নানাজী

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

মার্চ ১০ ২০১৯, ১০:৫২

মাহমুদ হাসান: শ্রদ্ধেয় নানাজী,
জানি, এ চিঠি তোমার কাছে পৌঁছবে না, তবুও লিখছি
তুমি আমায় খুব নাছিহা ও শাসন করতে। তোমার শাসন এক সময় ভালো লাগতোনা; খুব রাগ হতো। এখন সেই শাসনগুলোই আমার জীবনের পাথেয়।
জীবনের পরতে পরতে তোমাকে খুব মনে পড়ে নানাজী।

শয়তানের তালে তালে নাচতে খুব মজা পেতাম। জানতে পেরে তুমি কোমল স্বরে আমাকে বোঝাতে ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞা। আমি তখন নিজের নফসের বিভ্রান্তিতে পরে মানতে চাইতাম না।

নানাজী,
এখন সবসময়ই পছন্দের জিনিস কিনে ব্যবহার করি। অপছন্দের জিনিস পরিহার করি। এখন আমি খুব স্বাধীন, চাইলেই নিজের ইচ্ছেমতো সব কিছু করতে পারি। তবুও আগের মতো নয়, কারন তুমি নেই। এতো স্বাধীন থেকেও নিজেকে মনে হয় পরাধীন। সবকিছু থেকেও অনুভব করি আমি অসহায়। কারন তুমি নেই। দু’চারটা খুচরা টাকা গরীবানা হিসেবে যা দিতে, তাতেই খুব মজা পেতাম, খুশি হতাম। আর এখন? মাসে হাজার হাজার টাকা উপার্জন করেও সেই সুখ পাই না।

নানাজী ,
আমি তোমার পছন্দের চাকুরী মাদরাসায়-“শিক্ষকতা” করি। আমার বার বার খুব ইচ্ছে হয়, আমার উপার্জন থেকে তোমার একটু সেবা যত্ন করি, কিন্ত তুমি যে নেই! চলতে ফিরতে তোমার বয়সীদের মাঝে তোমাকে খুঁজি। তোমার স্মৃতিসাগরে হাতড়ে বেড়াই। মাঝেমধ্যে তোমার পক্ষ থেকে অসহায়দেরকে কিছু দিয়ে মনকে শান্তনা দেই। তোমার বয়সী মানু্ষদের ‘নানা‘ ডেকে তোমায় অনুভব করি।

নানাজী,
গত বছর, ২০১৮ সালটি আমার কেটেছে অপহরণের স্বীকার হয়ে দীর্ঘ তিন মাস গুম হয়ে অত:পর নতুন জীবন পেয়ে তাবলীগের ময়দানে। তবে অনেকবার তোমায় স্বপনে দেখেছি। গভীর রাতে স্বপ্নে কখনো কখনো মাসজিদে নববীর পাশে হাদীসের ক্লাশ দিতে দেখেছি, কখনো হাস্যজ্বল চেহারায় উপদেশ দিতে দেখেছি।

এইত কিছুদিন আগে আম্মু স্বপ্নে তোমাকে দেখলো, তুমি নাকি বলেছ- আমরা ভাইবোনের বিবাহে তুমি অনেক খুশী! বাকি ছোট দুই ভাইকে কীভাবে বিবাহ দিতে হবে তাও বলে দিয়েছো। তুমি ওপারে থেকেও আমাদের খবর নিচ্ছো কিন্তু আমরা এপারে থেকে তোমার খবর নিতে পারছি না।

ওপারে তোমার সুখের জন্য, তোমার মাগফিরাতের জন্য , আমার মহিলা মাদরাসার পক্ষথেকে এই মাসেই মাহফিলের আয়োজন করছি। আর সবসময় দুআ করি
رَّبِّ ارْحَــمْــهُـمَا كَـمَا رَبَّـيَـانِـي صَـغِـيـرًا
“রাব্বির হাম-হুমা কামা রাব্বা ইয়ানি ছাগিরা”।

২০১৬ মার্চের ৮ তারিখে তুমি আমাদেরকে ছেড়ে চলে গেলে না ফেরার দেশে। তোমাকে খুব মিস করি। তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করে। যখন তোমাকে দেখার জন্য উতলা হই, স্বযত্নে রাখা তোমার ছবিটা দেখে হাত বুলিয়ে তোমার পরশ পাবার ব্যার্থ চেষ্টা করি। আর স্বপ্নে তোমাকে দেখার তৃষ্ণা নিয়ে ঘুমাই। যদি দেখা হয়ে যায় তোমার সাথে!

ভালো থেকো নানাজী!
অনেক লেখার ছিলো, পারিনি সব লিখতে৷ জানি এই চিঠির উত্তর পাবো না। চিঠি পাঠাবার ঠিকানাই নেই, উত্তর আসবে কোথেকে? তারপরও ভাবি, স্বপ্নে যদি আমার চিঠির উত্তর দিতে আসো। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে ভেজা চোখে, মুচকি হেসে যদি বলো- ‘নাতি! আমি খুব সুখে আছি আলহামদুলিল্লাহ!’

সেই অপেক্ষায় আছি নানাজী!
আবারও স্বপ্নে দেখা দিও।

ইতি-
তোমার হতভাগা নাতি
মাহমুদ হাসান।

নানাজী-
শাইখুল কুররা মাওলানা আলী আকবর সিদ্দীক রাহ.
প্রতিষ্ঠাতা : আঞ্জুমানে তালীমুল কুরআন বাংলাদেশ