নাজমুদ্দিন এরবাকান: নতুন বিশ্বব্যবস্থার প্রস্তাবক এবং মহান মুজাহিদ
একুশে জার্নাল ডটকম
জুলাই ১৮ ২০২০, ১৯:১৯

আবিদ ইহসান
প্রফেসর. ড. নাজমুদ্দিন এরবাকান। শুধুমাত্র এই নামের মধ্যেই যেন পুরো একটি আন্দোলনের অবয়ব ফুটে উঠে। কৃষ্ণ সাগরের পাড়ে শৈশব কাটানো ককেশাসের ইমাম শেখ শামিলের বংশধর প্রফেসর এরবাকানের গড়ে তোলা বিপ্লবী আন্দোলন “মিল্লি গুরুশের” তুফানে উত্তাল হয়ে উঠেছিল কৃষ্ণ সাগর ও ভূমধ্যসাগরের পাশে গড়ে উঠা দীর্ঘ ৬০০ বছর সমগ্র দুনিয়াকে শাসনকারী উসমানী সাম্রাজ্যের মীরাস তুরস্ক।
১৯৬৯ সালে এরতুরুলের এককালের রাজধানী কোনিয়া থেকে যাত্রাকারী তুরস্কের ইসলামী আন্দোলন মিল্লি গুরুশ পাশ্চাত্যের ভিত্তিকেই নাড়িয়ে দেয়। পুরো পাশ্চাত্যকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে করে যেতে থাকে একের পর এক অবিশ্বাস্য সব কাজ। সাইপ্রাস বিজয় থেকে গাজাতে সৈন্য প্রেরণের ঘোষণা, মরো, ফিলিস্তিনের সংগ্রামের প্রত্যক্ষ সহায়তা থেকে শুরু করে ইউরোপের বুকে একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ বসনিয়াকে স্বাধীনতা প্রদান, কী করেনি মিল্লি গুরুশ। আর এই আন্দোলনের সর্বাগ্রে যার নাম আসে তিনিই হচ্ছেন প্রফেসর নাজমুদ্দিন এরবাকান।
৭০, ৮০ এবং ৯০ এর দশকে তুরস্কে যে ইসলামী মূল্যবোধের প্রবল ঝড় শুরু হয়েছিল তার পুরো অবদান ছিল প্রফেসর এরবাকানের। একক এই ব্যক্তির কারণে তুরস্ক দেখেছিল তার প্রজাতন্ত্রিক ইতিহাসের অবিশ্বাস্য এক শিল্প বিপ্লব, যার উপর ভিত্তি করে বর্তমান আধুনিক তুরস্ককে আমরা প্রত্যক্ষ করছি। বর্তমান তুরস্কের যেসকল ফ্যাক্টরী নিয়ে মুসলিম দুনিয়া গর্ব করে তার সবকটিই তৈরী করেছিলেন তুরস্কের ইসলামী আন্দোলনের এই প্রতিষ্ঠাতা।
নতুন বিশ্বব্যবস্থার প্রস্তাবক এবং মহান এই মুজাহিদের ভয়ে সর্বদা তটস্থ ছিল সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা ও ইসরাঈল। তাইতো একের পর এক নিষেধাজ্ঞা জারী করে, কারাগারে প্রেরণ করে দমিয়ে দিতে চেয়েছিল মহান এই মুজাহিদকে। যার দরুণ ৪০ বছরের রাজনৈতিক জীবনের ১৫ বছরই ছিলেন জেলের অন্ধ কুঠুরীতে অথবা ছিলেন গৃহবন্দী।
কিন্তু যে ২৫ বছর রাজনীতিতে ছিলেন, সে বছরগুলোতে তার চিন্তা ও আদর্শ তুরস্কের সাথে সাথে পৃথিবীর ইতিহাসের গতিপথও পালটে দিয়েছে। মুসলিমদের দিয়েছে তাদের হারিয়ে যাওয়া জিহাদী জযবা।
তাইতো ৭০ এর দশকে সি আই এ এর এক সময়ের মধ্যপ্রাচ্যের চীফ তুরস্কের গোয়েন্দা প্রধানকে বলেছিল- “তোমাদের দেশে শুধুমাত্র একজন লোক রয়েছেন যার কারণে আমাদের সকল পরিকল্পনা নস্যাত হয়ে যাচ্ছে। তা নাহলে তোমাদের রাজনীতিবীদদেরকে বাতাসের মধ্যে নাচানো কোন ব্যাপারই ছিল না। সেই ব্যক্তি হচ্ছেন প্রফেসর এরবাকান”।
প্রফেসর এরবাকানের চিন্তা-আদর্শ এবং মনোমুগ্ধকর কাজে বিমোহিত হয়ে শেষ পর্যন্ত তুরস্কের কট্টর সেক্যুলার নেতা ও আতাতুর্কের পর দীর্ঘ ১২ বছর ক্ষমতায় আরোহণকারী ইসমেত ইনোনুও আফসোস করে বলতে বাধ্য হয়েছিল- “তুরস্কের প্রজাতান্ত্রিক ইতিহাসে সত্যিকার অর্থে একজন মানুষই গড়ে উঠেছিল, অথচ সেই ব্যক্তিই কিনা তুরস্কের ইসলামী আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা”।
সেই মহান মুজাহিদের জীবনের অদ্যপান্ত এবং তার প্রতিষ্ঠিত মিল্লি গুরুশ তুরস্কের সাথে সাথে বিশ্বরাজনীতিতে কী কী ভূমিকা পালন করেছে সে বিষয়ে সবিস্তারে বাংলার পাঠক সমাজের নিকট তুলে ধরতে, মক্তব প্রকাশন এর সহায়তায় আমাদের ক্ষুদ্র প্রচেষ্ঠা- “নাজমুদ্দিন এরবাকানঃ নতুন বিশ্বব্যবস্থার প্রস্তাবক এবং মহান মুজাহিদ”।
অনুলিখন: রিফাত আল মাজিদ