ফ্রান্সের পর এবার চীনে বিশ্বনবী (সা.) এর অবমাননা
একুশে জার্নাল
নভেম্বর ০১ ২০২০, ২২:৩২
স্টাফ রিপোর্টার:
ফ্রান্সের পর এবার চীনের সরকারি টিভিতে মহানবী (সা.)-কে অবমাননা অনলাইন ডেস্ক চীনের সরকারি টেলিভিশনেই প্রকাশিত হলো হাতে আঁকা মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর বিতর্কিত ছবি। ইন্টারনেটে সেই ছবি ভাইরাল হলেও পাকিস্তানসহ মুসলিম দেশগুলো চীনের এরকম নিন্দনীয় কাজের বিরুদ্ধে নিরব। তাদের এই নিরবতা নিয়ে সামাজিক গণমাধ্যমে ঝড় উঠছে।
ফ্রান্সের এক শিক্ষক মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ করায় দেশটিকে বয়কটের ঘোষণা করেছে পাকিস্তানসহ একাধিক দেশ। কিন্তু চীনের সরকারি চ্যানেলের এরকম নিন্দনীয় কাজের পরও নিরব ইসলামিক দেশগুলো।
ফ্রান্সের ঘটনা নিয়ে গোটা মুসলিম দুনিয়া উত্তাল। এই উত্তেজনার মধ্যেই চীন সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন চীনা সেন্ট্রাল টেলিশিন নেটওয়ার্ক (সিসিটিভি) সম্প্রচার করলো মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর বিতর্কিত ব্যঙ্গচিত্র।
ভিডিওতে প্রকাশিত চিত্রটি ইতিমধ্যেই সামাজিক গণমাধ্যমে বিতর্কের ঝড় তুলেছে। উইঘুরদের অধিকার নিয়ে কর্মরত আর্সালান হিদায়াত টুইটারে জানান, তাং রাজবংশের আমলের আরব রাজদূতের চীন পরিভ্রজনের দৃশ্য একটি হাতে আকা ছবি তুলে ধরে সিসিটিভি। সেই ছবিতে আরবের রাজদূত চীনা সম্রাটকে মহানবী (সা.)-এর হাতে আঁকা ছবি উপহার দিচ্ছেন সেখানে দেখানো হয়। ইচ্ছা করলেই নেটদুনিয়ায় সেই ছবি যে কেউই দেখতে পারেন। চীনের সরকারি টেলিভিশন ক্যারোল অব ঝেঙ্গুয়ান নামে ধারাবাহিকভাবে সস্প্রচারিত টিভি শোতে এই ছবি উপস্থাপন করে।
আর্সালন জানান, চীনা টেলিভিশনের শো-তে ছবিটি দেখিয়ে আরবের রাজদূতের মুখ দিয়ে বলানো হয়েছে, ইনিই আমাদের দেশের সৃষ্টিকর্তা, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)। আর এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই গোটা মুসলিম দুনিয়া এখন প্রশ্ন চিহ্নের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। কারণ ইতিমধ্যেই এক ফরাসি শিক্ষকের আঁকা ছবির জেরে ফ্রান্সকে তারা বয়কট করেছেন। অথচ, চীন সরকারিভাবেই মুসলিম দুনিয়াকে আঘাত করেছে। অবমাননা করেছে ইসলাম ধর্মের। ফলে তাদের ভূমিকা এখন সন্দেহজনক লাগছে অনেকের কাছেই।
এতো বড় ঘটনার পরও সিসিটিভি কর্তৃপক্ষ বা চীন সরকারের বিন্দুমাত্র অনুশোচনা নেই। কেউই প্রকাশ্যে দুঃখপ্রকাশও করেননি। এমনকি, সামাজিক গণমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইলেও তারা কেউ ঘটনার কথা অস্বীকারও করেননি। ছবিটি এখনও ঘুরছে গণমাধ্যমে। মহানবী (সা.)-এর ছবি প্রকাশ করে বিন্দুমাত্র অনুতপ্তও নয় চীন।
অন্যদিকে, পাকিস্তানসহ একাধিক মুসলিম দেশের মানুষ ফ্রান্সের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে। দাবি ওঠে ফ্রান্সকে বয়কট করতে হবে। ফ্রান্সবিরোধী প্রচারে উত্তাল হয়ে ওঠে ইসলামাবাদ। ফরাসি সামগ্রী বয়কটের ডাক দেয় পাকিস্তান ও তুরস্ক। বহু মুসলিম দেশও এই দাবিতে গলা মেলায়। শুরু হয় বয়কট। ফ্রান্সকে বয়কট করে বহু দেশ। একজন শিক্ষকের ব্যক্তিগত ‘অপরাধ’ গোটা মুসলিম দুনিয়াকেই ফ্রান্স বিরোধী করে তুলেছে। আর চীন সরকারিভাবে নিন্দনীয় কাজ করেও পার পেয়ে চলেছে। চীনে উইঘুর সম্প্রদায়ের মুসলিমদের ওপর প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সরকার যে অত্যাচার চালাচ্ছে তাতে মুসলিম দুনিয়া অবশ্য এখনও নিরব। উইঘুরদের ইসলাম ধর্মচর্চাকে এক রকম নিষিদ্ধ করে দিয়েছে চীন। মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। মগজ ধােলাইয়ের নামে চলছে অকথ্য অত্যাচার। নারীদের বাধ্য করা হচ্ছে গর্ভপাতে। ইসলাম ধর্মশিক্ষার কোনও সুযোগ নেই। অন্য ধর্মের মানুষদের সঙ্গে বিয়ে করতে বাধ্য করছে কমিউনিস্ট সরকার। ধংস করা হচ্ছে মসজিদ। উইঘুরদের আর্তনাদেও নিরব পাকিস্তানসহ একাধিক মুসলিম দেশ। দাতা দেশের সঙ্গে কোনও সংঘাতেই যেতে চান না তারা।
এখন দেখার ফ্রান্সকে যে ‘অপরাধে’ তারা বয়কট করেছেন, সেই একই অপরাধে চীনের বিরুদ্ধেও বয়কটের পথে হাঁটে কিনা পাকিস্তান।