বালাগঞ্জ হাসপাতালে অনিয়ম, তদন্ত কমিটির পাল্টাপাল্টি বক্তব্য
একুশে জার্নাল ডটকম
জুলাই ২০ ২০২০, ২২:৩৭
আবুল কাশেম অফিক: বালাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বেশকিছু দিন থেকে বিভিন্ন অনিয়ম দূর্নীতি নিয়ে দৈনিক জালালাবাদ, টাইম সিলেট সহ কয়েকটি গণমাধ্যমে নিউজ প্রকাশিত হয়েছে।
গত ২৫ জুন ‘বালাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভূয়া ভর্তি দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা লোপাট! ’এর পর গত ৩ জুলাই ‘ এবার বালাগঞ্জ হাসপাতালে রোগীদের ভাতের বদলে চিড়া’ আর সর্বশেষ গত ১৮ জুলাই ‘অফিস টাইমেও প্রাইভেট চেম্বার করেন বালাগঞ্জ হাসপাতালের আরএমও’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ নিয়ে পুরো উপজেলাজুড়ে চলছে তুমুল আলোচনা সমালোচনা।
গত ২৫ জুন “খাবার সরবরাহে অনিয়ম” সংবাদ প্রকাশের পর ৩০ জুন নিজেদের অধীনস্থ কর্মকর্তাদের দিয়ে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। যোগাযোগ করেও আজ পর্যন্ত কি তদন্ত হয়েছে তা জানা সম্ভব হয়নি।
এ নিয়ে টিএইচও এবং তদন্ত কমিটির সভাপতি ও সদস্যদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য পাওয়া গেছে।
তদন্ত কমিটির সদস্য হাসপাতালের সহকারী ডেন্ডাল সার্জন ডাক্তার অসিত কুমার রায় বলেছেন, রিপোর্টের কাজ এখনও চলতেছে, আপনি অফিসে যোগাযোগ করুন এব্যাপারে কথা না বলতে উর্ধতন কর্তপক্ষ নিষেধ করেছেন পরে অবস্য রিপোর্ট জমা হয়েছে স্বীকার করেছে।
তদন্ত কমিটির আরেক সদস্য হাসপাতালের অফিস সহকারী মো: রুহুল আমিন বলেন, রিপোর্ট জমা দেয়া হয়নি। এ ব্যাপারে আপনি অফিসে এসে কথা বলেন, উর্ধতন কর্তৃপক্ষ থেকে এব্যাপার কথা না বলতে বলা হয়েছে।
তদন্ত কমিটির সভাপতি বোয়ালজুড় ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের সহকারী সার্জন ডা. শুভাশীষ ভৌমিক বলেছেন, তদন্তে সময় লাগবে এজন্য সময় বর্ধিত করা হয়েছিল, তদন্ত শেষ হলেই প্রতিবেদন দেয়া হবে। এর বাহিরে তিনি আর কিছু বলতে চান নি।
অন্যদিকে, টিএইচও ডা. এস.এম শাহরিয়ার বলেছেন, তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। তবে এটি বিষয় ফোনে কথা বলা যাবেনা আফিসে আসেন।
অপরদিকে তদন্ত কমিটি নিয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে জানা গেছে ভিন্ন খবর, ডা. শুভাশীষ কুমার ভৌমিকের কর্মস্থল বোয়ালজুড় ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে থাকলেও গত প্রায় তিন মাসেরও বেশী সময় ধরে তাকে কর্মস্থলে দেখা যায়নি।
অন্যদিকে, গত ১৪ জুন করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যান বালাগঞ্জ উপজেলার গণমাধ্যম কর্মী আজকের সিলেট ডটকম বালাগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি লিটন দাস লিকন। মৃত্যুর আগের দিন ১৩ জুন করোনা পরীক্ষার জন্য তার নমুনা নেয়া হলেও আজ পর্যন্ত এর রিপোর্ট আসেনি। কিন্তু এর পর সংগ্রহ করা সকল নমুনার রিপোর্ট ইতিমধ্যে চলে এসেছে।
বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়া মহামারীতে সুযোগ নিচ্ছে কিছু নামধারী চিকিৎসক। এই সংকটময় পরিস্থিতিতে সরকারের ঠিকে থাকার লড়াইয়ে দেশের সিংহভাগ চিকিৎসক যেখানে দিনরাত পরিশ্রম করছেন সেখানে গুটি কয়েক চিকিৎসকের জন্য তো এই অর্জন নষ্ট হতে পারেনা। সিলেটের স্বাস্থ্য বিভাগ বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দিলে দিনরাত কাজ করছে।
সেখানে কি হচ্ছে এই বালাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং এর থেকে পরিত্রাণের উপায় কি? এসব বিষয় নিয়ে সিলেটের সিভিল সার্জন ডা: প্রেমানন্দ মন্ডলের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, লিটন দাস লিকনের নমুনা ১৩ জুন পরীক্ষার জন্য নেয়ার পর আজও রিপোর্ট না আসা অবশ্যই দুঃখজনক। আমরা প্রতিদিনই শত শত মানুষের রিপোর্ট দিচ্ছি। এখানে আসলে কি হয়েছিল তা খতিয়ে দেখতে হবে।
বালাগঞ্জ হাসপাতালে অনিয়মের একটি সিন্ডিকেট তৈরির প্রসঙ্গে বললেতিনি বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগকে সচল রাখতে আমাদের এত ত্যাগ ও পরিশ্রম কিছু মানুষের জন্য ব্যার্থ হতে পারেনা। এখানে কোন সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে কিনা, হলে সব ভেঙ্গে দেব।