।
সিনেমা হল বাড়ানো এবং পুরনো সিনেমা হল সংস্কারের সরকারের গৃহিত পদক্ষেপ তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, মানুষের সামর্থ অনেক বেড়ে যাওয়ায় সিনেমা হল আধুনিকায়ন করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। সেজন্য সিনেমা হল যেন বৃদ্ধি পায় বা বন্ধ হওয়া সিনেমা হল পুনরায় চালু করা যায় সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে ১ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠন করা হয়েছে। প্রথমে ৫০০ কোটি পরে আরও ৫০০ কোটি, প্রয়োজনে আরও বাড়ানো যাবে। যে তহবিল থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম শহরে বা বিভাগীয় শহরে ৫ শতাংশ সুদে, বিভাগীয় শহরের বাইরে সাড়ে ৪ শতাংশ সুদে লোন পাবে দশ বছর মেয়াদি। সেই লোন নিয়ে নতুন সিনেমা হল নির্মাণ করতে পারবে আবার যেগুলো বন্ধ হয়ে গেছে সেগুলো পুনরায় চালু করতে পারবে। করোনার কারণে এই সুবিধা এখনো সবাই নিতে পারে নাই। আশাকরি আগামী ১-২ বছরের মধ্যে অনেক নতুন নতুন সিনেমা হল নির্মিত হবে। বন্ধ সিনেমা হল পুনরায় চালু হবে। সিনেমা হলের সংখ্যা বাড়লে সিনেমাও বাড়বে।
চলচ্চিত্র শিল্পীদের বাস্তব জীবনের চিত্র তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, আমরা চলচ্চিত্র শিল্পীদের সিনেমায় অনেক ঝলমলে জীবনের কাহিনী দেখি, কিন্তু পরিণত বয়সে চলচ্চিত্র শিল্পীদের জীবনটাও একটা কাহিনী হয়ে যায় অনেকক্ষেত্রে। চলচ্চিত্র শিল্পীরা যারা একসময় মানুষের কাছে স্বপ্নের মানুষ ছিল, স্বপ্নের অভিনেতা ছিল, স্বপ্নের অভিনেত্রী ছিল তাদের যে কি রকম অবস্থা হয় (অনেকের ক্ষেত্রে) করুণ জীবন সেটি যারা জানেন তারা বলতে পারবেন। তারা সেই কষ্টের কথা বলতেও পারেন না। অনেকের গাড়ি আছে তেলের অভাবে গাড়ি চালাতে পারেন না এমন ঘটনাও আছে। সুতরাং সেজন্যই এই বিল আনা হয়েছে। চলচ্চিত্র শিল্পে স্বর্ণালী দিন ছিল। সেই স্বর্ণালী দিন ফিরিয়ে আনার জন্য ইতিমধ্যে অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় চলচ্চিত্র নির্মাণের অনুদান দ্বিগুণ করেছি। অনুদানের অংক বাড়িয়েছি আগে কর্মাশিয়াল ছবিতে অনুদান দেওয়া হত না এখন আর্ট ফিল্মের পাশাপাশি কর্মাশিয়াল ছবিতেও অনুদান দেওয়া হচ্ছে। ভালো ভালো ছবি নির্মিত হয়েছে। ভালো ছবিগুলো আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছে। দর্শক বেড়েছে ঠিক এদেশে না ভারতেও প্রচুর দর্শক টেনেছে এমন অনেক অনুদানের ছবি নির্মিত হয়েছে এবং হচ্ছে।
তিনি বলেন, এবছর ২০টি চলচ্চিত্রে অনুদান দিয়েছি। তারমধ্যে ১০টি পূর্ণ দৈর্ঘ এবং ১০টি স্বল্প দৈর্ঘ চলচ্চিত্রে অনুদান দেওয়া হয়েছে। অনেক ভালো ভালো চলচ্চিত্র নির্মিত হচ্ছে। একথা সত্য যে হল কমে গেছে।
তিনি আরও বলেন, বিদেশি টেলিভিশন সিরিয়ালগুলো ডার্বিং করে প্রদর্শন করা হচ্ছে। সেগুলোকে একটি কমিটির মাধ্যমে ছাড়পত্র নেওয়ার বিধান চালু করেছি। যথেচ্ছভাবে এধরনের সিনেমা সিরিয়াল বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমাদের দেশেও যাতে ভালো ভালো সিনেমা নির্মিত হয় সেজন্য উৎসাহ প্রদান করা হচ্ছে।
মন্ত্রী বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে বেশ কয়েকটি শর্টফিল্মের জন্য অনুদান দেওয়া হয়েছে। করোনার কারণে কাজগুলো ঠিকভাবে হচ্ছে না। বঙ্গবন্ধু মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে বাংলাদেশ এবং ভারতের যৌথ প্রযোজনায় বঙ্গবন্ধুর ওপর একটি ভালো ছবি নির্মিত হচ্ছে। আশা করছি এ বছরের মুক্তি লাভ করবে। একই সাথে একটি হলিউড মুভিও নির্মাণ হচ্ছে। যেটিরও কাজ এগিয়ে গেছে যেটির অভিনয় বাংলাদেশেও হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যে চলচ্চিত্র হচ্ছে সেটি অন্যান্য বিশ্ববিখ্যাত লোকদের নিয়ে করা চলচ্চিত্রকে ছাড়িয়ে যাবে।