ফেরির অপেক্ষায় আহত ছাত্রের মৃত্যু, কী হয়েছিল সেদিন?
একুশে জার্নাল
জুলাই ৩১ ২০১৯, ২৩:৩৭

মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ঘাটে এক যুগ্ম-সচিবের অপেক্ষায় থাকা কুমিল্লা ফেরিতে গত বৃহস্পতিবার রাতে স্কুলছাত্র তিতাস ঘোষের মৃত্যুর অভিযোগে সারা দেশে আলোচনার ঝড় উঠেছে। বুধবার রাতে মিডিয়াকে দেয়া এক সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকারে মাদারীপুর জেলার ডিসি (জেলা প্রশাসক) ওয়াহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন সেদিনকার ঘটনা।
আলোচিত ওই ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত ২৫ জুলাই দুপুর ১২টার দিকে ‘ফোন এটুআই’ প্রকল্পের পরিচালক যুগ্ম সচিব আবদুস সবুর মন্ডল আমাকে ফোন করে জিজ্ঞাসা করেন যে, কোন ঘাট দিয়ে গেলে ভালো?
ওই সময় ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঘাটের ব্যবস্থাপনা নিয়ে সমন্বয় সভা হচ্ছিল। ওই সভায় তখন প্রশাসন, আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্য, পরিবহণ সমিতির প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। ওই সভায় বিআইডব্লিউটিসির কাঁঠালবাড়ি ঘাটের ব্যবস্থাপক আবদুস সালাম মিয়াও সেখানে উপস্থিত থাকায় তার কাছেই আমার মোবাইল হ্যান্ডওভার করি। পরে তারা দুজন এ বিষয়ে কথা বলেন। এ বিষয়ে আমার আর কোন বিষয় জানা নেই।
তিনি আরও বলেন, ওই দিন ফেরিঘাটের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশেষ কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। ঘাটের অতি উৎসাহী কিছু ব্যক্তি হয়তো স্কুলছাত্রের অ্যাম্বুল্যান্সবাহী ফেরিকে অপেক্ষায় রেখেছে।
প্রসঙ্গত, তিতাস নড়াইল কালিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হওয়ার পর ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র তিতাস ঘোষকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা থেকে নেয়া হচ্ছিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৷ তাকে বহন করা অ্যাম্বুলেন্সের গতিরোধ করে তিন ঘণ্টা আটকে রাখে শিমুলিয়া ঘাটের ফেরি কর্তৃপক্ষ।
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে উঠে আসে, এটুআই প্রকল্পের পরিচালক যুগ্ম সচিব আবদুস সবুর মন্ডল ঢাকায় ফিরবেন ‘কুমিল্লা’ নামের ওই ফেরিটিতে। যার কারণে ফেরি কর্তৃপক্ষ কড়াকড়ি নির্দেশ আরোপ করে। তাই আহত শিক্ষার্থীর স্বজনরা শত অনুরোধ করলেও তা কানে নেননি ফেরি কর্তৃপক্ষ। যুগ্ম সচিব যাবেন ফেরিটিতে, তিনি না আসা পর্যন্ত কোন মতে এটি ছাড়া যাবে না। এতে তিন ঘন্টা অপেক্ষার পর সচিব আসার পর ছাড়া হলো ফেরি। ততক্ষণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয়েছে তিতাসের। অথচ বিআইডব্লিউটির নির্দেশনা রয়েছে যে, অ্যাম্বুলেন্সের অগ্রাধিকারভিত্তিতে ফেরি পারাপার করতে হবে।
সূত্র জানায়, দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হওয়ায় তিতাসকে প্রথমে খুলনার একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উন্নত চিকিৎসার জন্য বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হচ্ছিল। অ্যাম্বুলেন্সে চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য সঙ্গে নেয়া হয় চিকিৎসকসহ জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জাম। আইসিইউ সংযুক্ত অ্যাম্বুলেন্সটি ৫০ হাজার টাকা দিয়ে ভাড়া নেয়া হয়। কিন্তু ঘাট কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালিতে সেই অ্যাম্বুলেন্সেই প্রাণ দিতে হল তিতাসকে।
নিহত তিতাসের স্বজনদের অভিযোগ, ওই সময় ঘাটে উপস্থিত লোকজনের অনুরোধেও কাঁঠালবাড়ি ঘাট কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি। তারা সাহায্য চান ঘাটে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের, এমনকি প্রতিকার মেলেনি জরুরি নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করেও।
তারা বলেন, তিতাস মারা যাওয়ার পর আর ঢাকার দিকে না গিয়ে শিমুলিয়া ঘাট থেকেই ফিরে আসি আমরা।