বন্যায় তলিয়ে গেছে ফসল, ক্ষতিগ্রস্ত হাজারো কৃষক
একুশে জার্নাল ডটকম
জুলাই ০৪ ২০২২, ১৮:৩৪
জহিরুল ইসলাম সরকার, জুড়ী: মৌলভীবাজারের জুড়ীতে ভয়াবহ বন্যায় উপজেলার অধিকাংশ এলাকা তলিয়ে গেছে। এতে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন প্রান্তিক কৃষকেরা। প্রবল বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল ও ভারত থেকে নেমে আসা পানিতে উপজেলার ছয় ইউনিয়নের আউশ ধানের ক্ষেত, ধানের বীজতলা ও সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে। এতে বিস্তীর্ণজোড়া রকমারী সবজি ও ধানক্ষেতসহ উৎপাদিন ফসল গোলায় তুলতে না পারার শঙ্কায় কৃষকের মাথায় হাত উঠেছে। সোমবার (৪ জুলাই) সরজমিনে বন্যাকবলিত এলাকা ঘুরে এই চিত্র পরিলক্ষিত হয়েছে।
জানা গেছে, বন্যা আর পাহাড়ি ঢলে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের অন্তত ১২ হেক্টর জমিতে রকমারী সবজির আবাদ তলিয়ে গেছে। এসব সবজি ক্ষেত থেকে তুলে বাজারে নিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। কিন্তু আকষ্মিক ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে কয়েক হাজার কৃষকের সবকিছুই ছারখার করে দিয়েছে।
জানা যায়, উপজেলার অনেক কৃষক এবার তাদের জমিনে আউশ ধানের পাশাপাশি চাষ করেছিলেন কাঁকরোল, তিত করলা, বেগুন, ঝিঙে, চিচিঙ্গা, বরবটি, শসাসহ বিভিন্ন রকমারি সবজির। ইতোমধ্যে ভালো ফলন এসেছিল। বানের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় তারা এখন নিঃস্ব।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানা যায়, উপজেলার কয়েক হাজার কৃষক রকমারী সবজির আবাদ করেন। এই অবস্থায় লাগাতার ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় বেশি ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন কৃষকরা। এছাড়া আউশ ধানের ক্ষেত ও রোপা আমনের বীজতলাও পানিতে তলিয়ে গেছে। সূত্র আরও জানায়, উপজেলায় আউশ ৪৩৮০ হেক্টরের মধ্যে ৩২৫০ হেক্টর নিমজ্জিত হয়েছে। এছাড়াও রোপা আমন বীজতলার ১০ হেক্টরের মধ্যে ৬ হেক্টর এবং শাকসবজি ১২ হেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন হাওর পাড়ের কৃষকরা।
উপজেলার জায়ফরনগর ইউনিয়নের জাঙ্গীরাই গ্রামের সবজি চাষি হাবিবুর মিয়া জানান, এবার আমি জমিতে কাঁকরোল, তিত করলা, ঝিঙে, চিচিঙ্গা, বরবটি, শসাসহ বিভিন্ন রকমারি সবজির আবাদ করেছিলাম। কিন্তু বন্যার কারণে এসব সবজি তুলে বাজারে নিয়ে যাওয়ার আগেই ভয়াবহ বন্যায় সবকিছু ছারখার হয়ে গেছে। এখন সব হারিয়ে আমি পুরোপুরি নিঃস্ব।
গৌরিপুর এলাকার কৃষক নুর মিয়া জানান, আমি আড়াই কিয়ার জমিতে আউশ ধান রোপণ করেছিলাম। এবারের ভয়াবহ বন্যায় জমি তলিয়ে গিয়ে আমার সব কিছু শেষ হয়ে গেছে। আমরা সরকারের কাছে সহায়তা চাই।
জায়ফরনগর ইউনিয়নের বেলাগাঁও ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবুল কাশেম জানান, আমার এলাকার সিংহভাগ মানুষ জুড়ী নদীর দু-পাড়ে ও হাকালুকি হাওরে সবজি ফলিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। এবারের বন্যায় সবকিছু তলিয়ে যাওয়ায় সবজি চাষিসহ সকল চাষিরা বিশাল ক্ষতির শিকার হয়ে পথে বসেছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসার মুহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, অতি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় উপজেলার অনেক এলাকার ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষকরা। বন্যায় যেসকল কৃষকরা ক্ষতির শিকার হয়েছেন তাঁদের ব্যাপারে তথ্য নেওয়া হচ্ছে। পানি নেমে গেলে পুরোপুরি ক্ষতির চিত্র পাওয়া যাবে এবং পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।