প্রতিবাদ করতে হবে রাসূল সা. এর দেখানো পদ্ধতিতে, সন্ত্রাসবাদের মাধ্যমে নয়
একুশে জার্নাল ডটকম
অক্টোবর ৩১ ২০২০, ১৮:২৬
ফ্রান্সে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় নবীয়ে করীম হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে কার্টুন প্রদর্শনী ও দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর ইসলাম সম্পর্কে কটূক্তির তীব্র নিন্দা জানিয়ে বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান ও ঐতিহাসিক শোলাকিয়ার গ্র্যান্ড ইমাম শাইখুল হাদিস আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ বলেন, প্রতিবাদ করতে হবে রাসূল সা. এর দেখানো পদ্ধতিতে সন্ত্রাসবাদের মাধ্যমে নয়।
তিনি বলেন, প্রতিবাদের ধরণ দুটি। এক. সহিংস প্রতিবাদ। ফরাসি যাকে পেলাম নির্বিচারে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লাম। হত্যা করে ফেললাম। ইসলাম এ প্রতিবাদ সমর্থন করে না। অপরাধী ছাড়া অন্য কারও উপর আক্রমণ ইসলামে সমর্থিত নয়। এমনকি নিছক সন্দেহবশে নিশ্চিত প্রমাণ ছাড়া যেকাউকে অপরাধীও বলা যাবে না। দুই. রাসুলের (সা.) দেখানো পদ্ধতি।
মনে রাখতে হবে আপনি কার জন্য প্রতিবাদ করছেন উল্লেখ করে আল্লামা মাসঊদ বলেন, প্রতিবাদ করতে গিয়ে যেন রাসুল সা.কে অসন্তুষ্ট করে না ফেলি। রাসুলে করীম সা. এর প্রতিবাদ পন্থা ছিল, শত্রুর কাছে নরমভাবে দাওয়াত প্রদান করা। শত্রুর উত্তেজনা ও উস্কানির বিরুদ্ধে নিজের ক্রোধকে সহনশীলতায় রূপান্তরিত করা। অথবা শান্তিপূর্ণ উপায়ে মিছিল-মিটিং ও মানববন্ধন ইত্যাদিতে তাদের অপকর্মের বিরুদ্ধে নিজেদের বিরুদ্ধাবস্থান পরিষ্কার করে তুলতে পারেন।
শুক্রবার (৩০ অক্টোবর) খিলগাঁও হাজীপাড়া ঝিল মসজিদে জুমার বয়ানে তিনি এসব বলেন।
রাসূল সা. এর অবমাননা কোন বাক স্বাধীনতা নয় জানিয়ে বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান বলেন, ইসলাম মানা না মানা, রাসূল সা.কে মানা না মানার স্বাধীনতা আছে; কিন্তু রাসূল সা.কে হেয় করে অবমাননা করে তাঁর বিরুদ্ধে অপমানসূচক যা তা বলা এটা কোন বাক স্বাধীনতা নয়। এটা শয়তানি স্বাধীনতা। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সা.কে না মানা আল্লাহ দুনিয়াতে সহ্য করবেন, কিন্তু রাসূল সা. এর সাথে বেয়াদবি তিনি কখনো সহ্য করবেন না।
আল্লামা মাসঊদ বলেন, এ আঘাত কেবল ধর্মের উপরে নয়, এ আঘাত গোটা বিশ্বের মানবতা ও মনুষ্যত্বের উপর। নিতান্তই মনোবিকার না থাকলে, বুদ্ধিবিভ্রম না ঘটলে সমগ্র মানবজাতীর প্রবৃত্তিগত মনুষ্যত্ববিরােধী এহেন কথা বলা আদৌ সম্ভব নয়।
রাসূলকে অবমাননার বিষয়টি মূলত ইমানুয়েল ম্যাঁক্রোর একটি রাজনৈতিক দূরভিসন্ধি মন্তব্য করে শোলাকিয়ার গ্র্যান্ড ইমাম বলেন, পুরো বিষয়টা মূলত একটি রাজনৈতিক হীন ষড়যন্ত্র। ইমানুয়েল ম্যাঁক্রো ফরাসি ইতিহাসের একজন ব্যর্থ রাষ্ট্রনায়ক। স্কুলে থাকাকালীন স্কুলের শিক্ষিকার সাথে প্রেম প্রমাণ করে তার নৈতিক দুর্বলতা। তার আমলে ফরাসি অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে। গোটা ইউরোপে সবচেয়ে বেশি করোনায় আক্রান্ত দেশ ফ্রান্স। সর্বত্রই সে অযোগ্যতার ষোলকলা পূর্ণ করেছে। এদিকে নির্বাচন এসে কড়া নাড়ছে দরজায়। আগামী বছরে তাদের নির্বাচন। সমস্ত অযোগ্যতার উপর আচ্ছাদন টেনে দিতে ম্যাঁক্রো এই হীন চালটা চেলেছে। তা না হলে দেখুন, একজন শিক্ষককে হত্যা; যদিও আমরা তা সমর্থন করি না, কিন্তু হত্যাকারীর বিচারের সম্পূর্ণ দায়ভার তো আইনের। পুলিশ কেন তাকে গুলি করে হত্যা করবে? কোর্টে গেলে রাজনৈতিক খেলটা পরিষ্কার হয়ে যাবে বলেই এই হত্যাকান্ড। অপরদিকে তার বিরুদ্ধাচরণে যত বেশি মুসলমানরা মুখর হবে, অন্যদের সাপোর্ট সে ততটা পাবে। সবমিলিয়ে এই রাজনৈতিক দূরভিসন্ধিকে কাজে লাগিয়ে ইমানুয়েলে ম্যাঁক্রাে মুসলমানদেরকে দাবার গুটি বানিয়ে রবিউল আউয়াল মাসে রাসুলকে অবমাননার হীন চালটা চেলেছে।
আল্লামা মাসঊদ বলেন, মুসলমানদের অবস্থা এখন শাখের করাতের মত। প্রতিবাদ না করলে নিজের ঈমানী দুর্বলতা। আবার প্রতিবাদ করলে সেই ম্যাঁক্রােকেই সাহায্য করা হবে। এই প্রতিবাদ ফের তাকে প্রেসিডেন্ট বানাবে। তাই প্রতিবাদের পন্থা খূুঁজে পেতে আমাদের রাসূল সা. এর কাছে ফিরে যেতে হবে। শত্রুর উত্তেজনা ও উস্কানির বিরুদ্ধে নিজের ক্রোধকে সহনশীলতায় রূপান্তরিত করে তাকে কোমলভাবে দাওয়াত দিতে হবে। বা শান্তিপূর্ণ উপায়ে মিছিল মিটিং মানববন্ধনে নিজের নারাজি মেলে ধরতে হবে। সহিংসতার পথকে বেছে নেয়া যাবে না। যার সম্মান রক্ষায় প্রতিবাদে নেমেছি, আমার প্রতিবাদ তাঁকেই যেন অসন্তুষ্ট না করে বলেও জানান তিনি।