পাখী প্রেম | নাহিদ নজরুল

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

সেপ্টেম্বর ২৯ ২০১৮, ০৯:৩৬

প্রায় এক যুগ আগের কথা।
তখন তাসফিন একেবারেই ছোট। বয়স আর কত
হবে,আনুমানিক ৮ / ৯ বছর! তখনকার
মতো এখনো ও তাসফিন খুব দুষ্ট প্রকৃতির
ছেলে । চেহারা ছুরত ভালোই,
তাসফিনের চঞ্চলতায় ওদের বাড়ির
সবাই অতিষ্ঠ হলেও
সবার আদরের পাত্র ও নয়নের মনি
ছিলো তাসফিন। কেনই বা থাকবো না! তাসফিন
ব্যতীত দ্বিতীয় আর কোন সন্তান
মণ্ডলবাড়িতে ছিলো না বললেই চলে।
যা-ও একজন ছিলো এক্কেবারে
পিচ্ছি মেয়ে{তাসফিনের চাচাতো
বোন} কয়েক মাস হবে তার বয়স ।
তাসফিনের আব্বু কাকারা মোট তিন
ভাই ও এক বোন।
তাসফিনের আব্বুই সবার বড়, আর সবার ছোট
হলো তাসফিনের ফুফু।
ফুফুর বিয়ে হয়েছে ওদের
গ্রামের অদূরে পার্শবর্তি এক গ্রামে।
তাসফিনের ছোট কাকা তখনো বিয়ে
করেননি সবেমাত্র লেখাপড়া শেষের দিকে।
মেঝো কাকা বিয়ে করলেও বাড়িতে
বেশি থাকতে পারেন না।
তিনি নিজ জেলায়ই এক বেসরকারি চাকরি করেন।
চাকরি বাকরি নিয়ে সে একটু বেশিই ব্যস্ততায় থাকেন।
সে কারণে বাড়িতে থাকার সুযোগ তেমন পায় না।
আর তাঁর বাড়িতে না থাকাটাই তাসফিনের জন্য
শ্রেয়। তাসফিন মনে মনে খুব খুশি
কারণ তাকেই {অর্থাৎ মেঝো কাকা}একটু
বেশি ভয় পায়।
মেঝো কাকার বড় মেয়ে সুমাইয়া
ছোট্ট থেকেই শান্ত-শিষ্ট প্রকৃতির।
সার্বিক দিক বিবেচনা করলে এক্বেবারে ভালোর
সব সিফতই ওর মধ্যে বিদ্যমান।
ওর সময় কাটতো ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে।
দুয়েক শব্দ ওয়া ওয়া ছাড়া সুমাইয়ার মুখে
কোন বুলিই ছিলো না।
এখন অবশ্য প্রাপ্ত বয়সে উপনীত
পড়ালেখায় খুব পটু,
ক্লাস ফাইভ শেষ হাই স্কুলে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়।
তো এই মহা সুবর্ণ সুযোগে একাই তাসফিন পুরা
বাড়িটাকে অস্থির ও চাঞ্চল্যময় করে রাখতো।
তাসফিন সবার চোখের শীতলতাও ছিলো বটে ।
দাদা-দাদী,কাকা-কাকী,আব্বু
আম্মু তো আছেনই।
সবাই যেন ওকে আদরে আদরে একটু বেশিই
আহ্লাদি বানিয়ে ফেলেছে।

