বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও দর্শনকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের কোন অগ্রগতি হতে পারে না: নৌ প্রতিমন্ত্রী
একুশে জার্নাল ডটকম
আগস্ট ২৮ ২০২০, ১৭:৫৪
বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও দর্শনকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের কোন অগ্রগতি হতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে সকল বিতর্কের উর্ধ্বে রাখতে হবে। ইতিহাসকে বাদ দিয়ে পথচলা যায় না।
শুক্রবার দুপুরে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধু ও গণমাধ্যম’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বঙ্গবন্ধুকে সকল বিতর্কের উর্ধ্বে রাখার আহ্বান জানিয়ে নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কোন বিতর্ক করার প্রয়োজন নেই। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তখনই বিতর্ক হয়, যখন বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের লালন-পালন করা হয়। বিতর্ক তখনই হয়, যখন এই খুনীদের পুনর্বাসন করা হয়, যখন আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়। এই বিতর্ক থেকে যতদিন আমরা বেরিয়ে আসতে পারব না, ততদিনই আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে। আমরা চাই জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর যেই স্বপ্ন, ৩০ লাখ শহীদদের যেই স্বপ্ন, সেই স্বপ্ন এখানে বাস্তবায়ন হবে। রাজাকার, আলবদর, আল শামসদের স্বপ্ন এই বাংলাদেশে বাস্তবায়ন হতে পারে না। বঙ্গবন্ধুর প্রতি এটাই আমাদের ওয়াদা থাকবে।’
নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘পৃথিবীর ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু একমাত্র নেতা যিনি একটি রাজনৈতিক দল সৃষ্টি করেছেন। সে রাজনৈতিক দলকে জনগণের দ্বারে দ্বারে নিয়ে গেছেন। তাদের একই প্ল্যাটফর্মে এনে ঐক্যবদ্ধ করেছেন। স্বাধীনতার ডাক দিয়েছেন এবং সেই দলের নেতৃত্বেই মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়েছে, দেশ স্বাধীন হয়েছে। তার নাম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এটা পৃথিবীর ইতিহাসে দ্বিতীয়টি নেই।’
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘পাকিস্তানের কায়েদে আজম কিন্তু মুসলিম লীগ সৃষ্টি করেন নাই। তিনি মুসলিম লীগে যোগদান করেছেন। মহাত্মা গান্ধী কিন্তু কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা করেন নাই। তিনি কংগ্রেসে যোগদান করেছেন। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সৃষ্টিদর সঙ্গে ছিলেন এবং সেই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে তিনি বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছেন।’
বাকশালকে ঘিরে যারা বঙ্গবন্ধু হত্যাকে জায়েয করার চেষ্টা করে তাদের সমালোচনা করে নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বাকশালকে একটি নেগেটিভ জায়গায় ফেলে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে যে কথাগুলো বলা হয়, যেগুলো কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়।’
তিনি বলেন, ‘বাকশালের কর্মসূচিতে কিন্তু আওয়ামী লীগ একা ছিল না। তদানীন্তন যত রাজনৈতিক দল ছিল সবাই সেখানে গিয়েছিল। বাকশাল আওয়ামী লীগ বা অন্য রাজনৈতিক দলের মতো ছিল না। সেটা ছিল একটি সরকারি রাজনৈতিক দল এবং সেটার অনেকগুলো সহযোগী সংগঠন ছিল। সেগুলোর জাতীয় কমিটি ছিল। তখন বঙ্গবন্ধু কমিটি করে দিয়েছিলেন গণমাধ্যমের কী হবে! সাংবাদিক নেতাদের সেই কমিটির সুপারিশই বাকশালে অন্তর্ভূক্ত করেছিলেন বঙ্গবন্ধু।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘উপজেলা পরিষদ সিস্টেম, জেলা পরিষদের বিকেন্দ্রীকরণ বাকশালের কর্মসূচির অংশ। আজকের যে সবুজ বিপ্লব ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা বলা হয়, আজকে সেই বাকশালকেই কিন্তু ধারণ করতে হচ্ছে।’
বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে গণমাধ্যম কর্মীদের সুসম্পর্কের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকরা বঙ্গবন্ধুর চিন্তা-চেতনা আগলে রাখতেন। আজকে আমাদের দায়িত্ব বাংলাদেশকে আগলে রাখার। গণমাধ্যম এ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে বাংলাদেশের অনেক বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ একমাত্র দেশ যেখানে মুক্তিযুদ্ধের সময়েও এখানকার মানুষ বিরোধিতা করেছে। নিজ দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে দেশের মানুষের বিরোধিতা করার ঘটনা দ্বিতীয়টি আমার জানা নেই। সেই অংশটি এখনো বাংলাদেশের বিরোধিতা করছে। তারা বিভিন্নভাবে বঙ্গবন্ধুকে খাটো করার চেষ্টা করে।’
বঙ্গবন্ধু হত্যার পর কোথাও প্রতিবাদ হয়নি- এমন বক্তব্যে দ্বিমত পোষণ করে নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যার পর প্রতিবাদ হয়নি, এটা সত্য কথা নয়। খুনীদের মদদ দেয়ার জন্যই রাজনৈতিক কারণে এ কথা প্রচার করা হয়। প্রতিবাদ হয়েছে, প্রতিবাদের ভাষা ছিল ভিন্ন। বঙ্গবন্ধুকে টুঙ্গিপাড়ায় মাটিচাপা দেয়ার চেষ্টা হয়েছিল, সেখানে প্রতিবাদ হয়েছে, যে তাকে গোসল করাতে হবে। প্রতিবাদের মুখে তাকে গোসল করাতে হয়েছে। প্রতিবাদের কারণে, একজন মুসলমান হিসেবে তার জানাযা পড়ানো হয়েছে। প্রতিবাদ হয়েছে বলেই ২১ বছর পর বঙ্গবন্ধুর খুনীদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে। বিচারের রায় কার্যকর করা হয়েছে। সেই সময় অস্ত্রের মুখে অনেকে কথা বলতে পারেননি। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর জিয়াউর রহমান গণমাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর নাম ছাপাতে দেয় নাই।’
প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, ‘একসময় বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ করা যেত না। আমরা একটি কালো অধ্যায় অতিক্রম করে এসেছি। সেই কালো অধ্যায়ের উত্তরণ ঘটেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু গণমাধ্যমকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিতেন। সাংবাদিকদের রুটি-রুজির নিশ্চিত করতে আইন করে তিনিও ওয়েজ বোর্ড গঠন করে দিয়েছিলেন।’
বাংলাদেশ জার্নালের সম্পাদক শাহজাহান সরদার বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু যখন রেসকোর্স ময়দানের স্বাধীনতার ডাক দেন, সেখানে উপস্থিত ছিলাম। তার ডাকে সাড়া দিয়ে ভারতের যুদ্ধের ট্রেনিং নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেই। স্বাধীনতার পরে বঙ্গবন্ধু সংবাদপত্র নিয়ন্ত্রণ করেননি। তার সময়ে অনেকগুলো সংবাদপত্রের ডিক্লেয়ারেশন দেওয়া হয়। অনেকেই বঙ্গবন্ধুর সমালোচনা করে সংবাদ প্রকাশ করতেন। বঙ্গবন্ধু কখনো সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করেননি।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেকোনো সময় যেকোনো সাংবাদিক বঙ্গবন্ধুর সাথে কথা বলতে পারতেন। সকলের সাথে বঙ্গবন্ধু সম্পর্ক ছিল আত্মিক। বঙ্গবন্ধুর মতোই তার কন্যা শেখ হাসিনার সাথে সাংবাদিকদের আবেগের সম্পর্ক রয়েছে।’
জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সংবাদপত্রের স্বাধীনতা চেয়েছিলেন বলে প্রেস কাউন্সিল গঠন করেছিলেন। তিনি মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন গণমাধ্যমের স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধু এ দেশকে নিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তার সেই অসমাপ্ত স্বপ্ন বাস্তবায়নের কাজ করছেন তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমাদের সকলের উচিত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে সহায়তা করা।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ চৌধুরীর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ, ডিআরইউ’র সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম, সময়ের আলোর নির্বাহী সম্পাদক শাহনেওয়াজ দুলাল, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শুক্কুর আলী শুভ, ডিআরইউর সাংগঠনিক সম্পাদক হাবীবুর রহমান।