পর্যটন স্পটে টোল আদায় বন্ধ হোক
একুশে জার্নাল ডটকম
মে ০৬ ২০২২, ০০:৩৩
ফায়যুর রাহমান: বিভিন্ন পর্যটন স্পটে পর্যটক হেনস্তার ঘটনা নতুন নয়, আজ জাফলংয়ে নারী পর্যটকদের উপর হামলার ঘটনা একটা উদাহরণমাত্র। পর্যটন স্পটগুলোতে অমানুষের বাচ্চাগুলো সবসময় ওঁত পেতে থাকে, সুযোগ পেলেই হামলে পড়ে। সুযোগ নেয় বিভিন্ন কিসিমের। ফলে বাচ্চাকাচ্চা ও পরিবার নিয়ে আনন্দ করতে গিয়ে লাঞ্ছনা, তিক্ততা, অপমান ও বিষাদ নিয়ে ফেরেন পর্যটকরা।
পর্যটকদের হেনস্তা করার যতগুলো ছুতো আছে, এর মধ্যে প্রধান একটা ছুতোর নাম টোল ও টিকেটিং। পর্যটন স্পটের গেটেই যেন অদৃশ্যভাবে লেখা থাকে, “ফেলো কড়ি, মাখো তেল”। ফলে একজন পর্যটক ঘুরতে এসে প্রথমেই দুই দফা পয়সা ঢালতে হয়। গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য এক দফা, টিকেটিংয়ের জন্য আরেক দফা। সেই অংক যতই ক্ষুদ্র হোক, পর্যটনকেন্দ্রে ঢোকার আগেই এটা তাকে মানসিকভাবে ত্যাক্ত-বিরক্ত করে তোলে। এই টোল ও টিকেটিং নিয়েই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিতন্ডা তৈরি হয়। পরে রূপ নেয় মারদাঙ্গায়।
এর বাইরে পর্যটক বিড়ম্বনা আরো আছে। সেটা হচ্ছে এক শ্রেণির ইতর ও সন্ত্রাসী ছেলেপুলে। এরা চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে ইভটিজিং, এককথায় যত কিসিমের ইতরামি করা যায়, করে। ঘুরতে এসে মানুষ যেন অসহায় হয়ে পড়ে। ট্যুরিস্ট পুলিশ কী করে কে জানে।
প্রশ্ন হচ্ছে, পর্যটন স্পট থেকে ১০ টাকা ২০ টাকা আদায় করে সরকার কত টাকা পায়? আর এই টাকা তোলার ছুতোয় যারা পর্যটকদের সঙ্গে ইতরামি করে, এরা কারা? এরা কাদের লোক? এদের পেছনে কারা? এই ১০ টাকা ২০ টাকা থেকে কি সরকারের কয়েক হাজার কোটি টাকা আয় হয়? যদি না হয়, তাহলে গুটিকয়েক মানুষকে আঙুল ফুলে কলাগাছ হবার সুযোগ দিয়ে সরকারের কী লাভ? স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ঘুরতে আসা নাগরিকদের কাছ থেকে ১০ টাকা আদায় করা কি আসলেই প্রশাসনের জন্য খুবই জরুরি? এই ১০ টাকার জন্য নাগরিকদের অসম্মান ও একদল লাঠিয়াল পালন কি খুবই মর্যাদার?
আচ্ছা, টোল ও টিকেটিংয়ের আল্টিমেট গোল কী? বলবেন রাজস্ব আদায়। রাজস্ব আদায় কার স্বার্থে? জনগণের, তাই না? জনগণের বা জনস্বার্থের জন্যই যদি এটা আদায় হয়, তাহলে একটা পর্যটন স্পটের ব্যবসাবাণিজ্য ও সেবাকে ঘিরে যে হাজারো পরিবারের রোজিরুটির সংস্থান হয়, এই হাজারো পরিবার কি জনগণের বাইরে? যেখানে সরকারের এতগুলো জনগণ উপকারভোগী হচ্ছে, সেখানে আলাদা করে দুইএকটা (ইজারাদার) পরিবারকে কোটিপতি বানানোর লক্ষ্যে ১০ টাকার জন্য হেনস্থার সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়ার মর্ম কী?
আমরা মনে করি, মানুষের আনন্দ উচ্ছ্বাসকে মাটি করে দেওয়ার ব্যবস্থা এখনই বন্ধ করে দেওয়া জরুরি। নইলে দিনে দিনে মানুষ পর্যটনবিমুখ হয়ে পড়বে। এমনিতেই আমাদের কত সমস্যা ও দুর্দশা, এর মধ্যে পর্যটনশিল্প ধ্বংসের পথ তৈরি করে দেওয়া বোকামি ছাড়া কিছু হবে না। সকলের শুভবুদ্ধির উদয় হোক। নারী, শিশু ও সকল নাগরিকের জন্য নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দময় হোক বঙ্গজননীর সকল পর্যটন স্পট।
•সাংবাদিক ও গল্পকার