ঠিক বর্ষার দিনে অঝোর ধারায় বর্ষণ
হয়,এই সময়ে গ্রীষ্মের শুষ্ক
প্রকৃতিতে প্রাণের স্পন্দন জাগিয়ে
তোলে ।খাল-বিল-নদী নালা,পুকুর-ডোবা
জলে থৈ থৈ করে পানি।
সবুজ তরুলতা চারদিকে ছেয়ে যায়।
নারকেল গাছে গাছে বাসা নির্মাণ
করে সুদক্ষ করিগর বাবুই পাখি।
বর্ষাকালের সুগন্ধি এবং এবং হাল্কা
রংযুক্ত ফুল ফোটে।বেলি,কামিনী
,জুঁই,দোলনচাঁপা, হাস্নাহেনা,কেয়া,কদম,
এ যেন বর্ষাকালের ভেজা ভেজা
বৃষ্টিধোয়া প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য্য।
এমন রসঘন প্রকৃতির সবচেয়ে মারাত্মকভাবে
তাসফিনের মন-মানস কে
আকৃষ্ট করতো। ওদের বাড়ির পাশের
নারকেল গাছদ্বয়ের
চিরল চিরল শাখে বাবুই পাখির বাসা ।
প্রতিদিনই প্রায় গোধূলি বেলায়
নারকেল গাছ তলায় ক্লান্ত
দিনের শান্ত সন্ধ্যার ছায়ায়
দাঁড়িয়ে বাবুই পাখির সু’মধুর কিচির
মিচির শব্দে পুলকিত,শিহরিত হতো।
আর মনে মনে ভাবতো,আহ যদি পাখিগুলো
কে ধরে এনে পরম যত্নে
হৃদয়ের সব ভালাবাসা উজার করে দিয়ে নিজের
কাছে সর্বদা রাখতে পারতাম।
কিন্তু তা কি আর পারা যায়!
স্বাধীন দেশের মুক্ত বাবুই পাখি বলে কথা!
অন্যসব পাখি পোষ মানলেও তাসফিনের ভালো
লাগা ভালাবাসার বাবুই পাখি জাতীয় বিহঙ্গকুল পোষ
মানতে নারাজ। তবুও যে তাসফিনের মন মানে না,
একধরণের অকৃত্রিম প্রেমে পড়ে গেছে
তাসফিন এই ক্ষুদে ক্ষুদে বাবুই পাখির প্রতি।
একদিন শখের বশে দাদুর কাছে
বায়না ধরে বসলো,
যে করেই হোক আমাকে বাসা সহ বাবুই
পাখি গাছ থেকে পেড়ে দিতেই হবে।
একমাত্র নাতি তাসফিনের আবদার বলে
কথা ! তবুও ওর দাদু মুরুব্বি মানুষ,তিনি তো
বিচক্ষণ মানুষ সহজেই বুঝেন ফেললেন যে,
পাখির এই বাসা বেচারা তাসফিন রাখতে পারলেও
পাখি রাখতে পারবে না কয়েক
মুহূর্তের জন্য ও।ক্ষণিকের তরে
শান্তনা দিয়ে মোটামুটি কোনরকম
ধামাচাপা দিতে সক্ষম হলেন বয়োবৃদ্ধ
দাদু। পরদিন মেঘ না চাইতেই বৃষ্টির মতো
অকল্পনীয়ভাবে তুষােরর আশা পূরণ হলো।
পূরণ হলো তাসফিনের বহু প্রতীক্ষিত আশা-
আকাঙ্ক্ষা। প্রচণ্ড ঝড়ো হাওয়ার তাণ্ডবে একটা
সুন্দর আকৃতির বাবুই পাখির
বাসা ছিঁড়ে পড়লো মটিতে।
সম্ভবত একটা দু’টা কচি ছোট বাচ্চাও ছিলো।
তুষার তো খুশিতে বাগ বাগ,
কে দেখে ওর আনন্দ উল্লাস।
তাসফিন যেন আনন্দের আতিশয্যে টালমাটাল।
এইতো শুরু হলো প্রতিনিয়ত নিত্য নতুন
আনন্দ পাখির ছানা নিয়ে ।
যাক এভাবে কয়েকদিন গত হবার পর
মা-হীন ছোট্ট বাচ্ছাদ্বয় মারা গেলো।
অবশেষে বাসাটাও টিকিয়ে রাখতে পারলো না তাসফিন।বাসা নিয়ে দৌড়াদৌড়ির
সীমাহীন অত্যাচার
অনাচারে সে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেলো।
কিছুদিন পর প্রয়োজনের তাগিদে
ঠায় দাঁড়িয়ে
থাকা নারকেল গাছদ্বয় ও কেটে
ফেলা হলো ।
তারপর আবার পূর্বস্থানের অদূরেই
আরো কয়েকটা নারকেল গাছ রোপন করা হলো
সময়ের সাথে এগুলো এখন ভরা যৌবনে উপনীত।
ফল দিচ্ছে সাথে সাথে ঐ যে বাবুই
পাখিপ্রেমী তাসফিনের রুম ঘেঁষে যে
নারকেল গাছ সেটায় ফের বাবুই
পাখি বাসা নির্মিত হলো ।
ভালো লাগা ও ভালোবাসায়
আবেগাপ্লুত হয়ে সময় পেলেই
জানালার কর্ণিশ দিয় উৎসুক মনে-আনমনে তাকিয়ে
থাকে ।আর অতীতের দরজায় কড়া নাড়ে।
স্মৃতিরা এসে ভিড় করে একে একে।
আহ!কী সু’নিপুন কারুকাজে নির্মিত
বাসাগুলো!
কে দিলো বাবুই পাখিকে এই সুচারু
নির্মাণ ক্ষমতা ।
রোজ এই কথাগুলো ভাবতে থাকে ।
আর মহান প্রভুর অপার মহীমার
শুকরগুজারী করতে থাকে ।আর
দৈনন্দিন প্রভাত সমীরণের কোমল স্পর্শে
সাথে,পাখিগুলোর মিষ্টি
কলতানে তাসফিনের মন ছুঁয়ে যায়।
দোলা দিয়ে যায় হৃদয়পটে।