প্রবাসীরা ফিতরা আদায় করবেন যেভাবে

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

মে ১৭ ২০২০, ০৪:৪৪

হুসাইন আহমদ বাহুবলী;

প্রবাসী ভাই বোনদের পক্ষ থেকে অনেক প্রশ্ন এসেছে তাঁরা কিভাবে ফিতরা আদায় করবেন?

এখানে মূলতঃ দুটি বিষয়।

এক.

প্রবাসীরা ফিতরার পরিমাণ নির্ণয় করবেন কোন দেশের পণ্য ও মুদ্রা হিসেবে? নিজের অবস্থানের দেশের হিসেবে? নাকি নিজের মাতৃভূমির হিসেবে?

 

দুই.

তাঁরা ফিতরা দিবেন কাদেরকে? অবস্থানের দেশের অভাবীদেরকে ? নাকি মাতৃভূমির অভাবীদের কে?

প্রথম প্রশ্নের জবাব:

প্রবাসীরা হিসাব করবেন অবস্থানের দেশের পণ্য ও মুদ্রার হিসেবে।

এই বিষয়ে ফতোয়া শামী তৃতীয় খন্ডের ৩০৭ নম্বর পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

وفي الفطرة مكان المؤدي عند محمد وهو الاصح لان رؤوسهم طبع لراسه

অর্থাৎ ফিতরার ক্ষেত্রে আদায়কারীর অবস্থান গ্রহণযোগ্য, যাদের পক্ষ থেকে দিচ্ছেন তাদের অবস্থান নয়।

এই মত ইমাম মুহাম্মদ রহ. এর এবং এটিই বিশুদ্ধ মত। কারণ যাদের পক্ষ থেকে তিনি আদায় করছেন, তারা আদায়কারীর অনুগত।

এরপর এ বিষয়ে হযরত ইমাম আবু ইউসুফ রাহিমাহুল্লাহর এখতেলাফ উল্লেখের পর সারাংশে বলা হয়েছে

قلت لكن فى التاترخانية يؤدي عنهم حيث هو وعليه الفتوى وهو قول محمد ومثله قول ابي حنيفه وهو الصحيح

( ইবনে আবেদীন শামী বলেন) কিন্তু ফাতাওয়া তাতারখানিয়ায় আছে,

সকলের পক্ষ থেকে সেখানেই আদায় করবেন, যেখানে আদায়কারী অবস্থান করছেন।

এই মতটির উপর ফতোয়া। এটিই ইমাম মোহাম্মদ রহ. এর মত। ইমাম আবু হানিফার মত‌ও এরকমই এবং এটিই বিশুদ্ধতম মত।

উপরোক্ত আলোচনা মৌলিকভাবে একথায‌ই বুঝায় যে, যাকাত ও ফিতরা আদায় কারী যেখানে সম্পদ অর্জন করছেন সেখানের হিসাব‌ই ধর্তব্য। এবং সেখানে দেয়াই ছিল মূল নিয়ম। দেশে আদায় করার বিষয়টা তাদের অতিরিক্ত চিন্তা। দেশের চিন্তা বাদ দিলে তারা সে দেশের পণ্য এবং মুদ্রায় যাকাত-ফিতরা প্রদান করতেন।

বিষয়টি আরো সুস্পষ্ট হয়ে উঠে ফাতাওয়া শামীর তৃতীয় খন্ডের ৩০৬ নং পৃষ্ঠায়।

সেখানে যাকাতের আলোচনায় বলা হয়েছে,

والمعتبر في الزكاة فقراء مكان المال

اي مكان المزكي حتى لو كان هو في بلد وماله في اخر يفرق في موضوع المال- وظاهره انه لو فرق في مكانه نفسه يكره لما في المسالة نقلها الى مكان اخر

যেখানে সম্পদ অর্জন হয় সেখানের ফকিরদেরকে যাকাত দিতে হয়।

যাকাত দাতা যদি এক শহরে বসবাস করেন আর তার ব্যবসা চলে অন্য শহরে।

তাহলে ব্যবসার শহরেই তার যাকাত আদায় করতে হবে। যদি তার অবস্থানের শহরে যাকাত আদায় করেন তাহলে মাকরুহ হবে।

