প্রথম রোজার সংবাদ প্রদান নেক সুরতে ধোঁকা ও গুনাহে জারিয়া
একুশে জার্নাল
এপ্রিল ২২ ২০১৯, ১৯:৪৮

মুফতী ইলিয়াস সারোয়ার
আমাদের অনেকেই জান্নাত লাভের আশা নিয়ে, অনেকটা না বুঝেই বন্ধুদেরকে একটা মেসেজ ফরওয়ার্ড করে থাকেন, যাতে লেখা থাকে- “আগামী ৭ মে দিবাগত রাতে সেহরি শুরু এবং প্রথম রোযা। নবী পাক (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রথম রোযার সংবাদ দিবে তার জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম হয়ে যাবে ৷ তুমিও সবাইকে forward করে দাও ৷” এ জাতীয় মেসেজ ফরওয়ার্ড করা মানে শয়তানের নেক সুরতে ধোঁকায় পড়া ৷ কীভাবে? চলুন দেখা যাক!
এটা তো সবারই জানা কথা যে, চাঁদ দেখা যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত রমজানের রোজা শুরুর নিশ্চয়তা পৃথিবীর কেউই দিতে পারে না ৷ কেননা রাসূল সা. বলেছেন- “তোমরা চাঁদ দেখে রোজা রাখো এবং চাঁদ দেখে রোজা খুলো অর্থ্যাৎ ঈদ করো ৷ আর হিজরী শাবান মাসের ২৯ তারিখে চাঁদ দেখা যেতেও পারে আবার নাও যেতে পারে ৷ সুতরাং রমজানের চাঁদ দেখা যাওয়ার পূর্বেই “৭ মে দিবাগত রাতে সেহরি শুরু এবং প্রথম রোযা” এই বার্তা প্রচার করা মানে যে সম্ভাব্য ভুল কথার প্রচার করা, তা বলাই বাহুল্য ৷
আর মেসেজের দ্বিতীয়াংশে যা হাদীস হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে সেটা আসলে হাদীসই নয় ৷ “নবী পাক (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রথম রোযার সংবাদ দিবে তার জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম হয়ে যাবে” এমন কোন হাদীস ছোট-বড় কোন ধরণের হাদীসের গ্রন্থাবলীতেই পাওয়া যায়নি ৷ সুতরাং যা হাদীসই নয় সেটাকে রাসূল সা. বলেছেন বলে প্রচার করা রাসূল সা. এর প্রতি মিথ্যা আরোপ করা বৈকি ৷
এই প্রক্ষিতে রাসূল সা. বলেছেন, “যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত আমার উপর মিথ্যা আরোপ করলো (মানে যে কথা আমি বলিনি কেউ যদি তা আমি বলেছি বলে প্রচার করে তবে) সে যেন নিজের ঠিকানা জাহান্নামে বানিয়ে নিলো ৷”
এই হাদীসটির মাধ্যমে কি প্রমাণিত হয় না যে, উপরোক্ত যে মেসেজ আমরা পাঠাচ্ছি জান্নাতের আশায়, সেটিই আমার ঠিকানা জাহান্নাম নিশ্চিত করছে! (নাঊযুবিল্লাহ!)
তবে এতেই শেষ নয় ৷ এখানে আরও একটা মারাত্মক বিষয় আছে ৷ আর তা হলো, মেসেজের শেষ বাক্যটি- “তুমিও সবাইকে forward করে দাও” ৷ এ কথা লিখে এই ভয়ঙ্কর পাপের কাজে অন্যকেও উৎসাহিত করা হচ্ছে! সুতরাং এরপর থেকে যারাই এটা করবে সবার পাপের ভাগ মেসেজটির প্রথম প্রেরণকারীর আমলনামায় জমা হবে ৷
এটা হলো সদকায়ে জারিয়ার বিপরীত, গুনাহে জারিয়া ৷ গুনাহে জারিয়া মানে হলো, এমন পাপ যা মাত্র একবার করলেও এই পাপ তার মাধ্যমে শুরু হয়ে চলমান থাকার কারণে তার আমলনামায় এ পাপের ভাগ জমা হতে থাকে ৷ যতদিন এই পাপ কাজ চলতে থাকে ততদিন তার আমলনামায় পাপও জমা হতে থাকে ৷
উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে এটি প্রতীয়মান হয় যে, কোনভাবেই উপরোক্ত ষড়যন্ত্রমূলক ভুল কথা ও জাল হাদীস সম্বলিত মেসেজটি প্রচার করা যাবে না এবং যা রাসূল সা. এর হাদীস নয় তা হাদীস বলে প্রচার করা নিজের এবং সকলের জন্যই মারাত্মক ক্ষতির কারণ ৷ আল্লাহ আমাদের সঠিক উপলব্ধি ও নেক আমলের তাওফিক দিন! আমীন!
লেখক পরিচিতি: মুফতী ইলিয়াস সারোয়ার, পরিচালক, মারকাযুল খিদমাহ আল-ইসলামিয়্যাহ ও শিক্ষক, জামিয়া হোসাইনিয়া দারুল উলূম মাঝিয়াইল, হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ ৷