ফাতেহা ইয়াজদাহাম: একটি বেদাতি প্রথা
একুশে জার্নাল ডটকম
নভেম্বর ১৬ ২০২১, ২১:৫০

মাওলানা শাহ মমশাদ আহমদ: ইয়াযদাহাম ফারসি শব্দ।অর্থ এগারো। ১১ রবিউসসানী শায়েখ আব্দুল কাদের জিলানী রহ;এর কথিত ওফাত দিবস উপলক্ষে কিছু মানুষকে এ দিবস পালন করতে দেখা যায়।
এ উপলক্ষে দেশের কিছু মসজিদে আলোকসজ্জা করা হয় এবংমাহফিল-মজলিসে,শীরনী বিতরনের আয়োজন করা হয়ে থাকে।
এটা একটা বেদাতি প্রথা। ইসলামী শরীয়তে জন্মদিবস ও মৃত্য দিবস পালনের কোন নিয়ম নেই। নবী-রাসূল, খোলাফায়ে রাশেদীন ও সাহাবায়ে কেরাম আমাদের জন্য আদর্শ। তাঁদের কারোরই জন্মদিবস-মৃত্যুদিবস পালন করার কথা প্রমাণিত নেই। তাদের জন্ম বা মৃত্যুদিবস পালন করতে হলে তো বছরের প্রতিদিনই পালন করতে হবে।
অথচ নবী-রাসূল ও সাহাবায়ে কেরাম তো সকল ওলি-বুযুর্গেরও আদর্শ। আর এজন্যই বুযুর্গানে দ্বীন নিজেদের জন্মদিবস পালন করেননি বা অনুসারীদেরকে জন্মদিবস ও মৃত্যুদিবস পালনের আদেশ করেননি। পরবর্তী যুগের লোকেরা তা উদ্ভাবন করেছে।
ফাতিহায়ে ইয়াজদাহম সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, যে তারিখে ‘ফাতেহায়ে ইয়াজদাহম’ পালন করা হয় অর্থাৎ এগার রবিউস সানী এদিন নাকি আব্দুল কাদের জিলানী রহ এর ওফাত দিবস অথচ তা ঐতিহাসিকভাবে শায়খ আবদুল কাদের জীলানী রাহ.-এর মৃত্যুদিবস হিসেবে প্রমাণিতও নয়।
কারণ তাঁর মৃত্যুর তারিখ নিয়ে ইতিহাসবিদদের মাঝে মতভেদ রয়েছে।
ফতোয়ায়ে রাহিমিয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে :শায়খের ওফাতের তারিখ রবিউস সানীর নয় তারিখ, দশ তারিখ, সতের তারিখ, আঠার তারিখ, তের তারিখ, সাত তারিখ ও এগার তারিখ। আবার কারো কারো মতে রবিউল আউয়ালের দশ তারিখ। এই আটটি মত উল্লেখ করার পর গ্রন্থকার দশই রবিউস সানীকে প্রাধান্য দিয়েছেন।
বিখ্যাত ইতিহাসবিদ আল্লামা হাফেয যাহাবী রাহ. (৭৪৮ হি.)ও বলেছেন-
توفي في عاشر ربيع الآخر سنة إحدى وستين، وله تسعون سنة
‘তিনি নববই বছর বয়সে ৫৬১ হিজরীর রবিউস সানীর দশ তারিখে ইন্তেকাল করেন।’ (তারীখুল ইসলাম ২৯/৬০)
এছাড়া ইতিহাস ও আসমাউর রিজালের অন্যান্য কিতাবেও আট, নয় ও দশ তারিখের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, এগার তারিখ নয়।
আর মৃত্যুর তারিখ নিয়ে মতবিরোধ না থাকলেও ‘মৃত্যুদিবস’ পালন করা শরীয়ত কর্তৃক অনুমোদিত নয়; বরং বছরের যেকোনো দিন নেককার বুযুর্গদের জীবনী আলোচনা করা যায় এবং তাঁদের জন্য ঈসালে ছওয়াব করা যায়। তা না করে নির্দিষ্ট একটি দিনে জায়েয-নাজায়েয বিভিন্ন রকমের কাজকর্মের মাধ্যমে দিবস উৎযাপন করা রসম ও বিদআত ছাড়া আর কিছু নয়।
এই ধরনের বিদআত ও রসম পালনের মাধ্যমে খোদ শায়খ আবদুল কাদের জীলানী রাহ.-এর মতো বুযুর্গ ওলিদের অবমাননাই করা হয়।
আল্লাহ আমাদের মনগড়া বেদাতি রুসুম থেকে হেফাজতে রাখুন। সুন্নাতের উপর চলার তাওফিক দিন।