কারণ,

لان قول لهم والمعتبر ومكان المال اي مكانه وقت الوجوب لا وقت الاخراج لانه بالوجوب في بلدة تعلق حقه فقراءها بزكاته

কারণ

তাদের বক্তব্য হচ্ছে, সম্পদ আহরণের স্থানই ধর্তব্য। এমনকি সম্পদের উপর যাকাত যখন ফরজ হয় সেই সময় টি ধর্তব্য, যাকাত আদায়ের সময় ধর্তব্য নয়।

আর সম্পদের উপর যে শহরে যাকাত ফরজ হয় সেই শহরের দরিদ্রদের অধিকার যুক্ত হয়ে যায়।

উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা অত্যন্ত সুক্ষভাবে প্রবাসীদের সম্পদ আহরণের স্থানটা ধর্তব্য বলে ইঙ্গিত পাওয়া যায়। এছাড়াও প্রবাসীদের স্থানের দ্রব্য ও মুদ্রা মূল্য হিসেব করলে দরিদ্রদের উপকার বেশি। যা একটি মূলনীতি।

ফাতাওয়ায়ে রাহিমিয়ার ৭ নম্বর খন্ড ১৯৫পৃষ্টায় এই কথাটাই বলা হয়েছে।

উপরোক্ত আলোচনায় এদিকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, প্রবাসীরা তাদের অবস্থানের পণ্য ও মুদ্রার মূল্যে যাকাত ও ফিতরা নির্ধারণ করবেন। এবং একথা সুস্পষ্ট যে তাদের অবস্থানের দরিদ্রদেরকে যাকাত ফিতরা দিবেন। এবং এটি আসলে মূলনীতি।

কিন্তু আমরা মাতৃভূমিতে যাকাত-ফিতরা দিতে উদ্বুদ্ধ করি কেন?

এই মর্মে ফতোয়া শামীর তৃতীয় খন্ডের ৩০৪ নং পৃষ্টায় আছে

وكره (نقلها الا الى قرابة) في الظهيرية لا تقبل صدقة الرجل وقرابته محاويج حتى يبدا بهم فيسد حاجتهم (او احوج) او اصلح او اورع او انفع للمسلمين (او من دار الحرب الى دار الاسلام او الى طالب علم) و في المعراج التصدق على العالم الفقير افضل )او الى الزهاد)

যাকাতের সম্পদ স্থানান্তর করা মাকরুহ। তবে ৫ কারণে মাকরুহ হবেনা।

প্রথমতঃ আত্মীয়দেরকে দেয়ার জন্য। এমনকি জহিরিয়া গ্রন্থে আছে, আত্মীয় স্বজনের প্রয়োজন সত্ত্বেও বাহিরে দানকারীর সদকা কবুল হবে না, যতক্ষণ না তাদের প্রয়োজন পূরণ করবে।

দ্বিতীয়তঃ অধিক প্রয়োজনবোধের কারণে।গ্রহীতার জন্য যদি পরম কল্যাণকর হয় অথবা তিনি পরম খোদাভীরু হন অথবা তিনি মুসলিম সমাজের কল্যাণে বেশী অবদান রাখেন।

তৃতীয়তঃ কাফের রাষ্ট্র থেকে মুসলিম রাষ্ট্রের প্রেরণের উদ্দেশ্যে।

চতুর্থতঃ তালেবে এলেম বা ইসলামী জ্ঞান আহরণ কারীর উদ্দেশ্যে পাঠানো হলে। আল মেরাজ গ্রন্থে আছে, অভাবী আলেমকে দান করা উত্তম।

পঞ্চমতঃ ধর্মীয় কারণে সংসারে সময় দিতে পারছেন না এমন দুনিয়া ত্যাগীদের উদ্দেশ্যে পাঠানো হলে।

আলোচ্য কারণসমূহ আমলে নিয়েই আমরা প্রবাসীদেরকে মাতৃভূমিতে যাকাত-ফিতরা পাঠাতে বলি।

والله اعلم بالصواب