বাহুবল উলামা পরিষদের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি সম্পন্ন
একুশে জার্নাল
আগস্ট ৩০ ২০১৮, ০৭:৪০
হোসাইন আহমদ বাহুবলী :
গতকাল বুধবার (২৯ আগস্ট) হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উলামা পরিষদের উদ্যোগে স্থনীয় মাদরাসাগুলোতে চারাগাছ রোপণের মাধ্যমে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হয়।
বিশ্বমানবতার মুক্তির সনদ মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলা্ইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মতের কোন কষ্ট ক্লেশ বরদাস্ত করার জন্য কখনও প্রস্তুত ছিলেন না। কি পারলৌকিক কি ইহলৌকিক।
নবী প্রেরণের মূল উদ্দেশ্য যদিও পরকালীন মুক্তি তথাপিও তিনি তাঁর উম্মতের ইহকালীন কল্যাণ চিন্তা এড়িয়ে যাননি।
তাইতে তিনি মদীনার খেজুরচাষী সাহাবায়ে কেরামকে তা’বীরে নাখল (নর গাছের ফুলের সাথে মাদি গাছের ফুলের সম্মিলন, যাতে ফলন বেশি হয়) করতে নিষেধ করেও আবার উম্মতের জাগতিক কল্যাণের লক্ষ্যে পূনরায় অনুমতি দিতে গিয়ে যুগান্তকারী এক ব্যাপক সূত্র বলেছিলেন انتم اعلم بأمور دنياكم দুনিয়াবী উন্নয়নের ব্যাপারে তোমাদেরকে স্বাধীনতা দিলাম।
অপরদিকে নবীজির বর্ণিত সকল পারলৌকিক কল্যাণের মাঝেও ইহলৌকিক কল্যাণ খোঁজে পাচ্ছেন গবেষকেরা যুগযুগ ধরে। হাকীমুল উম্মত আল্লামা আশরাফ আলী থানভী রা. একটি কবিতা রচনা করেছেন। যার নাম المصالح العقلية للأحكام النقلية (ধর্মীয় বিধানাবলী পার্থিব উপকার)। এতে তিনি ধর্মীয় বিধাগুগোর সূক্ষ্ম সূক্ষ যুক্তি, দর্শন, কল্যাণ উল্লেখ করেছেন। প্রমাণ করেছেন ইসলামের কোন বিধান কল্যাণহীন নয়।
বর্তমান যুগে বৃক্ষরোপণকে একটা সামাজিক, রাজনৈতিক, রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি মনে করা হয়। অথচ এর একটা ধর্মীয় ভিত্তিও যে আছে এ কথা অনেকেই জানেন না। তাই কোন প্রকার বাধ্যবাধকতা না থাকলে কেউ এটা করতে চায় না। সওয়াবের নিয়তে করেন না। যদিও হাদীসে আছে,
عَن أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم (إِنْ قَامَتْ السَّاعَةُ وَبِيَدِ أَحَدِكُمْ فَسِيلَةٌ فَإِنْ اسْتَطَاعَ أَنْ لاَ تَقُومَ حَتَّى يَغْرِسَهَا فَلْيَفْعَلْ
হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন,“কিয়ামত কায়েম হয়ে গেলেও তোমাদের কারো হাতে যদি কোন গাছের চারা থাকে এবং সে তা এর আগেই রোপণ করতে সক্ষম হয়, তবে যেন তা রোপণ করে ফেলে। (আহমাদ ১২৯৮১, বুখারীর আদাব ৪৭৯, বায্যার ৭৪০৮, সহীহুল জামে’ ১৪২৪) আল লু’লু ওয়াল মারজান, হাদিস নং ৯৬৩ )আরেক হাদীসে আছে,عَنْ أَنَسٍ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم “ مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَغْرِسُ غَرْسًا، أَوْ يَزْرَعُ زَرْعًا، فَيَأْكُلُ مِنْهُ طَيْرٌ أَوْ إِنْسَانٌ أَوْ بَهِيمَةٌ، إِلاَّ كَانَ لَهُ بِهِ صَدَقَةٌ ”.
(আনাস ইবনে মালিক (রা.)
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে কোন মুসলমান ফলবান গাছ রোপণ করে কিংবা কোন ফসল ফলায় আর তা হতে পাখী কিংবা মানুষ বা চতুষ্পদ জন্তু খায় তবে তা তার পক্ষ হতে সদাকা বলে গণ্য হবে। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২৩২০)
আজ বিজ্ঞানের গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষফলস্বরূপ বৈশ্বিক উষ্ণতা রোধে বৃক্ষরোপণের বিকল্প নেই। মানুষ এই ক্ষুদ্র কল্যাণটা মাথায় নিয়ে ঘুরছে।
বাহুবল উলামা পরিষদ এই ভুল ভেঙে দিতে চায় । উপজেলার মসজিদ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহে বৃক্ষরোপণ করে সকলের মাঝে এই মেসেজ পৌঁছে দিতে চায় যে এটা একটা সওয়াবের কাজ। ধর্মপ্রাণ সকলেরই এই কাজে এগিয়ে আসা উচিত।
আমরা আপাতত যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছি তা হলো,
১} আলহাজ্ব মর্তুজা আলী তা’লীমুল কুরআন নূরানী মাদরাসা সস্তিপুর, পুটিজুরী, বাহুবল।
২} শহীদ ইব্রাহিমিয়া দারুল উলুম মাদ্রাসায় দিগাম্বর পুটিজুরী, বাহুবল।
৩} জামিআ নিজামিয়া মাদরাসা ও এতিমখানা কোনা ডুবাঐ মাদরাসা, পুটিজুরী, বাহুবল।
৪} জামিআ হুসাইনিয়া মাখযানুল উলূম মাদরাসা অলুয়া, সাতকাপন, বাহুবল।
৫} জামিআ শরফিয়্যা দারুল উলুম ভেড়াখাল, বাহুবল।
৬} বায়তুস সালাম জামে মসজিদ সংলগ্ন
দৌলতপুর তাহফীজুল কুরআন নূরানী মাদরাসা।
৭} হযরত হাফছা রাঃ মহিলা মাদ্রাসা, ভৈরবীকোনা, চারগাও, ৫ নং লামাতাশী ইউনিয়ন, বাহুবল।
৮} জামিআ মুশাররাফিয়া বড়ইউড়ি মাদ্রাসা বাহুবল।
আমরা ক্রমান্বয়ে উপজেলার সকল প্রতিষ্ঠান সমূহ বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসতে চাই। চাই কেউ উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজে করুক। চাই আমাদের সহযোগিতা নিয়ে। আমরা প্রস্তুত ইনশা আল্লাহ।
-হুসাইন আহমদ বাহুবলী
সেক্রেটারী, বাহুবল উলামা পরিষদ।