প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে চাই ছাত্র-শিক্ষকদের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস : হাইআ কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা যেখানে
একুশে জার্নাল ডটকম
এপ্রিল ২৬ ২০১৯, ০০:৫৫

মুফতী সাখাওয়াত হোসাইন রাযী:: কোন মাদ্রাসায় কোন একজন পরীক্ষার্থী ছাত্রের কাছে এ মর্মে খবর পৌঁছল যে, আগামীকালের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র অমুকে এত টাকায় বিক্রি করছে। অতঃপর সে বিষয়টি নিয়ে তার সহপাঠী পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করল। কেউ বলল, আমি তো এভাবে পাশ করতে পারব না, প্রশ্নপত্রটা আমার লাগবেই। কেউবা বলল, পাস করি আর ফেল করি দুর্নীতি করে পরীক্ষা দিব না। কেউ বলল, চুরি করে পরীক্ষা দিতে চাই না, আশা করি এভাবেই পাশ করতে পারব।
শেষমেষ শয়তানের ধোঁকায় পড়ে তাদের একজন প্রশ্নপত্রটি ক্রয় করেই ফেললো। বাকিরা প্রশ্নপত্র ক্রয় করেনি বটে; কিন্তু বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হওয়ার পরও চুপচাপ থেকেছে। ভেবেছে, সহপাঠির ক্ষতি কী করে করি? আবার তাদেরই একজন অনৈতিক কাজ সহ্য করতে না পেরে কিংবা ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার ইচ্ছায় কোনভাবে প্রশ্নপত্রটি কপি করে ফেসবুকে ছেড়ে দিল। অথচ তাদের সকলেরই কর্তব্য ছিল, প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি নিজ মাদ্রাসার কর্তৃপক্ষকে আগে জানানো। অতঃপর কর্তৃপক্ষ যদি ওই প্রশ্নপত্রের বিক্রেতাকে ধরতে সক্ষম হত, তাহলে অবশ্যই ফাঁসের একটা সোর্স বের হয়ে আসতো।
এখন হয়েছে কি? গোটা দুনিয়া জেনেছে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে; কিন্তু ফাঁসকারীকে ধরা সম্ভব হয়নি। যতদিন ছাত্র-শিক্ষক ঐক্যবদ্ধভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী চক্রের বিরুদ্ধে জেগে না উঠবে, আইন করে কমিটি করে কোনোদিনই প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ করা যাবে না। সুতরাং-
১) প্রথমবার যখন প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে তখনই ব্যাপকভাবে ছাত্র-শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়ে প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী চক্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করার দরকার ছিল। প্রয়োজনে ঢাকায় সমস্ত মুহতামিমদের কে নিয়ে একটি বৈঠক করা যেত। কি করে ছাত্র শিক্ষক ঐক্যবদ্ধ হয়ে ওই চক্রান্ত রুখে দেয়া যায় সে বিষয়ে জরুরী পদক্ষেপ নেয়া যেত।
২) কওমী মাদরাসায় কেউ সনদের উদ্দেশ্যে পড়াশোনা করে না। পড়তে পড়তে পরীক্ষা দেবে, পরীক্ষা দিলে সনদ পাবে। কিন্তু যারা শুধুমাত্র পরীক্ষা দেয়ার জন্য একটি কওমী মাদ্রাসায় এসেছে, তাদের উদ্দেশ্য যে কেবল সনদ এতে কোন সন্দেহ নেই। তাদের ব্যাপারে অধিক সতর্ক থাকার দরকার ছিল। তবে, অবাক না হয়ে পারছি না, একটা কওমী মাদ্রাসা কি করে একজন ছাত্রকে কেবল সনদ লাভের সুযোগ করে দেয়। যারা সনদের জন্য এসেছে তারা তো ভালো পরীক্ষা দেওয়ার জন্য যে কোন পথই গ্রহণ করতে প্রস্তুত থাকবে।
৩) পরীক্ষা মনিটরিং সেল তৈরি করা অপরিহার্য ছিল। একজন ছাত্র বা কোন হিতাকাঙ্খী প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে অবগত হলে যাতে করে সহজেই ওই সেলকে অবগত করতে পারে। কেননা, হতে পারে কোন কোন ক্ষেত্রে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার পরিচয় দিবে।
হাইয়া কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা এখানেই। পরীক্ষা বাতিল করা কিংবা স্থগিত করা স্থায়ী কোনো সমাধান হতে পারে না। বাতিল কিংবা স্থগিতের কারণে সময় অপচয় হয় এবং পরীক্ষার্থীদেরও অনেক কষ্ট হয়। কিন্তু আমরা সেই বাতিল কিংবা স্থগিত করাকেই সমাধান মনে করেছি। প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করে আবারো পরীক্ষা শুরু করে দিয়েছি। ফলে আজকের এই বিশৃঙ্খলা অবস্থা।
মনে রাখতে হবে, প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে ছাত্র ও শিক্ষকদেরকে সঙ্গে নিয়ে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করা গেলে কোনদিনই প্রশ্নপত্র ফাঁসকারীদের চক্রান্ত মোকাবেলা করা যাবে না।