পাবলিক এবং প্রাইভেট লাইফ; আমাদের চরিত্র কি সমান?  

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

জুন ১০ ২০২০, ২৩:৫৩

ফুজায়েল আহমাদ নাজমুল:

পাবলিক লাইফ এবং প্রাইভেট লাইফ। এ দু’টি লাইফের সাথে কোলাকুলি করেই উচ্চ শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, অল্প শিক্ষিত, অশিক্ষিত বা মূর্খ সকলকেই মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত চলতে হয়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, পাবলিক এবং প্রাইভেটে আমাদের চরিত্র কি সমান?

যুক্তি বলে, শিক্ষাদীক্ষা না থাকার কারণে একজন অশিক্ষিত বা মূর্খ ব্যক্তি পাবলিক ও প্রাইভেট লাইফের মাঝে সমন্বয় করে চলতে পারে না। একজন শিক্ষিত ব্যক্তিই পাবলিক এবং প্রাইভেট লাইফের মাঝে সমন্বয় করে চলতে পারে।

আসলে কি তাই? 

না, যখন একজন অশিক্ষিত বা মূর্খ ব্যক্তির দিকে থাকাই তখন দেখি সে যেমন পাবলিকে, তেমন প্রাইভেটেও। ভুলত্রুটি নিয়ে জীবন চললেও সে নিজেকে নিয়ে তেমন ভাবে না। সমাজে নিজেকে হাইলাইট করতে চারিত্রিক খোলস চ্যাঞ্জ করার চিন্তাও তার মাথায় আসে না। অনেক ক্ষেত্রে বলা যায় একেবারে সহজসরল আড়ম্বরহীন জীবন।

তবে আমি যখন পাড়াপ্রতিবেশি মাষ্টার ভাই, মাওলানা ভাই, ব্যারিস্টার ভাই, ইঞ্জিনিয়ার ভাই, ডাক্তার ভাই, ব্যবসায়ী ভাই, পয়সাওয়ালা ভাই, চাকুরিজীবী ভাই, বুদ্ধিজীবী ভাই, রাজনীতিবিদ ভাই, সাংবাদিক ভাই, চেয়ারম্যান ভাই, মেম্বার ভাই, সোস্যাল মিডিয়ার সেলিব্রিটি ভাইয়ের দিকে থাকাই এবং একটু হিসাব মেলানোর জন্য তার পাবলিক এবং প্রাইভেট লাইফের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলিকে একত্রিত করি তখন রীতিমতো চমকে উঠি, অবাক হই।

কারণ কি জানেন?

শিক্ষিতরা সবাই সমাজের কোন না কোন একটি জায়গায় নেতৃত্ব দেন। মানুষের কাছে খুবই সজ্জন হিসেবে পরিচিত। মানবিকতা, অমায়িকতা, উদারতা, নম্রতা, ভদ্রতা, শিষ্টতা, সভ্যতা ও ন্যায়নীতিতে পাবলিক প্লেসে তারাই সমাজের সেরা। বাহ্যিক নানা গুণের বিচারে পাবলিক তাদেরকে আইডল মনে করে। পাবলিক লাইফ তাদের স্বচ্ছ ঝকঝকে সাদা ও পরিচ্ছন্ন হলেও অধিকাংশের প্রাইভেট লাইফ খুবই ভয়ংকর।

আমার কথায় কি অবাক হয়েছেন?

চারপাশে খুঁজ নিয়ে দেখুন! আমি যাদের প্রতি ইঙ্গিত করছি তারা প্রাইভেট লাইফে একজন মা-বাবার অবাধ্য সন্তান, নিষ্ঠুর, মিথ্যুক, হিংসুক, নির্লজ্জ, অসচ্চরিত্র, প্রতারক, বদমেজাজী, নোংরা, অসচ্ছ, সংকীর্ণমনা, নীতি বিবর্জিত, দখলবাজ, সম্পদ আআত্মসাৎকারী, মানুষের হক বা অধিকার নষ্টকারী, আমানতের খেয়ানতকারী, অনাচারী, জালিম। তাদের দ্বারা কোন না কোনভাবে নিজেদের মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী, চাচা-ফুফু, পাড়াপ্রতিবেশি, আত্মীয়স্বজন নির্যাতিত। এ নির্যাতনের সংবাদ কিন্তু পাবলিক পর্যন্ত পৌছে না। তবে যখন হঠাৎ করে একজন শিক্ষিত ও বিখ্যাত ব্যক্তির প্রাইভেট লাইফের কুকীর্তি পাবলিক প্লেসে প্রকাশ পেয়ে যায় তখন অবাক হতে হয় আমাদের। তার প্রতি যে অগাধ শ্রদ্ধা, বিশ্বাস আর ভালোবাসা ছিলো তা ঘৃণায় পরিণত হয়ে যায়।

যাদের কথা ও কাজের মধ্যে মিল নেই, পাবলিক এবং প্রাইভেট লাইফের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এক নয়, তারা ইহকালের কোন একসময় কোন না কোনভাবে পাবলিকের সামনে অপমানিত হতে হবে এবং পরকালে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা কুরআনে বলেন, হে মুমিনগণ! তোমরা যা করো না, তা কেন বল? তোমরা যা করো না, তা বলা আল্লাহর কাছে খুবই অসন্তোষজনক। [ সুরা সফঃ ২-৩ ]

আমাদের মহানবী সা. এর পাবলিক লাইফ ছিলো একেবারেই স্বচ্ছ ঝকঝকে তকতকে অনাবিল। আর প্রাইভেট লাইফ ছিলো আরো অধিকতর স্বচ্ছ ও নির্মল। তাঁর স্ত্রীরা সকলেই তাঁর স্বচ্ছতার সাক্ষ্য দিয়ে গেছেন। তাঁর পরিবারের গোলাম ও সেবকরা সকলেই তাঁর অনাবিল সুন্দর চরিত্র, মধুর ব্যবহার এবং দয়া ও সহানুভূতির দ্বারা পরম মুগ্ধ ছিলেন।

আসুন! শিক্ষার সাথে দীক্ষা গ্রহণ করি। শিক্ষাকে মূল্য দেই। প্রাইভেট লাইফের ভুলত্রুটিগুলোকে সংশোধন করি। ঘরে বাহিরে যেখানেই থাকি না কেন নিজেকে সমাজের একজন শ্রেষ্ঠ ও আদর্শ মানুষ হিসেবে উপস্থাপন করি। আল্লাহ আমাদের সেই তাওফিক দিন।