বাহুবলে ছুরিকাঘাতে একজন নিহতঃ সহোদরসহ আহত দু’জন মৃত্যুর সাথে লড়ছেন
একুশে জার্নাল
আগস্ট ১৯ ২০১৮, ১০:৩৪

শাহ মোঃদুলাল আহমেদ বাহুবল হবিগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
হবিগঞ্জের বাহুবলে পুটিজুরীর ইউ/পির শাহনেওয়াজ আলম নামে এক যুবকের ছুরিকাঘাতে ওয়াহিদ মিয়া (৪০) মিয়া নামে এক ব্যক্তি মারা গেছেন। তার সহোদর কাওসার মিয়া (২৫) ও আব্দুল আলী নামে ছুরিকাহত আরো দু’জন মৃত্যুর সাথে লড়ছে।
ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার রাত ৮টার দিকে উপজেলার পুটিজুরী বাজারে। নিহত ওয়াহিদ মিয়া উপজেলার পুটিজুরী ইউনিয়নের মীরেরপাড়া গ্রামের আব্দুল্লাহ’র পুত্র।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার রাত ৮টার দিকে উপজেলার পুটিজুরী বাজারের ফুটপাতের চা স্টলে শেওড়াতুলী গ্রামের মৃত আব্দুল মনাফের পুত্র শাহ নেওয়াজ হোসেন উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে মীরেরপাড়া গ্রামের আব্দুল্লাহর পুত্র ওয়াহিদ মিয়া (৪০) ও তার সহোদর কাওসার মিয়া (২৫) কে।
এ সময় চা স্টল মালিক একই গ্রামের আব্দুল আলীও (৩৭) ছুরিকাহত হন। তাৎক্ষণিক স্থানীয় লোকজন তাদের বাহুবল হাসপাতালে নিয়ে এলে ওয়াহিদ মিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন এবং কাওসার ও আব্দুল আলীকে সিলেট প্রেরণ করেন। কেন এ হত্যাকান্ড- এ প্রশ্নের উত্তর জানতে গিয়ে প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে দু’ধরণের তথ্য পাওয়া গেছে।
এক পক্ষ বলছেন, উপজেলার পুটিজুরী ইউনিয়নের শেওড়াতুলি গ্রামের গরু ব্যবসায়ী নিজাম উদ্দিন (৪৫)-এর সাথে স্বস্তিপুর গ্রামে গরু কেনাকে কেন্দ্র করে নিকটবর্তী স্নানঘাট ইউপি চেয়ারম্যান ফেরদৌস আলমের কাছে নাজেহাল হন।
বিষয়টি জানার পর নিজাম উদ্দিনের স্বজন একই গ্রামের মৃত আব্দুল মনাফের পুত্র শাহনেওয়াজ হোসেন ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে ইউপি চেয়ারম্যান ফেরদৌস আলমের উপর।
এর বিরোধের জের ধরে ইউপি চেয়ারম্যান ফেরদৌস আলমকে মারধোর করতে শাহনেওয়াজ হোসেন ছুরি নিয়ে পুটিজুরী বাজারে অবস্থান নেয়।
শনিবার রাত ৮টার দিকে শাহনেওয়াজ হোসেন পুটিজুরী বাজারের ফুটপাতে স্থাপিত আব্দুল আলীর চা স্টলে বসে চেয়ারম্যান ফেরদৌস আলমকে গালিগালাজ করতে থাকে। এক পর্যায়ে অতিউৎসাহে মীরেরপাড়া গ্রামের আব্দুল্লাহর পুত্র দুবাই প্রবাস ফেরত ওয়াহিদ মিয়া (৩৫) প্রতিবাদ করেন।
এ নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ক্ষুব্ধ শাহনেওয়াজ হোসেন ছুরিকাঘাত করে ওয়াহিদ মিয়াকে। সাথে সাথে এগিয়ে আসেন স্টল মালিক আব্দুল আলী (৩৭) ও ওয়াহিদ মিয়ার ভাই কাওসার মিয়া (২৫)।
এসময় আব্দুল আলী এবং কাওসার মিয়াও ছুরিকাহত হন। অপর পক্ষের দাবি, একটি রাস্তা সংষ্কারের ঠিকাদারী করছিলেন মীরেরপাড়া গ্রামের ওয়াহিদ মিয়া। এ ঠিকাদারীর ভাগ চাইছিলেন শেওড়াতলী গ্রামের শাহনেওয়াজ হোসেন।
এ নিয়ে উভয়ের মাঝে বিরোধ চলছিল। শনিবার রাত ৮টায় এ নিয়ে আব্দুল আলীর স্টলে তর্কবিতর্কের এক পর্যায়ে শানেওয়াজ হোসেন একে একে ছুরিকাঘাত করে ওয়াহিদ মিয়া, তার সহোদর কাওসার মিয়া ও স্টল মালিক আব্দুল আলীকে।
ঘটনার পর মীরেরপাড়া গ্রামের লোকজনের মাঝে শোক ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
বিক্ষুব্ধ লোকজন কয়েক দফা পুটিজুরী বাজারে উঠে প্রতিপক্ষের লোকজনকে খোজাখুজি করে।
এ সময় আরো দু’ব্যক্তি আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
রাত ১২টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বাহুবল সার্কেলের সিনিয়র এএসপি পারভেজ আলম চৌধুরী, বাহুবল মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মাসুক আলী ও ইন্সপেক্টর (তদন্ত) গোলাম দস্তগীরসহ বিপুল সংখ্যক পুলিশ অবস্থান নিয়েছেন।
এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।উল্লেখ্য শাহনেওয়াজ প্রায় বছর খানেক পূর্বে এক মহিলাকে ও মারধোর করে, এবং সে নানা অপরাধ কর্মকান্ডে জরিত থাকার কথা জানান এলাকাবাসী।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে স্নানঘাট ইউপি চেয়ারম্যান ফেরদৌস আলম বলেন, শাহনাজ মিয়া পুটিজুরী ইউপি চেয়ারম্যান শামছুদ্দিন তারা মিয়ার ভাগিনা।
তার সাথে আমার কোন বিরোধ নেই। শুনেছি রাস্তা নিয়ে বিরোধের জের ধরে এ ঘটনাটি ঘটেছে।
রাত ১২টায় বাহুবল সার্কেলের সিনিয়র এএসপি পারভেজ আলম চৌধুরী, বাহুবল মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মাসুক আলী ও ইন্সপেক্টর (তদন্ত) গোলাম দস্তগীর ঘটনাস্থল থেকে জানান, নিহত ওয়াহিদ মিয়ার ভাই আহত কাওসার মিয়াকে সিলেট নেওয়ার পথে মারা গেছেন।
একঘন্টা পর রাত ১টায় তারা গনমাধ্যমদের জানান, আমরা প্রথমে খবর পেয়েছিলাম কাওসার মারা গেছেন। প্রকৃত পক্ষে তিনি মারা যাননি, ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তার অস্ত্রোপাচার চলছে। তার আবস্থা আশঙ্কাজনক।