বাল্লা স্থলবন্দরে ভূমির জটিলতা: রক্ত দিয়ে ভূমি রক্ষার শপথ ভূমি মালিকগণের

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

সেপ্টেম্বর ১০ ২০২০, ১৯:৩৮

নিজস্ব প্রতিবেদক, হবিগঞ্জ: বাল্লা স্থলবন্দরে সরকারিভাব ভূমি অধিগ্রহনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কিন্তু এই ভূমি অধিগ্রহন নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে জটিলতা। ভূমি মালিকদের অভিযোগ, যে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশী মূল্যে সেখানে বিক্রি হয় ভূমি। আর সরকার যে টাকা দিবে তা দিয়ে নতুন বাড়ী করা দূরে থাক, বাড়ীর জমির জন্য নতুন ভূমি ক্রয়ও করতে পারবেন না।

বাল্লা স্থলবন্দরের জন্য যাদের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে সেই দুই শতাধিক ভূমি মালিকের এখন মাথায় হাত। তারা যথাযথ ভূমির দাম না পেলে দুর্বার আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যথাযথ ক্ষতিপূরণ না পেলে রক্ত দিয়ে জমি রক্ষার শপথ নিয়েছেন তারা। এমনটাই জানিয়েছেন তারা।

সূত্রে জানা যায়, হবিগঞ্জ সীমান্তের বাল্লা স্থলবন্দরটি ১৯৫১ সালে ৪.৩৭ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়। এ স্থান দিয়ে খোয়াই নদীর পানিতে পায়ে হেটে ও নৌকায় দু’দেশের মাঝে ব্যবসা বাণিজ্য চলে আসছে। এখানে রয়েছে চেকপোষ্টসহ সীমান্ত ঘাটি। ২০১২ সালের ১১ জুন কেদারাকোট নামক স্থানে স্থলবন্দর স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে জন্য বাংলাদেশ-ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি যৌথ প্রতিনিধি দল সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করে। এর আগে ২০১১ সালের ৩০ জুলাই তখনকার বাংলাদেশ রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ ও বর্তমান বন্দর ও কেদারাকোট উভয় স্থান পরিদর্শন করেন এবং স্থলবন্দর উন্নয়ন-এর গুরুত্ব অনুধাবন করে কেদারাকোট এলাকায় বন্দর স্থাপনের কথা বলেন। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে ত্রিপুরায় অনুষ্ঠিত সীমান্ত সম্মেলনে বাল্লা স্থলবন্দর প্রতিষ্ঠায় ঐক্যমত পোষন করে দুই দেশ।

কেদারাকোট এলাকায় নতুন বন্দর হবে জানতে পেরে দেশের বড় বড় শিল্প মালিক ও ব্যবসায়ীরা ওই এলাকায় জমি ক্রয় শুরু করলে বাড়তে থাকে জমির দাম। বন্দরকে কেন্দ্র করে ব্যবসা বাণিজ্যের আশায় সেখানকার জমির রেজিস্ট্রি মূল্যের অধিক মূল্যেও জমি ক্রয় করেন অনেকে।

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে নৌ পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের অধিনস্থ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ চুনারুঘাট উপজেলার ১৬২নং জেএলস্থিত গাজিপুর মৌজায় ১৩ একর ভুমি অধিগ্রহণ করে। ভুমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রশাসনিক অনুমোদন করা হলে জেলা প্রশাসন ও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সমন্বয়ে যৌথ তদন্তপূর্বক জেলা ভুমি বরাদ্দ কমিটি কর্তৃক অধিগ্রহণের প্রস্তাব চুড়ান্ত অনুমোদন করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালের ২৩ জানুয়ারী ৪ ধারা নোটিশ জারি করা হয়। পরে ৭ ধারা নোটিশও জারি করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের ভূমি অধিগ্রহণ আইন স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল আইনের ২০১৭ অনুযায়ী অধিগ্রহণকৃত ভুমির মূল্য নির্ধারণ করার জন্য উক্ত ২০১৭ সনের ২১নং আইন নীতিমালার ৯নং অনুচ্ছেদের ‘ক’ উপ অনুচ্ছেদের বিধান মতে মুল্য নির্ধারণের নির্দশনা রয়েছে। বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে এই বিধান কার্যকর আছে। স্বাধীন বাংলাদেশের পর থেকে এখন পর্যন্ত একটি অধিগ্রহণও এই নীতিমালার বাইরে হয়নি।

ক্ষতিগ্রস্থ ভূমি মালিক তারা মিয়া হবিগঞ্জের খবর কে জানান, তার বাড়ীসহ ৮ শতক জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। সেখানে ১ থেকে দেড় লাখ টাকা শতক জমি বিক্রি হচ্ছে। সরকার যদি কম টাকা দেয় তাহলে আমরা জমি দিব না।

দুবাই প্রবাসী ফজলুল হক জানান, তার ১২ শতক জমি অধিগ্রহণ হয়েছে। সেখানে জমির অনেক মূল্য। কিন্তু আমরা শুনতে পারছি সরকার নাকি আমাদেরকে কম মূল্য দিতে চায়। আমরা তা মানবো না। সৌদি আরব প্রবাসী ক্ষতিগ্রস্থ জামাল চৌধুরী জানান, তাদের ২০ শতক ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এই জমি অনেক মূল্যে বিভিন্ন লোকজন কিনতে চাইলেও আমরা বিক্রি করিনি। সরকার আমাদেরকে সঠিক মূল্য না দিলে আমরা জমি দিব না।

গাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হুমায়ন চৌধুরী হবিগঞ্জের খবর কে জানান, বন্দর এলাকায় বড় বড় ব্যবসায়ীরা জমি কিনায় সেখানে অনেক দাম। অধিগ্রহণের পরও বর্তমানে দুই লাখ টাকা শতক জমি বিক্রি হচ্ছে। সরকার যদি এর ছেয়ে কম মূল্য দেয় তাহলে ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিকরা তা মেনে নিবে না।

চুনারুঘাট উপজেলার সাব রেজিস্ট্রার প্রদীপ কুমার বিশ্বাস জানান, প্রত্যেক মৌজার যে নির্ধারিত মূল্য রয়েছে তার থেকে কম টাকায় কেউ রেজিস্ট্রি করতে পারবে না। তবে বেশী মূল্যে ক্রয় করে যদি বেশী মূল্য দেখিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে তাতে আইনী কোন বাধা নেই। অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে আমারা শুধু জেলা প্রশাসনকে নির্ধারিত সময়ের দলিল দিয়ে সহায়তা করি। ২০১৭ সালে গাজীপুর মৌজায় সম্পাদিত দলিলগুলো পর্যালোচনায় দেখা যায় সেখানে বেশী মূল্যে দলিল হয়েছে।

হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব তারেক মোহাম্মদ জাকারিয়া জানান, বাল্লা স্থলবন্দরের জায়গার সরকারী নিয়ম অনুযায়ী দাম নির্ধারণ করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। টাকা পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।